বাথরুমে প্রবেশ করার ও বাহির হওয়ার দোয়া

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাথরুমে প্রবেশ করার আগে ও পরে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন। তিনি নিজেও বাথরুমে প্রবেশ করার আগে এবং পরে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেন। কিন্তু কেন তিনি আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন এবং অন্যদের সাহায্য চাইতে বলেছিলেন? এর কারন হল একজন ব্যক্তির সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত প্রস্রাব-পায়খানা ত্যগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্রাব ও মলত্যাগের এই প্রক্রিয়াটি মহান আল্লাহ তায়ালার এক অনন্য নেয়ামত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাথরুমে প্রবেশ করার দোয়া পড়তে এবং বাথরুমে প্রবেশ করার আগে ও পরে কী করতে হবে তা বর্ণনা করেছেন। টয়লেট কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে তিনি ইসলামের শিষ্টাচার তুলে ধরেছেন।

 

বাথরুমে প্রবেশ করার দোয়া

টয়লেট হলো ময়লা বা নোংরা আবর্জনা অপসারণের স্থান। আর এই নোংরা টয়লেট হল দুষ্ট জিনদের আবাসস্থল। যখন একজন ব্যক্তি প্রস্রাব-পায়খানা করার জন্য টয়লেটে প্রবেশ করে এবং দোয়া না পড়ে, তখন এই দুষ্ট জিনগুলো মানুষের গোপন অঙ্গ নিয়ে খেলা করে। আর যারা নিজেদের প্রাকৃতিক চাহিদা পূরণের জন্য টয়লেটে ঢুকার আগে আল্লাহর সাহায্যের জন্য দোয়া পাঠ করে, তখন দুষ্ট জিনরা তাদের দেখে না।

 বাথরুমে প্রবেশ করার দোয়া

 

এজন্যই আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতদেরকে টয়লেটে ঢুকার আগে সর্বদা দুষ্ট জিনের আক্রমণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি নিজেও এটি অনুসরণ করতেন। তাই বাথরুমে ঢুকার আগে নিন্মে প্রদত্ত বাথরুমে প্রবেশ করার দোয়া টি পাঠ করুন-

আরবীঃ

بِسْمِ اللهِ اَللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ

উচ্চারণঃ ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।’

অর্থঃ ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে পুরুষ শয়তান এবং স্ত্রী শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)

 

টয়লেট থেকে বের হওয়ার দোয়া

সঠিকভাবে এবং নিরাপদে পায়খানা ও প্রস্রাব শেষ করার পর মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এই কাজ করতেন এবং তাঁর উম্মতদেরকেও তা করতে বলেছেন। টয়লেট থেকে বের হয়ে নিন্মের দোয়াটি পাঠ করুন-

আরবীঃ

– غُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ اَذْهَبَ عَنِّيْ الْاَذَى وَعَافَانِيْ.

উচ্চারণঃ ‘গোফরানাকা আল-হামদুলিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি।’

অর্থঃ ‘(হে আল্লাহ!) আপনার কাছে ক্ষমা চাই। সকল প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য; যিনি ক্ষতি ও কষ্টকর জিনিস থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছেন।’

বাথরুমে প্রবেশ করার আদব সমূহ

টয়লেট ব্যবহারের আগে এবং পরে এই দুটি দোয়া পড়া ছাড়াও টয়লেটে যাওয়ার আগে এবং পরে কিছু আদব রক্ষা করার কথা হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে মুমিন মুসলমানগন দুষ্ট জ্বিনদের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারে। তাহল-

– টয়লেটে ঢুকার আগে ও পরে দোয়া আদায় করা এবং দুষ্ট জিনের আক্রমণ থেকে আশ্রয় চাওয়া।
– টয়লেটে ঢুকার আগে দোয়া পড়ে বাম পা দিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা। ‘(আবু দাউদ)
– টয়লেটে যেতে মাথা ঢেকে রাখা। (বায়হাকি)
– খালি পায়ে টয়লেটে না যাওয়া। জুতা এবং স্যান্ডেল নিয়ে টয়লেটে যাওয়া। (কানজুল উম্মাল)
– কিবলার দিকে মুখ বা কিবলাকে পিছন করে না বসা। ‘(বুখারী)
– টয়লেটে গিয়ে বসার ঠিক আগে কাপড় খুলা। দাঁড়িয়ে প্রস্রাব না করা। (নাসাই, তিরমিযী)
– প্রস্রাব এবং অপরিষ্কার পানি থেকে নিজেকে সাবধানে রাখা। ‘(বুখারী)
– প্রস্রাব পাায়খানা করার পর ঢিলা কুলুখ বা টয়লেট পেপার ব্যবহার করা। (বায়হাকি)
– বাম হাত দিয়ে কুলুখ এবং পানি ব্যবহার করা। (বুখারী)
– প্রস্রাব করার জন্য একটি নরম জায়গা খুঁজুন যেখান থেকে প্রস্রাব শরীরে বা কাপড়ে না আসে। (আবু দাউদ)
– ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করুন। (ইবনে খুযাইমা)
– ডান পা দিয়ে টয়লেট থেকে বের হওয়া। (আবু দাউদ)
– প্রবল বাতাসের দিকে মুখ করে প্রস্রাব না করা।
– অজু ও গোসলের জায়গায় বা স্থির পানিতে প্রস্রাব করবেন না।
– প্রস্রাব করার সময় কথা না বলা। (মুসনাদ আহমদ)
– হাড়, কয়লা, কাগজ, গাছের কাঁচা পাতা, খাবার, শুকনো গোবর দ্বারা ঢিলা-কুলুখ না করা। (তিরমিযি)

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত দোয়া ও নিয়ম অনুসারে প্রস্রাব-পায়খানা সম্পন্ন করার তাওফিক দান করুন। আমীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!