আল্লাহ মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপাসনার জন্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “আমি আমার ইবাদত ব্যতীত অন্য কোন কাজের জন্য জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করিনি।” আজ আমরা আজকের আলোচনায় জিন পরি সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন। তো চলুন শুরু করা যাক-
পবিত্র কোরআনের ৭২ তম সূরা আল-জিন। জিন শব্দের অর্থ অদৃশ্য বা গোপন। জিনরা অদৃশ্য, মানুষ তাদের দেখতে পায় না। তারা মানুষকে দেখতে পায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় তারা এবং তাদের দলবল তোমাকে দেখে, যেখানে তুমি তাদেরকে দেখতে পাও না।” (সূরা আরাফ, আয়াত ২৭)
যাইহোক, কিছু প্রাণী জ্বিন এবং শয়তানকে দেখে। আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তুমি গাধার আর্তনাদ শুনতে পাও, তখন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও, কারণ তারা শয়তানকে দেখে বলে কান্নাকাটি করে। (বুখারী, হাদিস: ৬/৩৫০; মুসলিম, হাদিস: ১৭/৪৭)
জিন পরি
প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে পৃথিবীতে জিনের অস্তিত্ব আছে বলে জানা গেছে। জ্বিনের আদি পিতা সামুম। আল্লাহ জ্বিন বানিয়ে সামুমকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার কাছে কিছু চাও। সামুম দুটো জিনিসের কামনা করেছিল। তা হল-
প্রথমত: জিন মানুষকে দেখতে পারবে কিন্তু মানুষ জিনকে দেখতে পারবে না।
দ্বিতয়ত: জিনরা বৃদ্ধ বয়সে যুবক হয়ে মারা যাবে।
আল্লাহ সামুর দুটো ইচ্ছাই পূরণ করলেন।
জিনের কিছু বৈশিষ্ট্য
এক. জিন অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে এবং খুব দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে পারে।
দুই. পৃথিবী ছাড়া সব গ্রহ -নক্ষত্রের ওপর জিন চলাচল করতে সক্ষম।
তিন. যে কোন প্রাণীর রূপ ধারন করতে পারে।
চার. জিনরা অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করে।
পাঁচ. জিন মানুষের চেয়ে অনেক বেশি দিন বেঁচে থাকে। কারো মতে, এটি প্রায় ৫০০ বছর। যাইহোক, ৩০০ বছর বয়সে, তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। জ্বিনদের মধ্যে আছে নারী জাতি, যাদের বলা হয় পরী।
জায়েদ বিন আরকাম থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জ্বিন ও শয়তান এসব স্থানে (টয়লেট) অবাধে বিচরণ করে। তোমাদের মধ্যে যারা এইসব স্থানে যায় তারা যেন বলে, আমি নারী শয়তান ও পুরুষ শয়তানের কাছে থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই। (আহমেদ ইবনে হাম্বল: ৪/৩৬৯)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জিন তিন প্রকার। একদল যারা সবসময় আকাশে উড়ে বেড়ায়। আরেকটি দল যারা সাপ এবং কুকুরের আকৃতি ধারণ করে। তৃতীয় দলটি হল পৃথিবীবাসী, যারা এক জায়গায় বসবাস করে বা বিচরণ করে। (বায়হাকী এবং তাবারানী)।
জিন যে কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর রূপ নিতে পারে। মানুষের আকারে বেঁচে থাকতে পারে। মানুষের সাথে একসাথে খেতে ও পান করতে পারে। খারাপ জ্বিনরা সাধারণত কালো সাপ বা কুকুরের রূপ ধারণ করে।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত একটি হাদীস অনুসারে, রাসূল (সা।) তাঁর কিছু সাহাবীদের নিয়ে উকাজ বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে তিনি নাখাল নামক স্থানে ফজরের নামাজ আদায় করেন। সেই সময় একদল জ্বীন সেই জায়গা দিয়ে যাচ্ছিল। কোরআন তেলাওয়াত শুনে তারা থেমে গেল। গভীর মনোযোগ দিয়ে কুরআন শোনেন।
কাজী আবু আয়ালা (রহ.) বলেন, জ্বিন মানুষের মতোই খায় -পান করে। তারা চিবিয়ে খায় এবং গিলে খায়। অনেক সময় সে মানুষের সাথে বসে খায়। ভালো জিন মানুষের উপকার করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দুটি জিনিস দিয়ে তোমরা ইস্তেনজা করো না, তা হল হাড় ও গোবর। কারণ, এগুলো হল তোমার জ্বিন ভাইদের খাবার। ‘(তিরমিযী শরীফ)।
ভালো জিন একা থাকতে পছন্দ করে। বিশেষ করে পাহাড়ে। তারা মানুষের কোন ক্ষতি করে না। খারাপ জিনরা আবর্জনা, বাথরুম, টয়লেট ইত্যাদিতে থাকে তাই বাথরুমে যাওয়ার আগে দোয়া পড়া উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত একটি হাদিস অনুসারে, জিনরা নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত স্থানে থাকতে পছন্দ করে। যেখানে মানুষের বর্জ্য এবং অবশিষ্ট খাবার পিছনে ফেলে রাখা হয়।
কেউ ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “জ্বিনরা কি খাওয়া -দাওয়া করে এবং বিয়ে করে মারা যায়?” জবাবে তিনি বলেন, এগুলো বেশ কয়েক ধরনের। তাদের মধ্যে কিছু বাতাসের মতো। জিনরা একে অপরকে বিয়ে করে এবং তাদের সন্তান হয়। শিশুরা মানুষের চেয়ে বেশি।
যদি কোন ঘরে নামাজ পড়ে এবং কোরআন তিলাওয়াত করে, তাহলে দুষ্ট জ্বিনরা সে ঘরে প্রবেশ করতে পারে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। শয়তান সেই ঘর থেকে পালিয়ে যায় যেখানে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়। ‘(সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৬০)
জ্বিনদের নিয়ে আমাদের দেশে এক ধরনের ফকির-ওঝার ব্যবসা আছে। এই ব্যবসাগুলির অধিকাংশই প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষকে ঠকিয়ে করা হয়। সরল মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। যিনি জ্বিনকে উপস্থাপন করেন তিনিই জ্বিনের কণ্ঠে কথা বলেন। এটি অনেকবার ধরা পড়েছে।
জিনরা অদৃশ্যের খবর ও ভবিষ্যৎ জানে না। মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহ মানুষকে সকল জীবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ করে বানিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানদের মর্যাদা দিয়েছি, আমি তাদেরকে জমিনে এবং পানিতে যাতায়াতের মাধ্যম দিয়েছি; আমরা তাদের জীবিকার উপায় দিয়েছি, এবং তাদের সৃষ্ট অনেক কিছুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। ‘(বনী ইসরা’ল, আয়াত: ৭০)
তবুও কিছু অজ্ঞ মানুষ জ্বিনের আশ্রয় নেয়। তারা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চায়। এটা শুধু ভুল নয়; শিরকের মত জঘন্য পাপ। জ্বীনদের বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ এবং তারা ভবিষ্যত জানে কিনা তা সোলায়মান আলাইহিস সালাম এর মৃত্যুতে দেখা যায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন আমি সোলায়মানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন জিনদের উইপোকা দ্বারা তার মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছিল; যখন তারা সোলায়মানের লাঠি খাচ্ছিল। যখন সোলায়মান (আঃ) পড়ে গেলেন, তখন জ্বিনরা বুঝতে পারল যে তারা যদি অদৃশ্য বিষয় জানতেন, তাহলে তাদের অবমাননাকর শাস্তির শিকার হতে হতো না। ‘(সূরা সাবা, আয়াত ১৪)
আয়াতুল কুরসি জিনকে তাড়াতে সবচেয়ে কার্যকর প্রার্থনা। জিন আসরের ঘটনা হাদীসে পাওয়া যায়। হাদিস অনুসারে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক অসুস্থ ছেলের সাথে দেখা করলেন, যিনি জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেটির দিকে ফিরে উচ্চস্বরে বললেন, হে আল্লাহর শত্রু, বেরিয়ে এস। হে আল্লাহর শত্রু, বেরিয়ে এসো! তারপর ছেলেটি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠল। ‘(ইবনে মাজাহ, হাদিস)
জিন একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তন করতে পারে। শরীরে শক্তি বাড়াতে পারে। আলো সহ্য করতে পারে না। আজানের সময় অস্থির হয়ে যেতে পারে। রাতে বাড়ির বাইরে যেতে পারে। এমন সময়ে আল্লাহর শরণাপন্ন হও। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তুমি শয়তানের দ্বারা প্ররোচিত হও, তাহলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ। ‘(সুরা আল আরাফ: ২০০)। সূরা নাস এবং সূরা ফালাক সবচেয়ে কার্যকর।
জিন সম্পর্কে ১০টি আশ্চর্যজনক তথ্য
জিন পরি সম্পর্কে মানুষের মাঝে হাজারো কৌতুহল রয়েছে। কিছু মানুষ বিভিন্ন অবাস্তব ঘটনা সম্পর্কে আবেগ প্রবণ। আবার, পণ্ডিত্য দেখানোর স্বার্থে, কেউ এই বিষয়ে অনেক সত্য অস্বীকার করে। যাইহোক, এই লিখনীর মাধ্যমে আজ আমরা জিন সম্পর্কে ১০ টি তথ্য দিবো, যা অবশ্যই পবিত্র কোরআন এবং সহীহ হাদিসের আলোকে প্রমাণিত।
জিন পরি বলতে আসলে কিছুই নেই
জিন পরি বলতে কিছু নেই-এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, আমি জ্বিনদের জ্বলন্ত আগুন থেকে সৃষ্টি করেছি। (সূরা হিজর, আয়াত ২৬)
উপরন্তু, কোরআন পাকের একটি অনন্য সূরার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সূরা জিন’। বড় এবং ছোট প্রায় ৫৬ টি শ্লোকে এই সম্পর্কে অনেক বিস্ময়কর তথ্য রয়েছে, যা অবশ্যই জিনের অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
অভিশপ্ত শয়তান জিনের বংশধর:
কুরআন অনুসারে শয়তান ইবলিস আদম আলাইহিস সালামের সামনে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল। তাই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন জিন বংশোদ্ভূত। (সূরা: কাহাফ, আয়াত: ৫০)
এছাড়াও, পবিত্র কোরআনে অনেক জায়গায় জিনকে বোঝাতে শয়তান শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
জিনের আকৃতি কেমন
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জিনের আকৃতির বর্ণনা মূলত তিন প্রকার। দৃশ্যমান: অর্থাৎ জিনের প্রকৃত আকৃতি মানুষের চোখে দৃশ্যমান। (তাবারানী: ৫৭৩) অদৃশ্য: জিনের আকৃতি ছাড়া কেবলমাত্র শারীরিক উপস্থিতি অনুভব করা। (সূরা: আরাফ, আয়াত: ২৩) বিকৃত আকৃতি: মানুষ, পশু ও গাছের আকৃতি নিতে পারা। (তাবারানি: ৪০১২)
জিনরা কি খায়
মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী যেমন খাদ্য খায়, তেমনি জ্বিনও খাদ্য সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক চাহিদা পূরণ করে। আল্লাহর নামে জবাই করা পশুর হাড় জ্বিনদের খাদ্য। একবার একদল জ্বিন নবী (সাঃ) কে তাদের এলাকায় নিয়ে গেল। সেখানে নবী তাদের কাছে কুরআন তিলাওয়াত করলেন। তারপর তারা জিজ্ঞেস করল, আমাদের হালাল খাবার কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর নামে জবাই করা প্রতিটি পশুর হাড় (সেগুলো জিনের খাদ্য)।’ (তিরমিযী, হাদিস: ৩২৫৭)
জিনদের বিয়ে এবং প্রজনন
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রজ্ঞায় প্রতিটি বস্তুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং জিন জাতিতেও পুরুষ এবং মহিলা জোড়া রয়েছে। মানুষের মতো তাদেরও বিয়ে এবং সন্তান ধারণের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। পবিত্র কোরআনে জান্নাতের নারীদের কুমারীত্ব বর্ণনা করা হয়েছে যে, কোন পুরুষ বা জ্বিন স্পর্শ করেনি। (সূরা আর-রহমান, আয়াত ৫৬)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “তুমি কি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তান ও তার বংশধরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছ?” (সূরা কাহাফ, আয়াত ৫০)।
এই দুটি আয়াত থেকে জ্বিনের যৌন ইচ্ছা এবং বংশের প্রজনন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
জিনের ধর্ম কি?
জিন পরি গনও আল্লাহর সৃষ্টির অন্যতম। আল্লাহ তাদের প্রভু। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “হে মানুষ ও জ্বীন, তুমি কি তোমার প্রভুর কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করতে পারবে?”
এবং প্রত্যেক নবীকে সেই সময় একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ ও জ্বিনদের পথ দেখানোর জন্য দূত হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে মানবজাতি ও জিন! আমি কি অনন্তকাল থেকে আপনার কাছে নবী প্রেরণ করিনি?
যেহেতু রাসুল (সাঃ) কে কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে, সেহেতু মুহাম্মদ (সঃ) ই বর্তমান জিনদের জন্য শরিয়তে তাদের ধর্ম হিসেবে বিবেচিত হবে।
জিনদের ধর্মীয় নিয়ম
জিনের পাশাপাশি মানুষের ক্ষেত্রেও ধর্মীয় অনুশাসনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কেয়ামতের দিন তাদের বর্তমান কাজের জন্য তাদের কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে। ধার্মিকদের জন্য জান্নাত, আর দুষ্টদের জন্য জাহান্নাম। (সুরা আরাফ: ৩৪)
জিন মানবদেহে প্রবেশ করে
আশ্চর্যজনকভাবে, জিন পরি মানুষের শরীরের শিরা -উপশিরায় বিচরণ করতে পারে। এটি এমনকি একজন ব্যক্তির বুদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে এবং তাকে বিচলিত করতে পারে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “যারা সুদ খায় তারা কিয়ামতের দিন এমনভাবে দাঁড়াবে যেমন শয়তানের আসর (অশুভ প্রভাব) কাউকে কলুষিত করে ফেলে।” (সূরা আল বাকারা, আয়াত ২৭৫)
একইভাবে হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শয়তান তোমার শরীরে এমনভাবে সঞ্চালিত হয় যেভাবে তোমার সারা শরীরে রক্ত প্রবাহিত হয়।’ (বুখারী, হাদিস: ৩৪৭২)
জিনেরা কি অদৃশ্য সম্পর্কে জানে?
আসমান ও জমিনের অদৃশ্য আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যাইহোক, অনেক দৃশ্যমান জিনিসকে জিনরা অদৃশ্য থেকে পর্যবেক্ষণ হিসাবে বর্ণনা করে, যা অনেকে অদৃশ্যের খবর বলে মনে করে। এটা একটা ভুল ধারণা মাত্র।
পুণ্যবানদের উপর জিনদের খারাপ প্রভাব নেই
যদিও জ্বিন মানবদেহকে প্রভাবিত করতে পারে, কিন্তু পুণ্যবান মুসলমানদের ক্ষেত্রে এর প্রচেষ্টা বৃথা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক জিন ও শয়তানকে বলেন, “যারা আমার আন্তরিক বান্দা তাদের উপর তোমার কোন প্রভাব পড়বে না।” (সূরা হিজর, আয়াত ৪৩)।
জিনদের কি মৃত্যু হয়?
জিন পরিদের অবশ্যই জন্ম এবং মৃত্যু আছে। মানুষের ন্যয় জিনদেরকেও আল্লাহর দরবারে পাপ পুন্যের হিসাব দিতে হবে। তারাও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে।
অতএব, দেখা যায় যে কেবলমাত্র যারা ধর্মীয় বিষয়ে উদাসীন তারা জিন ও শয়তানের কুপ্রভাব এবং চক্রান্তের শিকার হয়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, দুষ্ট জিন তার যৌনাঙ্গ নিয়ে খেলা করে যদি সে টয়লেটে ঢুকার আগে দোয়া না পড়ে। যদি অনুরূপ খাদ্য গ্রহণের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা না হয়, তাহলে খারাপ জ্বিনরা তার খাবারে অংশগ্রহণ করে।
জিন একজন ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে যদি সে একজন বিশ্বাসী জিন হয়। কিন্তু বেশিরভাগ সময় খারাপ জিন মানুষের ক্ষতি করে। যদি কোন জ্বিন স্বেচ্ছায় উপস্থিত হয় এবং ধর্মের কাজে সাহায্য করতে চায়, তাহলে তার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে এবং সেই সাহায্য নেওয়া জায়েয হবে। জ্বিন ও মানুষের সম্পর্ক যদি ধর্মের উপর ভিত্তি করে হয়, তাহলে তা জায়েয।
আজ আমরা জিন পরি সম্পর্কে যে ধারনা পেয়েছি তা বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করে জানিয়ে দিন। আল্লাহ আমাদেরকে জিন ও শয়তানের কুপ্রভাব ও কুমন্ত্রনা থেকে রক্ষা করুন। আমীন।।