দোয়া একটি ইবাদতের কাজ। হাদিসে দোয়াকে ইবাদতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আপনি যদি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা না করেন, আল্লাহ আপনাকে অপছন্দ করবেন। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সহজ। যেকোন বিপদ এবং সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় দোয়ার মাধ্যমে। তাই সকল বিষয়ে আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার কোন বিকল্প নেই। কারণ, তিনিই একমাত্র সাহায্যকারী এবং সমাধানকারী। দোয়ার মাধ্যমে জান্নাত লাভের ব্যাপারে হাদিসে অনেক সুসংবাদ আছে। আজ আমরা খুবই উল্লেখযোগ্য একটি জান্নাত লাভের দোয়া নিয়ে আলোচনা করবো।
জান্নাত লাভের দোয়া
আরবিঃ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا ، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا ، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا
আরবি উচ্চারণঃ ‘রাদিতু বিল্লাহি রব্বাউঁ ওয়া বিল ইসলামী দ্বিনাউঁ ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যাঁও ওয়া রাসুলা’।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বিন এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসুল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি।
এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। এক হাদিসে মুনাইজির (রাঃ)থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আমি রাসুল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সকালে উপরিউক্ত এই দোয়া পড়বে— আমি তার হাত ধরে তাকে জান্নাতে পৌঁছে দেবো। (মুজামুল কবির, হাদিস : ৩৫৫/২০; সিলসিলাতুস সহিহা, হাদিস : ২৬৮৬)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি সকাল ও বিকেল তিনবার এই দোয়া পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির নেকি বৃদ্ধির মাধ্যমে তাকে সন্তুষ্ট করে দিবেন। (তিরমিজি : ২/১৭৬)
হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুরগাছ রোপণ করা হয়। (তিরমিজি : ৩৪৬৪)
হাদিসের আলোকে জান্নাতে যাওয়ার ১০ টি আমল
প্রত্যেক মুসলমানের স্থায়ী ঠিকানা জান্নাত। পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী। পরকাল অসীম। এই দুই দিনের জীবনে, জান্নাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। আসুন আমরা ইসলামের নির্দেশিত পথে নিজেদেরকে পরিচালিত করে এই পথকে সহজ এবং মসৃণ করি। আমি আজ আপনাদেরকে হাদিসের আলোকে জান্নাতে যাওয়ার ১০ টি আমল জানিয়ে দিব।
১. ফরজ নামাজ
নামাজ জান্নাতের চাবি। আপনি যদি জান্নাতে যেতে চান, তাহলে নামাজের কোন বিকল্প নেই। রাবিয়া ইবনে কাব আল আসলামি (রা)) বলেন, ‘এক রাতে আমি নবী (সঃ) এর সাথে ছিলাম। আমি তাঁর জন্য অযুর পানি এনে দিয়েছি এবং প্রয়োজনীয় কাজ করে দিয়েছি। সে আমাকে বলল তুমি আমার কাছে কি চাও? আমি বললাম, আমি আপনার সাথে জান্নাতে থাকতে চাই। তিনি বললেন, আর কিছু? আমি বললাম, এটাই আমি চাই। তিনি বললেন, বেশি বেশি প্রার্থনা কর।
২. সুন্নাত নামাজ
ফরজ নামাজের আগে ও পরে সুন্নাত নামাজ আদায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। হাদিসে তাদেরকে জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম বলা হয়েছে। উম্মে হাবিবা (রা) বলেন, রাসুল (সাঃ)) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনরাত ১২ রাকাত নামাজ আদায় করে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হয়। জোহরের আগে চার রাকাত। পরের দুই রাকাত। মাগরিবের পর দুই রাকাত। এশার পর দুই রাকাত। ফজরের আগে দুই রাকাত। ‘(তিরমিযী)
৩. মসজিদ নির্মান
মসজিদ নির্মাণে অংশ নেওয়ার ফজিলত অনেক বেশি। আল্লাহ মসজিদ নির্মাতার জন্য জান্নাতে একটি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করবেন। উসমান ইবনে আফফান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরি করবেন।” (বুখারী, হাদিস: ৪৫০)
৪. আয়াতুল কুরসি
আয়াতুল কুরসি কুরআনে করিমের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের পর তা পাঠ করতেন। আবু উমামা বাহিলি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, তার জন্য মৃত্যু ছাড়া জান্নাতে প্রবেশের কোন বাধা নেই।” (নাসায়ী, হাদিস: ৯৯২৮)
৫. হজ্ব
হজ্ব ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। হজ্বের একমাত্র পুরস্কার হলো জান্নাত। আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি হজ্ব করে, অশ্লীল কথা বলে না এবং পাপ কাজ না করে, সে মায়ের পেট থেকে জন্ম নেওয়ার দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে। ” হাদিস: ১৫২১) ইরশাদ হচ্ছে, “হজ্বের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।” (আহমাদ, হাদিস: ১৪৫২২)
৬. তাহাজ্জুদ
শেষ প্রহরে পৃথিবীর সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন আরামদায়ক বিছানা ছেড়ে আল্লাহর দরবারে নামাজ পড়ার নাম তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদ আমাদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রহ)) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘হে লোকেরা, সালাম ছড়িয়ে দাও। খাবার খাওয়াও. রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে তখন প্রার্থনা করুন। শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করুন। ‘(ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১০৯৭)
৭. কয়েকটি মূল্যবান শিষ্টাচার
কিছু শিষ্টাচারের গুণাবলী অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, উবাদা ইবনে সামিত (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমার পক্ষ থেকে ছয়টি জিনিসের নিশ্চয়তা দাও, আমি তোমাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব। সত্য কথা বলো। ওয়াদা পূর্ণ করো। আমানত ফিরিয়ে দাও। লজ্জাস্থানের হেফাজত করো। দৃষ্টি সংযত করো। হাতকে বিরত রাখো।’ (আহমাদ, হাদিস : ২২৮০৯)
৮. এতিমদের তত্ত্বাবধান
এতিমদের দেখাশোনা করা খুবই সওয়াবের কাজ। এটাই জান্নাতে যাওয়ার আমল। সাহাল ইবনে সা’দ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার তর্জনী এবং মধ্যম আঙুল একসাথে রেখে বললেন, “আমি এবং এতিমের অভিভাবক জান্নাতে এরকম থাকবো । ”
৯. রোগীর যত্ন
রোগীর যত্ন এবং যত্ন একটি জান্নাতি আমল। সওবান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রোগী দেখতে যায়, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরন করতে থাকে।” (মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৮)
১০. সরলতা
একজন সহজ সরল ব্যক্তি আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। তিনি তাদের জান্নাত দান করবেন। উসমান ইবনে আফফান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সহজ সরল, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ক্রেতা বা বিক্রেতা হিসাবে। বিচারক হিসেবে হোক বা ন্যায়ের প্রার্থী হিসেবে। ‘(নাসায়ী, হাদিস: ৪৬৯৬)
আল্লাহ আমাদের সকলকে উল্লেখিত আমল সমূহ করার সেই তৈফিক দান করুক। আমিন।।
জান্নাত লাভের দোয়া
jannat laver doya