ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ভালাে ব্যবহার

ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ভালাে ব্যবহার

ইসলাম তার আপন মহিমায় চিরভাস্বর। যেখানে তার স্পর্শ লেগেছে সেখানেই ইতিবাচক পরিবর্তন সৃজিত হয়েছে। ধ্বনিত হয়েছে আদর্শের বিজয় ধ্বনি। চিরনন্দিত এই আদর্শের কাছে মানবসত্তা প্রায় সময়ই মাথা নত করেছে। মানুষ তার আত্মসত্তাকে ইসলামের কালজয়ী আদর্শের কাছে সমর্পণ করে কেন স্বস্তি বােধ করেন, এটা কি আর নতুন করে বুঝিয়ে বলতে হবে? ইসলামের আদর্শ যতই চমৎকার হােক না কেন, তার অনুসারীরা যদি ঐ আদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারীরা মডেল হতে না পারেন, তবে অন্যেরা ইসলামের আলােয় আলােকিত হওয়ার পরিবর্তে, একে অন্ধকার হিসেবে আখ্যা দিয়ে পদদলিত করবে। আর বর্তমান পৃথিবীতে তাই হচ্ছে সর্বত্র । আল কুরআনের যে সম্মােহনী শক্তি, তাকে ঐভাবে উপস্থাপন যিনি করবেন, তিনি তাে তার মূল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে অন্য লােকদের কাছে হালকা হিসেবে পরিচিত। তার জীবনের সর্বদিক বিস্তত মূল্যায়ন ঐ অমুসলিম লােকটি এক নিমিষেই করে ফেলতে পারে। সুতরাং মুসলমান প্রথমত তার আদর্শের সক্রিয় অনুসারী হবেন। অন্যদের আকৃষ্ট করার যথােপযুক্ত উপস্থাপনশৈলী রপ্ত করবেন এবং মনের বা যুক্তির পূজা না করে ওহির বিধানের আলােকে জীবন গঠনের উপকরিতা উল্লেখপূর্বক, ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করবেন। কোনক্রমেই বাস্তবচ্যুত হওয়া বা মিথ্যার সাথে আপসকামী হওয়া যাবে না। এক কথায় ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ভালাে ব্যবহার তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভালাে ব্যবহার এর বিকল্প নেই।

ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ভালাে ব্যবহার

 

মনে রাখতে হবে আত্মসত্তা বিলীন করে আত্মসমর্পণের মতাে কঠিন একটি সিদ্ধান্ত মানুষ তখনই নেয়, যখন সে ওখানে পূর্ণ ভরসা পায়। যথেষ্ট যােগ্যতা থাকলেও তাকে যে আরেকটি গুণের অধিকারী হতে হবে। ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ভালাে ব্যবহার বা ভালাে আচরণ একান্ত আবশ্যক । এ সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে রয়েছে, “(হে নবী) আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য নরম দিল ও সহৃদয়বান হয়েছেন। যদি বদমেজাজি ও কঠিন হৃদয়ের হতেন, তাহলে লােকেরা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতাে” (আলে ইমরান-১৫৯)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায় বিচার ও ভালাে আচরণের ওপর অবিচল থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন” (সূরা আন নাহল-৯)। আল্লাহপাক মুসলমানদের পরিচয় দিতে গিয়ে আরাে বলেন, “এবং তারা নিজের ওপর অন্যান্যদের (প্রয়ােজনকে) অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তারা অনটনের মধ্যে থাকে” (সূরা আল হাশর-৯)। ভালাে আচরণের মাধ্যমে মন্দ আচরণকে জয় করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন- “তারা (মুসলমানগণ) অন্যায় ও পাপকে ন্যায় ও পুণ্যের দ্বারা নিরসন করে থাকে” (সূরা কাসাস-৫৪)।

 

পৃথিবীর সেরা কল্যাণকামী হযরত মুহাম্মাদ (সা) বলেন, “যে ব্যক্তি কোমল স্বভাব থেকে বঞ্চিত, সে কল্যাণ থেকেও বঞ্চিত (মুসলিম)। অন্যত্র তিনি বলেন, “যারা রহম করে, রহমান তাদের প্রতি রহম করেন। তােমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি রহম করাে, যেনাে আসমানবাসী তােমাদের প্রতি রহম করেন।” (আবু-দাউদ, তিরমিযী)। তিনি আরাে বলেন, “মুমিন ব্যক্তি সেই উটের ন্যায় সহিষ্ণু ও সহৃদয় হয়ে থাকে, যার নাকে পতর পরিহিত, তাকে আকর্ষণ করলে আকৃষ্ট হয় আর পাথরের ওপর বসানাে হলে বসে পড়ে” (তিরমিযী)। মুহাম্মাদ (সা) মুমিনদের নিদর্শন সম্পর্কে বলেন- আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত “মুমিনের নিদর্শন হচ্ছে প্রেম-ভালােবাসা। যে ব্যক্তি না কাউকে ভালবাসে এবং না কেউ তাকে ভালবাসে, তার ভেতর কোন কল্যাণ নেই” (আহমাদ, বায়হাকী)। একটি বহুল প্রচারিত হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়, ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত। মুহাম্মদ (সা) বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের ছােটদের প্রতি স্নেহ এবং বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়” (তিরমিযী)।

ভালাে ব্যবহারকে আরবিতে ইহসান এবং ইংরেজিতে good behave বলা হয়ে থাকে । আদর্শ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইহসান কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আদল বা ন্যায় বিচারকে যদি মানুষের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টির ভিত্তি বলা হয়, তবে ইহসান হবে তার সৌন্দর্য ও পূর্ণতা। ভালাে ব্যবহারের কিছু সমার্থক শব্দ আছে। যেমন- সৌজন্যতা, শুভাকাঙ্ক্ষা, নম্রতা, শিষ্টাচার, সহানুভূতি, সদাচরণ, কোমল হৃদয়তা, খােশমেজাজ, ভদ্রতা ও ভালােবাসা প্রভৃতি। দীন কায়েমের লক্ষ্যে যাদের পদচারণা, তাদের এসব গুণ আবশ্যকভাবে থাকতে হয়। নইলে ব্যর্থ হতে হয়। ভালাে ব্যবহার একজন মানুষ ও একটি সমাজ পরিবর্তনে কি ভূমিকা রাখতে পারে এবং কিভাবে রাখতে পারে, তা এখন নিচে উপস্থাপন করা হলাে ।

 

ব্যক্তি ও সমাজ পরিবর্তনে ভালাে ব্যবহার 

কোন মানুষই মানসিক দুর্বলতার ঊর্ধ্বে নয়। মানুষের বহুদিনের বিশ্বাসকে একটি বিস্ময়কর ঘটনা হঠাৎ করে পরিবর্তন করে দিতে পারে। যেমন : চাঁদে গিয়ে নীল আর্মস্টংয়ের চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে, অনেকেই সালাফি হয়ে যান। একজন মানুষ যত খারাপই হােক না কেন, তার কিছু না কিছু সদগুণ থাকে। অনেক মানুষ তার গুণের প্রশংসার প্রত্যাশা করেন। গুণের প্রশংসা শুনে রাগ হন, আসলেই রাগ হন, এমন মানুষ খুব কমই আছে। যে কোন আদর্শের অনুসারী ব্যক্তিই কেউ হােক না কেন, আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি করতে, কর্তার কোমল হৃদয়তা ও যথেষ্ট সৌজন্যবােধ থাকতে হয়। ফলে ব্যক্তির পরিবর্তন তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব না হলেও, তাৎক্ষণিকভাবে ব্যক্তিকে আকৃষ্ট করা যায়। বলিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পরই ইসলামের সম্মােহনী শক্তির মাধ্যমে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে এদিকে আকৃষ্ট করা যায়। ইসলামের স্বচ্ছ সলিলে অবগাহন করে, মানবীয় পূর্ণতা লাভ সম্ভব হবে মনে করলে কিংবা সত্যিকার সফলতা লাভের পূর্ণ ভরসা পেলেই একজন মানুষ ইসলামের সুমহান আদর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

এভাবে মানুষের চিন্তা-ভাবনায় বিপ্লব সৃষ্টি হলে, হযরত উমর (রা)-এর মত তলােয়ারের পাশাপাশি তার সর্বশক্তি প্রয়ােগ করবে ইসলামের জন্য। সময়ের প্রেক্ষাপটে হযরত উমর (রা)-এর প্রভাবে যেমন একটি সমাজ পরিবর্তিত হয়, তেমনি ব্যক্তির পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি সমাজের আমূল পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তলােয়ার ও অস্ত্রের চেয়ে মুহাম্মাদ (সা)-এর মন্ত্রমুগ্ধ আচরণ বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল। মুহাম্মাদ (সা)-এর অনুসারী হিসেবে আজকের বিশ্বে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করতে, এমন কিছু মানুষ গড়ে ওঠা জরুরি, যাদের আচরণে আল-কুরআন ও সহীহ হাদিসের বাস্তব অনুসরণ লক্ষ্য করা যায়। যাদের মুসলমানিত্ব নিয়ে মুসলিম সমাজ গর্ববােধ করতে পারে। ঈমানী শক্তির প্রখরতা, চরিত্রমধুর্যের সম্মােহন, কথায়-কাজে যথেষ্ট মিল, সুন্দর বাক্যালাপ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাজ্ঞান ও সৌজন্যবােধের দৃষ্টান্ত উপস্থাপনার মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীতে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে।

 

        অন্যদিকে মন্দ আচরণের ছােবল থেকে মানুষ দূরে সরে যেতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে। যে ব্যক্তির হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ নয়, তার মুসলমানিত্ব নিয়ে স্বয়ং মুহাম্মদ (সা)-ই প্রশ্ন তুলেছেন। জ্ঞানগরিমা বা অর্থের অহঙ্কারবােধের বহিঃপ্রকাশ কোন ব্যক্তিকে শুধু ধ্বংসই করে না, পুরাে মুসলিম সমাজকেও কলঙ্কিত করে। আধুনিক দুনিয়ায় Communication-এর যে গুরুত্ব বেড়েছে, তাতে PR man বা Public Relations man (জনসংযােগকারী) গণ তাদের সম্পদ বলতে Interrelation বা আন্তঃসম্পর্ককেই বুঝে থাকেন। যারা ধনী তাদের সম্পদ হলাে টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ। আর যারা জনসংযােগকারী, তাদের সম্পদ হলাে- যত বেশি লােকের সাথে সম্ভব, সম্পর্ক তৈরি করা। যিনি তা বেশি করতে পারবেন, তিনি এই লাইনে তত বেশি সম্পদশালী হবেন। আর ব্যক্তি সম্পর্কের সৃষ্টি ও সংরক্ষণে ভালাে ব্যবহারের ভূমিকা শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয় অতুলনীয়। মধুর আচরণের মাধ্যমে শত্রুকেও বন্ধুরূপে পাওয়া সম্ভব। জনসংযােগের জন্য অমায়িক ব্যবহার এতই জরুরি যে, পান খেতে সুপারি-চুন জরুরি। পারিবারিক শিক্ষা এ ক্ষেত্রে ব্যাপক কার্যকর। এখনাে আমরা যখন কোন বাড়িতে একবার যাই, তখন তাদের সাময়িক আচরণে আমরা ধারণা করে নিই, তারা কতটা ভদ্র। কতটা অভদ্র। আবার তারা যখন আমাদের বাড়িতে আসে, তখন তারা আমাদের সম্পর্কে নিশ্চয় একইরূপ ধারণা করে। সুতরাং মধুর ব্যবহার সেখানে নিত্য জরুরি। নিন্দাবাদের পাহাড় পাড়ি দিয়ে ইসলামের গৌরবােজ্জ্বল ঐতিহ্যকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার পরিবেশ তৈরিতে সুন্দর আচরণ উপযুক্ত ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে। দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করা যায়। 

      অপরপক্ষে, গালাগালি, গিবত, প্রবঞ্চনা, মিথ্যা, কটুভাষী, চোগলখুরি, লজ্জাদান, অবিশ্বাস, ছিদ্রান্বেষণ, অশ্লীলতা, উপহাস, অহমিকা, তুচ্ছ জ্ঞান, মনােকষ্ট, অপবাদ, ক্ষতিসাধন, হিংসা, ধোকাবাজি ও ধারণাপ্রসূত কথা বলা মানুষের ব্যক্তিত্ব নষ্টের মূল কারণ। আমার ব্যক্তিত্ব না থাকলে কেউ আমার কাছে কেন আসবে বলতে পারেন? মূলত উপরােক্ত বদগুণগুলাে একজন মুসলমান যতটা সম্ভব পরিহার করে চলা উচিত। এ কথাগুলাে শুধু আমার নয়, একথার ওপর পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর অসংখ্য দলিল রয়েছে। আর এসব  বদগুণ তাে আমাদের কোন উপকারেও আসে না। তাই যতটা দ্রুত সম্ভব, এসবকে কুরবানি করতে হবে। অন্যদিকে কম কথা বলা, ” মার্জিত রুচিবােধ মানুষের বংশ পরিচয়ের চেয়ে অধিক ক্রিয়াশীল। তাই ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ভালাে ব্যবহার একান্ত জরুরি।

ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ভালাে ব্যবহার

 

ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভালাে ব্যবহার

    মানব জীবনে যতরকম ইতিবাচক গুণাবলী অর্জন করা সম্ভব, সবই একজন মুসলমানের থাকা উচিত। আর তাহলেই আদর্শ প্রচারের কাজ অনেকটা ফলপ্রসূ হবে। সাধারণ কথায়- “কিছু দিলে, কিছু ” মিলে। অন্যকে শ্রদ্ধা জানানাের মাধ্যমেই আত্মসম্মান প্রতিষ্ঠা করা যায়। ইসলামী সংস্কৃতির অংশ সালামের ব্যাপক প্রচলন করা দরকার। দরকার ইসলামের সামাজিকীকরণ। মানুষ শুধু আমাকে সম্মান করবে, আর আমি মানুষকে শুধু ধমক দেবাে, এ প্রত্যাশা কেবল বােকাদেরই করা উচিত। ইসলাম এ ধরনের বােকাদের ধর্ম নয়। বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বাছাই করা মানুষ সৃষ্টির জীবন বিধান হলাে ইসলাম। যে আদর্শের অনুসারীদের অমায়িক ব্যবহার সমগ্র পৃথিবীতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। জাগতিক উৎকর্ষ সাধন ও পারলৌকিক মুক্তির একমাত্র পথ হলাে ইসলাম। এ পথে আকৃষ্ট করতে হলে আকর্ষণী শক্তি পর্যাপ্ত থাকতে হবে। আর সেজন্য গন্তব্য নির্ধারণ করে দৃঢ়চেতা সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনােভাব পরিবর্তন শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণ হলেই কেবল শিক্ষা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে ধরে নেয়া যাবে। আর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন একদিনে সম্ভব হবে না। একজন মন্দ লােক একদিনেই ভদ্র হয়ে যেতে পারে না। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় তাকে ভালাে হতে হয়। ভালাে ব্যবহারের অধিকারী হতে হয়। ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালালে ভালাে হওয়া ও ভালাে ব্যবহারের অধিকারী হওয়ার পথ অনেকটা উন্মুক্ত হয়ে যায়।

 

“বড় লােক হওয়ার চেয়ে ভালাে মানুষ হওয়া বেশি জরুরি।”- এই অনুভূতি ইসলামের ধারক ও বাহকদের মনের গহিনে শক্তভাবে গেঁথে নিতে হবে। ভেদাভেদহীন ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর দাবি পূরণে আজ মানুষের আচরণে কাঙিক্ষত পরিবর্তন একান্ত প্রয়ােজন। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ভালাে ব্যবহার একটি অনিন্দ্য সুন্দর ও পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিটি মুসলমান তথা প্রতিটি মানুষের মনােজগতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। কোমল হৃদয় ও মনােমুগ্ধকর আচরণের মাধ্যমে নিজেদের আদর্শের ” দিকে আকৃষ্ট করার প্রত্যয় আমাদের থাকতে হবে। ব্যক্তির মন ও  মানসে আবেদনময়ী আচরণ সচিত করতে পারে ইতিবাচক পরিবর্তন। আর সে কারণে ইসলামের স্বরূপ দাওয়াত দাতার উপস্থাপনশৈলীর মৎকারিত্বের ওপরই অনেকটা নির্ভরশীল । আর আমি প্রতিটি মুসলমান ভাইকে এবং আমি আমাকে আহবান করতে চাই- আচরণে তমি কেন হও না মানুষের উদাহরণ? তােমার বলিষ্ঠ বক্তব্যের পূর্বে তােমার ব্যবহারকে কুরআন সুন্নাহর আলােকে বলিষ্ঠ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে, মানুষের হৃদয়তন্ত্রিতে আঘাত হানাে। সফলতার হাতছানি যে ওখানেই দেখতে পাচ্ছি।

তােমার জীবনের বাগিচাকে পত্র-পল্লব, ফলে ফলে সুশােভিত করাে আর জীবনাচারকে করাে কুসুমিত ফুল বাগিচা। মৌমাছি আর ভ্রমরের গুঞ্জরণ তােমার কর্ণকুহরে পৌছে যাবে। আর এই সফলতার জন্য ভালাে ব্যবহারের পথে অন্তরায় এমন সব বদগুণকে কাটিয়ে ওঠার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। এসব খারাপ আচরণ থেকে সাবধানতা অবলম্বনের উদ্দেশ্যে এগুলাের প্রবেশ পথে সতর্ককারী পাহারাদার বসাতে হবে। দিনের একটা ভালাে সময় ইসলামী জ্ঞানচর্চায় মশগুল থাকতে হবে। ঈমান বৃদ্ধির কার্যাদি সম্পাদন করতে হবে। মানুষের সাথে বেশি বেশি মিশতে হবে। মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও বিপদে বেশি বেশি অংশগ্রহণ করতে হবে। সমবেদনা জানাতে হবে, কটুকথা না বলার জন্য আত্মসংবরণের চেষ্টা। করতে হবে। ভালাে ব্যবহারের সমাজ তৈরির চেষ্টা করতে হবে। আমার জায়গায় ঘর তুলবাে, চাচাকে জিজ্ঞেস করলে যেমন আরাে ভালাে হয়, তেমনি আমাদের কথা শক্তিকে আরাে বেশি ভালােবাসা পূর্ণ করতে পারলে আমরা অবশ্যই লাভবান হব। কারণ, প্রচণ্ড সুযােগ ও বৈধতা থাকার পরও প্রতিশােধ গ্রহণ না করার মধ্যেই মানুষের মহানুভবতা ও শ্রেষ্ঠত্ব নির্ভরশীল। যে কোন কথার তুলনামূলক বেশি সুন্দর জবাব দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। অপর ভাইয়ের জন্য দোয়া করতে হবে। ভালাে কথাগুলাে বেশি বেশি বলতে হবে । আন্তরিকতা বৃষ্টির সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যেমন : একত্রে আহার, হাসিমুখে কথা বলা, ছােটখাটো বিষয়ে ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, সুযােগ পেলে হাদিয়া প্রদান, সর্বোত্তম সম্বােধন করে ডাকা, ব্যক্তিগত খোঁজ-খবর নেয়া, সালাম-মুসাফাহ, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, সর্বদা মঙ্গল কামনা ও শ্রদ্ধা-সম্মান দিয়ে কথা বলা প্রভৃতি। আরেকটি কাজ আমাদের বেশি বেশি করতে হবে- সেটা হলাে ভালাে মানুষের সাহচর্যে বেশি বেশি সময় দেয়া। সুন্দর একটি জীবন গঠন ও জীবনের সর্বাঙ্গীন সফলতা লাভ এবং আদর্শ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভালাে ব্যবহারে সংস্কৃতি ব্যাপকতর করার সংগ্রামে জড়াে হতে সাধারণভাবে আপামর মুসলিম সমাজ আর বিশেষভাবে মুসলিম নেতাদের শ্রদ্ধাপূর্ণ অনুরােধ জানাচ্ছি।

 

 

ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ভালাে ব্যবহার সকলের প্রত্যাশা। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমেই এ প্রত্যাশা পূরণ হওয়া সম্ভব। আমি একজন মানুষকে কিভাবে গ্রহণ করবাে- সেটা আমার মন সিদ্ধান্ত নেয়। অতঃপর ভাষার মাধ্যমে আমি তা প্রকাশ করি। আল কুরআনের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে মানুষের প্রতি ভালাে আচরণ করা মানুষ হিসেবে আমার দায়িত্বসীমার আওতাভুক্ত। মানুষকে তার মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হওয়া মানে আত্মমর্যাদায় আঘাত করা। আর যারা ভালাে ব্যবহারের মাধ্যমে অন্যকে মর্যাদা দেন, তাদের দায়িত্ব তুলনামূলকভাবে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাওয়া। থেমে গেলে চলবে না। অহমিকা পতনের মূল, ইসলাম বিদ্বেষী মানুষকে মুহাম্মাদ (সা)-এর অনুপম চরিত্র যেমনিভাবে আকর্ষণ করেছিল, ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষীদের তেমনিভাবে আজকের বিশ্ববাসীকে সম্মােহিত করার প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনার একেকটি ভালাে ব্যবহার হােক ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার একেকটি সিড়ি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ যুগের সেরা মানুষে পরিণত করুন। বিপন্ন মানবতার পক্ষে আমাদের দরদমাখা ক্ষুদ্র উচ্চারণকে কবুল করুন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!