মিলাদ শব্দের অর্থ জন্ম। মিলাদুন্নবী মানে নবীর জন্ম। পরিভাষাগুলো এভাবেই এসেছে। যাইহোক, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীগণ তাঁর জন্ম উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করেছিলেন নাকি উদযাপন করেন নি তা জানা যায়নি। ঈদে মিলাদুন্নবী ইবাদত না বিদআত বর্তমান সময়ে এ নিয়ে বেশ কাঁদা ছোড়া ছুড়ি চলছে। একদল আলেম বলছেন এগুলো ইবাদতের কাজ আর অন্য দল বলছে এগুলো বিদআত। সাধারণ মানুষ মাঝখান থেকে বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই আজকের আলোচনার বিষয় হল ঈদে মিলাদুন্নবী। আমরা এখানে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
হাদিসে বলা হয়েছে, “দ্বীনের মধ্যে যদি কোন ব্যক্তি এমন কিছু করে যা আমি করিনি, তা পরিত্যাগ করা হবে অথবা তা গ্রহণ করা হবে না এবং এটি বিদআত হিসাবে বিবেচিত হবে।” আমাদের নবী কখন জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং মারা গেছেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। জন্ম তারিখ এবং মৃত্যুর দিন নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যাইহোক, সমস্ত উলামা একমত যে তিনি যে মাসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে মাসে তিনি মারা যান।
সুতরাং আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যে সময়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, সে সময় জন্মগ্রহন করেছেন বলে আমরা আনন্দ করবো এমন কোন সুযোগ নেই। বরং রাসুল (সাঃ) যা করেছেন তা আমাদের অনুসরণ করা উচিত এবং বেশি বেশি আমল করা উচিত। আল্লাহ নবী (সাঃ) কে বলেন, ‘বলুন, যদি আপনি আল্লাহকে ভালবাসেন, তাহলে আমার রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমে তাকে ভালবাসুন।’ অতএব, রাসুল (সাঃ) এর প্রতি আমাদের কর্তব্য হল রাসূল (সাঃ) এর অনুসরণ করে তার উপর দুরুদ পাঠ করা।
ঈদে মিলাদুন্নবী
আল্লাহ আমাদেরকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করতে বলেছেন। হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ এবং ফেরেশতারা রাসুলের ওপরে সালাত ও সালাম পেশ করে, তোমরাও রাসুলের ওপর সালাত ও সালাম পেশ করো।’ যখন এই আয়াত নাজিল হলো, সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসুলের কাছে আসলেন এবং বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমরা তো আপনার ওপর সালাম পেশে করি। সাথে আল্লাহ আয়াত নাজিল করলেন, সালাত পাঠ করার জন্য। সেটা কীভাবে করব?’। রাসুল (সা.) তখন তাদের শিখিয়ে দিলেন, দরুদে ইব্রাহিম, যেটা আমরা নামাজে পড়ি। অধিকাংশ আলেমদের মতে এটা পড়া ওয়াজিব করে দিয়েছেন।
সাহাবাগন এভাবেই শিখিয়ে গিয়েছিলেন, যে আয়াত যখন নাজিল হয়েছে কীভাবে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর কাছ থেকে তারা এটা শিখেছেন। আর সেটা বাদ দিয়ে মিলাদ নামে এভাবে প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়ালে কোনো কাজ করা বা ঘটা করে পালন করা আমাদের উচিত হবে না।
তিরমিযীতে, ইমাম মুসলিম আবু কাতাদা আল-আনসারী থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার রোজা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: “এই দিনে আমার জন্ম হয়েছিল এবং এই দিনে আমার এই দিনে আমার উপর ওহী এসেছে। ” মুসলিম: (১১৬২)
ইমাম তিরমিযী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমল সোমবার ও বৃহস্পতিবার উপস্থাপন করা হয়। আমি চাই আমার আমল রোজা রাখার সময় পেশ করা হোক। ” তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান, এবং আল-বানি সহীহ তিরমিযীতে হাদিসটি সহীহ বলেছেনএবং উপরের বিশুদ্ধ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্মের শুকরিয়া জানাতে সোমবার রোজা রেখেছিলেন। এই দিনে তার জন্ম এবং তার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে এবং বান্দার আমলগুলো একই দিনে আল্লাহর দরবারে পেশ করা হোক তিনি এই কামনা করতেন, তাই সে পছন্দ করে যে তার আমলগুলো রোজা অবস্থায় পেশ করা হোক।
সেদিন রোজা রাখা, যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রেখেছিলেন, এতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্ম এবং নবুওয়াতের আশীর্বাদ, এবং তিনি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশা রাখেন, তাহলে এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাহ। প্রতি সোমবার যতটা সম্ভব রোজা রাখার চেষ্টা করা।
যাইহোক, মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রোজার জন্য বছরের মাত্র একটি দিন নির্ধারিত রাখা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতের পরিপন্থী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার রোজা রাখেন। এই দিনটি হাদিসে নির্দিষ্ট। এবং এই দিনটি বছরের প্রতি সপ্তাহে বিদ্যমান।
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে মানুষ ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করছে এবং এর জন্য মাহফিলের আয়োজন করছে তা সবই বিদআত এবং নাযাইজ। মুসলমানদের আনন্দ করার জন্য ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা ছাড়া আর কোন ঈদ নেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।” [সূরা আম্বিয়া : ১০৭] অন্যান্য মানুষের জন্ম ও মৃত্যু কোথায়? সাহাবীগণ কোথায় ছিলেন? তাদের পরবর্তী ভালো মানুষ কোথায় ছিল? এই কাজ থেকে ? তাদের কারো কাছ থেকে এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না যে তারা সপ্তাহের যে কোন দিন, অথবা মাসের যে কোন দিন, অথবা বছরের যে কোন দিন, অথবা তাদের জন্মদিন উপলক্ষে কোন বিশেষ দিনে ঈদ পালন করেছে।
নবী রাসূলুল্লাহ (সঃ) ব্যতীত যদি অন্য কারো জন্ম দিন উপলক্ষে সিয়াম পালন করা সাওয়াবের কাজ হতো, তাহলে আমাদের পূর্বে তারাই এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন, যারা অন্যান্য সকল কল্যাণে আমাদের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। তারা যেহেতু তা করেননি, এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, এসব আমল বিদআত এবং এর উপর আমল করা বৈধ নয়। আল্লাহ ভাল জানেন।