দুরুদ শরীফ

দুরুদ একটি ফার্সি শব্দ যার অর্থ: আল্লাহর কাছে রহমত, আশীর্বাদ ও শান্তির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য প্রার্থনা করা। অনেকেই সব সময় পড়ার জন্য কিছু ‘সহীহ দুরুদ শরীফ’ জানতে চান। নীচে আমরা আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ কিছু সহীহ দুরুদ শরীফ বর্ণনা করছি। উল্লেখ্য যে আমরা উচ্চারণের জন্য আমাদের নিজস্ব নিয়ম অনুসরণ করি। মনে রাখবেন, আরবি, বাংলা উচ্চারণ দেখে কুরআনের আয়াত, দুআ বা দুরুদ শরীফ কখনই সঠিকভাবে পড়া যায় না। এজন্য আপনি সবসময় আরবি থেকে পড়বেন। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বাংলা উচ্চারণের সাহায্য নিন। কিন্তু শুধুমাত্র বাংলা উচ্চারণ মুখস্থ করলেই চলবে না।

দুরুদ শরীফ

 

 

দুরুদ শরীফ

সর্বোত্তম দুরূদ হল দুরূদে ইব্রাহীম, যা আমরা সবাই নামাজে পড়ি। অনেকে প্রচলিত কিছু ওজিফার বইয়ে লিখিত এই বানোয়াট দুরূদগুলি (যেমন দুরূদের হাজারী, দুরুদে লাখী, দুরুদে নারিয়া, দুরুদে আকবর ইত্যাদি) পড়ে এবং যখন তারা তাদের মিথ্যা ফজিলতের কথা শুনে, তখন তারা মনে করে যে দুরূদে ইব্রাহিম পাঠ করা কম সওয়াব। তাই তারা দুরূদে ইব্রাহীম ব্যতীত ওযিফার কিতাবে লিখিত বানোয়াট ও বিদআতি দুরূদ পড়তে থাকেন। অথচ দুরূদে ইব্রাহীম পাঠের সমান সওয়াব ও ফজিলত অন্য কোনো দুরূদ পাঠের মাধ্যমে সম্ভব নয়। নিন্মে দুরুদে ইব্রাহীম দেওয়া হলঃ

দুরুদে ইব্রাহীম- ০১

আরবিঃ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

আরবি উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আ-লি মুহা’ম্মাদ, কামা সল্লাইতা আ’লা ইবরাহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হা’মীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আলি মুহা’ম্মাদ, কামা বা-রাকতা আ’লা ইব্রাহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রাহীম। ইন্নাকা হা’মীদুম মাজীদ।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারের প্রতি শান্তি অবতীর্ণ করুন, যেমন আপনি ইব্রাহীম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি শান্তি অবতীর্ণ করেছিলেন, নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারের প্রতি বরকত দান করুন, যেমন আপনি ইব্রাহিম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি বরকত দান করেছিলেন, নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান। (সহীহ বুখারীঃ ৩৩৭০, সহীহ মুসলিম)

 

দুরুদে ইব্রাহীম- ০২

দুরুদে ইব্রাহীম সহীহ হাদীসে বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে। এখানে প্রথমে যেইভাবে দেওয়া হয়েছে, এই বর্ণনা সবচাইতে বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া নীচের এই দুরুদটি সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। আপনারা সালাতের ভেতরে বা বাহিরে, যেকোন সময়ে এটা পড়তে পারেন।

আরবিঃ اللهم صل على محمد وعلى آل محمد وبارك على محمد وعلى آل محمد كما صليت وباركت على إبراهيم وآل إبراهيم إنك حميد مجيد

আরবি উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আ-লি মুহা’ম্মাদ, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আলি মুহা’ম্মাদ, কামা সল্লাইতা ওয়া বারাকতা আ’লা ইবরাহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হা’মীদুম মাজীদ।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারের প্রতি শান্তি অবতীর্ণ করুন এবং বরকত দান করুন, যেমনিভাবে আপনি ইব্রাহীম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি শান্তি ও বরকত দান করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান। (সুনানে আন-নাসায়ীঃ ৫৯/১৬৪, আত-তাহাবী)
.
নামাজের ভিতরে বা বাইরে যে কোন সময় উপরের দু’টি দুরূদ পড়তে পারেন। নিচে আমি আরো কয়েকটি ছোট দুরূদ উল্লেখ করছি যেগুলো নামাজে পাঠ করা যায় না, তবে নামাজের বাইরে ছোট দুরূদ হিসেবে পাঠ করা যায়।

 

ছোট দুরুদ শরীফ- ০১

সাহাবী উকবা ইবনে আমির (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে বসল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা আপনাকে সালাম কিভাবে জানাবো তা জানি, কিন্তু আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? আমাদেরকে তা বলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (কিছুক্ষণ) নীরব থাকলেন, এমনকি আমরা ভাবলাম যে, প্রশ্নকর্তা যদি প্রশ্ন না করতেন তাহলে অনেক ভালো হতো! তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমরা আমার উপর (দুরূদ) পাঠ করতে বলো:

 

আরবিঃ اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَبىّ الأُمِيِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ.

আরবি উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি আ’লা মুহা’ম্মাদিনিন-নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আ’লা আলি মুহা’ম্মাদিন কামা সল্লাইতা আ’লা ইবরাহীমা ওয়া আ’লা আলি ইবরাহীম, ইন্নাকা হা’মীদুম-মাজীদ।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি নিরক্ষর নবী মুহা’ম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে রহমত প্রেরণ কর, যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত। (ইসমাঈল কাযীঃ হাদীস নং ৫৯, হাদীসটি হাসান

 

ছোট দুরুদ শরীফ- ০২

যায়েদ ইবনে খারিজাহ (রা.) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (দু‘আ ও দুরূদ সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেন, “তোমরা আমার জন্য দোয়া কর এবং অনেক দোয়া করার চেষ্টা কর। আর আমার জন্য দুরুদ পড়ো এইভাবে-

 

আরবিঃ الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ .

আরবি উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি আ’লা মুহা’ম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আলি মু’হাম্মাদ।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহা’ম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর রহমত বর্ষণ কর। (সুনানে নাসায়ীঃ হাদীস নং-১২২৫, হাদীসটি সহীহ)

 

ছোট দুরুদ শরীফ- ০৩

আরবিঃ اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبَيِّنَا مُحَمَّدٍ
আরবি উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম আ’লা নাবিয়্যিনা মুহা’ম্মাদ।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।

 

ছোট দুরুদ শরীফ- ০৪

সবচাইতে ছোট যেই দুরুদ তা হলঃ

আরবিঃ صلى الله عليه وسلم
আরবি উচ্চারণঃ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম।
বাংলা অর্থঃ আল্লাহ তাঁর (মুহা’ম্মদের) প্রতি সালাত (দয়া) ও সালাম (শান্তি) বর্ষণ করুন।
.

দুরুদ শরীফের ফজিলত

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে দশবার ও বিকালে দশবার আমার উপর দরূদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশে সৌভাগ্যবান হবে। ইমাম তাবরানী হাদীসটি দুটি সনদে সংকলন করেছেন, যার একটি সনদ হাসান।

দরুদ শরীফ পাঠ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং প্রিয় হাবীব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) এবং আমার ফেরেশতারা দরূদ পাঠ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাম পাঠাই; হে ঈমানদারগণ! তার প্রতি দরূদ পাঠ কর এবং সালাম পাঠাও। ‘

পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি হাদিস শরিফে দরুদ শরিফ পাঠের গুরুত্ব ও বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। দরুদ শরীফ পাঠে অসীম সওয়াব, রহমত, বরকত পাওয়া যায়। প্রিয় নবী (সাঃ) এর নাম শুনলে দরূদ শরীফ পাঠ করা ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম মুবারক শুনে এ দরূদ পড়া ওয়াজিব। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাম শুনে তাঁর উপর দরুদ না পড়লে অবশ্যই গুনাহগার হবেন। দরুদ শরীফের ফজিলত কতই না মহান, যাহার মর্তবার শেষ নাই!! হজরত রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গী হওয়ার সবচেয়ে অধিক উপযুক্ত ওই ব্যক্তি যে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠ করে। (তিরমিজী শরিফ)।সর্বোত্তম দরূদ হলো দরূদে ইব্রাহিম। দোয়া গৃহীত হওয়ার জন্য দরুদ শরীফ পাঠ করা খুবই জরুরী। তাই আমাদের সবার উচিৎ বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করা তাহলে আমরা আখেরাতে আমাদের প্রিয় নবীর শাফায়ত পাবো।

আল্লাহ তায়ালা আমি সহ আমাদের সকলকে বেশি বেশি আমল করার তৈফিক দান করুন। আমিন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!