ঈমান কি

ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি রয়েছে। ঈমান তাদের মধ্যে প্রথম এবং অন্যতম। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি মহান নেয়ামত। এটি ছাড়া কোন নেক আমল গৃহীত হয় না। ঈমান একজন বিশ্বাসীর সবচেয়ে বড় অমূল্য সম্পদ। কারণ এটি মানবতার মুক্তির একমাত্র পদক্ষেপ। তাই আমাদের সকলের উচিত প্রকৃত বিশ্বাসী হওয়া। আসুন জেনে নেই ঈমান কি এবং তার খুঁটিনাটি বিষয় সমূহ।

 

ঈমান কি

ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস করা, নিরাপত্তা দেওয়া ইত্যাদি। যে কোন ধরনের বিশ্বাস কেই ঈমান বলা যেতে পারে চাই তা তাওহীদের বিশ্বাস বা শিরকি বিশ্বাস। কিন্তু পারিভাষিক অর্থে শুধু তাওহীদের বিশ্বাসকেই ইমান বলা হয়। শরিয়তের পরিভাষায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) – এর প্রতি মন থেকে যা আনা হয়েছে এবং তার উপর সমস্ত হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করাকে ঈমান বলে।

ঈমান হল-
অন্তরে বিশ্বাস করা
মুখে স্বীকার করা
এবং সে অনুযায়ী অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা কাজে বাস্তবায়ন করা
যা সৎ কাজের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং পাপ কাজের মাধ্যমে হ্রাস পায়।
যার বিশ্বাস আছে সেই ঈমানদার।

ঈমানদার হলেন সেই ব্যক্তি যিনি বিশ্বাসের পূর্ণতা অর্জন করেন তার হৃদয়ের দৃঢ় প্রত্যয় দিয়ে এবং তার উপর আমল করে। অতএব, একজন নিখুঁত ঈমানদার হলেন সেই ব্যক্তি যিনি শরিয়তের বিষয়গুলিতে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেন এবং তাদের মৌখিক স্বীকৃতি দিয়ে বাস্তব জীবনে সেগুলি অনুশীলন করেন।

ঈমান কি

যেসব বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হয়

ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা প্রশাখা রয়েছে। ৭ টি মূল বিষয়ে পূর্ণ বিশ্বাস থাকা বাধ্যতামূলক। এইগুলো হল –

১. আল্লাহর উপর
২. ফেরেশতাগনের উপর
৩. আসমানি কিতাবের উপর
৪. নবী-রাসূলগনের উপর
৫. পরকাল বা আখিরাতের উপর
৬. ভাগ্য বা নিয়তির উপর এবং
৭. মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এর উপর।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা রয়েছে, যার মধ্যে সর্বোত্তম হল এই সত্যের সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং সর্বনিম্ন শাখাটি হল কষ্ট দায়ক জিনিস রাস্তা থেকে অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। “(বুখারী ও মুসলিম)

 

ইসলামে ঈমানের গুরুত্ব

ইসলামে ঈমানের গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে কিছু মূল বিষয় রয়েছে:

১. এটি ছাড়া মানুষের জীবন মূল্যহীন। কারণ ঈমানই ইসলামের মূল ভিত্তি।
২. ইসলামে ঈমানের গুরুত্ব অপরিসীম কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমগ্র মানব জাতিকে সৃষ্টির পর তাঁর প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দিয়েছেন।
৩. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
৪. এটি ছাড়া কোন আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই পরকালের জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম।
৫. বিশ্বাস মানবতার সিঁড়ি। কারণ এটি ছাড়া কেউ তার নিজের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারে না।
৬. আল্লাহকে বিশ্বাস না করে কেউ সফল হতে পারে না। এ দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি মানবতার চালিকা শক্তি।

 

 

যে কারণে ঈমান বাড়ে বা কমে

যেহেতু বিশ্বাস হল উল্লেখিত বিষয়ের সমষ্টি, তাই বিশ্বাসের বৃদ্ধি এবং হ্রাস হওয়া স্বাভাবিক। কারণ অন্তরের বিশ্বাসেরও ভিন্নতা রয়েছে। কোন খবর শোনার পর কিছু বিশ্বাস করা এবং নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করা একই জিনিস নয়। একইভাবে একজন ব্যক্তির দেওয়া সংবাদ বিশ্বাস করা অন্য দুই ব্যক্তির সংবাদ বিশ্বাস করার মতো নয়। এজন্য হযরত ইব্রাহিম (আঃ) বললেন, ‘হে আমার রব! আমাকে দেখান কিভাবে আপনি মৃতদের জীবিত করেন। তিনি বললেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? হযরত ইব্রাহিম (আঃ) বললেন, বিশ্বাস তো অবশ্যই করি। কিন্তু আমার অন্তর যাতে পরিতৃপ্ত হয় এ জন্য আমি স্বচক্ষে দেখতে চাই। ’ -সূরা বাকারা: ২৬০

অতএব, হৃদয়ের বিশ্বাস এবং এর স্থায়িত্ব এবং নির্মলতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। মানুষ এটাও তাদের হৃদয়ে সহজে অনুভব করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোন ব্যক্তি কোন ইসলামী অনুষ্ঠান বা ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেয় এবং জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা শোনে, তখন তার ঈমান বৃদ্ধি পায়। এসবের আলোচনায় মনে হয় তিনি জান্নাত-জাহান্নামকে নিজের চোখে দেখছেন। পরে, যখন তিনি সভা ত্যাগ করেন, অবহেলা আসে এবং এই বিশ্বাস ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।

এভাবে মুখে বলার কারণে ঈমানও বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ জিকির। কারণ যে ব্যক্তি দশবার আল্লাহ তিলাওয়াত করে সে একশবার তেলাওয়াতকারীর সমান নয়। দ্বিতীয় ব্যক্তির সময়কাল প্রথম ব্যক্তির সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।

সুতরাং, যিনি নিখুঁত উপাসনা করেন এবং যিনি অসম্পূর্ণভাবে করেন, তারা উভয় সমান নয়। পণ্ডিতদের মতে, কর্মের মাধ্যমে বিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়। যে বেশি কাজ করে, তার বিশ্বাস যে কম কাজ করে তার চেয়ে বেশি।

কুরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, মানুষের ঈমান বাড়ে এবং কমে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- ঈমান বৃদ্ধির কারণ কি? এ ব্যাপারে ইসলামী পণ্ডিতরা বলেছেন-

ঈমান বৃদ্ধির উপায়

প্রথম উপায়: আল্লাহর সমস্ত নাম এবং গুণাবলীর সাথে আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। এই বিষয়ের জ্ঞান যত বাড়বে, তার বিশ্বাসও তত বাড়বে। যেসব আলেম এসব বিষয় সম্পর্কে বেশি জ্ঞান রাখেন তারা অজ্ঞ আলেমদের তুলনায় বিশ্বাসে শক্তিশালী।

দ্বিতীয় উপায়: দ্বিতীয় উপায় হল আল্লাহর নিদর্শনগুলি অধ্যয়ন করা এবং তিনি মানবজাতিকে যে জীবন দিয়েছেন তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা। একজন ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে যত বেশি চিন্তা করে, তার বিশ্বাস তত বৃদ্ধি পায়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ কোরআনে বলেন, ‘বিশ্বাসীদের জন্য পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও। তোমরা কি অনুধাবন করবে না?’ -সূরা যারিয়াত: ২০

তৃতীয় উপায়: সৎ কাজ করা। বেশি বেশি সৎ কাজ করার কারণে বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এই ধরনের সৎ কাজ হতে পারে কথার মাধ্যমে অথবা কাজের মাধ্যমে।

 

ঈমানের জোর কমে যাওয়ার কারণ

প্রথম কারণ: আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে অজ্ঞতা ঈমানের পতনের অন্যতম কারণ। কারণ এই বিষয়ে মানুষের যত কম জ্ঞান থাকবে, তাদের বিশ্বাস তত কম হবে।

দ্বিতীয় কারণ: সৃষ্টি জগৎ, শরিয়ত ও আল্লাহর আয়াত নিয়ে গবেষণা করা থেকে বিরত থাকা। কারণ আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা না করা বিশ্বাসের অভাবের অন্যতম কারণ।

তৃতীয় কারণ: পাপ করা। কারণ পাপ করা হৃদয় ও বিশ্বাসের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে।

চতুর্থ কারণ: সৎ কাজ না করা ঈমানের পতনের অন্যতম কারণ। কিন্তু যদি সে কোন কারণ ছাড়াই কোন বাধ্যতামূলক কাজ ছেড়ে দেয়, তাহলে তার বিশ্বাস কমার সাথে সাথে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। অবশ্যই, যদি আপনি একটি গ্রহণযোগ্য কারণে ওয়াজিব ছেড়ে দেন বা যদি আপনি এমন কাজ ছেড়ে দেন যা ওয়াজিব নয়, তাহলে বিশ্বাসের অভাব হবে – কিন্তু আপনি শাস্তির মুখোমুখি হবেন না।

 

এজন্য হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জ্ঞান ও দ্বীনের দিক থেকে নারীকে অপূর্ণ বলেছেন। এর কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন, তাদের যখন মাসিক হয়- তখন তারা নামাজ-রোজা থেকে বিরত থাকে। অথচ মাসিক অবস্থায় নামাজ-রোজা থেকে বিরত থাকার কারণে তাদেরকে দোষারূপ করা হয় না।বরং তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেহেতু তাদের আমল পুরুষদের তুলনায় কম, তাই তাদের বিশ্বাস পুরুষদের তুলনায় কম।

আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে প্রকৃত ঈমান কি তা বুঝার ও মানার তৈফিক দান করুন অর্থাৎ আমি সহ পুরা বিশ্ব বাসিকে খাঁটি ঈমানদার হিসেবে কবুল আর মন্জুর করে নেক। আমিন।

 

iman ki?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!