বৈধ ভাবে উপার্জন করাও একটি ইবাদত। ঘুষ গ্রহণ করে অন্যায়ভাবে উপার্জন করা বৈধ নয়, তা হারাম। আল্লাহ তোমাদেরকে অবৈধ উপায়ে উপার্জন করা হারাম করেছেন। কারণ ঘুষ গ্রহণও সুদ, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচারের মতো হারাম ও অবৈধ কাজ। যার চূড়ান্ত পরিণতি জাহান্নামের কঠিন শাস্তি। ঘুষ কি? ঘুষ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা সমূহ নিন্মে আলোচনা করা হল।
ঘুষ কি
ঘুষ হল ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য একটি মারাত্মক ব্যাধি। ঘুষ একটি নিম্নমানের লেনদেন। এ বিশৃঙ্খলা ও হীন পথ থেকে বিরত থাকাই ইসলামের নির্দেশ। ঘুষ গ্রহণের মারাত্মক খারাপ পরিণতি রয়েছে। আল্লাহ কুরআনে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনকে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং কোনো বিচারককে ঘুষ দিও না যাতে জেনেশুনে মানুষের কিছু সম্পদ ইচ্ছাকৃত ভাবে গ্রাস করা যায়। (সূরা বাকারা: আয়াত- ১৮৮)
ঘুষের কারণে সমাজ মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক রোগে আক্রান্ত। কারণ সমাজে ঘুষের প্রচলন মানুষের নৈতিকতা বিনষ্ট করে। ঘুষের মাধ্যমে সকল অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকান্ড চরম সুযোগ সৃষ্টি করে। ফলে মানুষের প্রকৃত ঈমান উঠে যায় এবং তা মানুষের বাড়াবাড়ির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ঘুষ লেনদেনের ক্ষতিকর দিক
ঘুষ দেওয়া এবং নেওয়ার অনেক অসুবিধা রয়েছে। ঘুষের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল এটি চরিত্রের নিকৃষ্টতা ও হীনমন্যতা প্রকাশ করে। ঘুষের সাথে জড়িতদের মান-সম্মান বলতে কিছুই থাকে না। এসব বিষয় প্রকাশ্যে আসলে প্রভাবশালী ব্যক্তিও সমাজের কাছে তুচ্ছ হয়। আর আখেরাতের ক্ষতি তো আছেই।
যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে গোপনে কারো কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করে সে কখনই বড় হতে পারে না। আল্লাহর কাছে ঘুষের কোনো মূল্য নেই।
ঘুষের হারাম উপার্জন এবং এ টাকা দিয়ে খাবার খাওয়া ব্যক্তির কোনো ইবাদতই কবুল হয় না। ঘুষের টাকায় দেওয়া যাকাত ও দান কবুল হয় না। ঘুষের সাথে জড়িত ব্যক্তির কোন নেক আমল ও দোয়া কবুল হয় না। এমনকি হজ ও ওমরাহও কবুল হয় না। যে ব্যক্তি ঘুষের সম্পদ রেখে মৃত্যুবরণ করে তার জন্য এই সম্পদ হয়ে যায় জাহান্নামের অন্যতম উপকরণ।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
‘তাদের অনেককেই তুমি দেখবে পাপে, সীমালংঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে তৎপর; তারা যা করে নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬২)
তাফসিরে ইবনে কাসিরের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘুষের সাথে জড়িত ব্যক্তি একজন অন্যায়কারী জালেম এবং আল্লাহর কাছে সে অপরাধী বলে গণ্য হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষের নিন্দা করেছেন এবং যারা ঘুষ দেয় তাদের অভিসম্পাত করেছেন।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
– হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও গ্রহণকারীকে অভিশাপ দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমাদ)
– হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) আরও বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঘুষের বিনিময়কারী উভয়েই জাহান্নামে যাবে।’ (তাবরানি)
ঘুষ দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে
দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিকারী সমাজে ঘুষ একটি মারাত্মক কাজ। হাদীসের বর্ণনা থেকে এটা স্পষ্ট। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখন কোনো জাতির মধ্যে সুদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে; তখন তারা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে। আর যখন তাদের মধ্যে ঘুষের আধিক্য থাকে তখন তারা শত্রুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
ঘুষে সহযোগিতার কুফল
ঘুষে সহযোগী দালালরাও অভিশপ্ত। ইসলামের দৃষ্টিতে ঘুষখোররা যেভাবে অভিশপ্ত। একইভাবে ঘুষ লেনদেনের দালালরাও অভিশপ্ত।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
– হজরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও তাদের দালালদের অভিসম্পাত করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ)
– হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এমনকি বলেছেন যে, বিচারকের জন্য কারো কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া কুফরের সমতুল্য। আর সাধারণ মানুষের জন্য একে অপরের সাথে ঘুষ বাণিজ্য করা হারাম, এটা অপবিত্র উপার্জন। (তাবরানী)
তাই মুমিন মুসলমানকে ঘুষ থেকে বিরত থাকতে হবে। ঘুষের কাজে অন্যদের সহযোগিতা না করা। কারো জন্য ঘুষ না নেওয়া। এই মারাত্মক ব্যাধি ও ক্ষত থেকে বেঁচে থাকাই ঈমানের অনিবার্য দাবি। আজ আমরা জানলাম ঘুষ কি? ঘুষ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা সমূহ কি?
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘুষের কুফল ও খারাপ থেকে রক্ষা করার তাওফীক দান করুন। এবং নিজেকে হালালের উপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।