ঋতু পরিবর্তন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এক বিশেষ নিদর্শন। ঋতুগুলোর মধ্যে শীত ও গ্রীষ্মের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের কাজকর্ম ও অভ্যাসের পরিবর্তন আসে। পরিবর্তন আসে মন এবং হৃদয়ে। এমনই একটি পরিবর্তিত পদ্ধতি হচ্ছে তায়াম্মুম এর নিয়ম। আল্লাহ বলেন, ‘যেহেতু কুরাইশদের আসক্তি আছে, তাদের আসক্তি শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণের। অতএব তারা এই (কাবা) গৃহের প্রভুর ইবাদত করুক। যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দিয়েছেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা দান করেছেন।’ (সুরা-১০৬ কুরাইশ, আয়াত: ১-৪)
মানব সভ্যতার উপর পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব অনস্বীকার্য। ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম। ইসলাম একটি পুর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামের বিধান সব সময় প্রযোজ্য। ইসলামের বিধান মানব জীবনের সকল পরিস্থিতিতে উপযোগী। ইসলামের নিয়মাবলী সহজ, যৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত। মানবকল্যাণই ইসলামী আইনের উদ্দেশ্য। আল্লাহ মানুষের ক্ষতি বা কষ্ট হয় এমন কিছুর অনুমোদন করেন না। কুরআনের ভাষায়, “আল্লাহ কারো উপর তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।” (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৮৬)
ইসলামী শরীয়তের বিধানের প্রধান ও মৌলিক উদ্দেশ্য হল জীবন রক্ষা, সম্পত্তির সুরক্ষা, জ্ঞানের সুরক্ষা, মানব জাতির পবিত্রতা রক্ষা এবং সত্য ধর্মের সুরক্ষা। শরীয়তের বিধানগুলি সহনীয় এবং ব্যক্তির সামর্থ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োগ করতে হবে।
তায়াম্মুম
দৈহিক পবিত্রতা সাধারণত অজু এবং পানি দিয়ে গোসলের মাধ্যমে অর্জিত হয়। কিন্তু কেউ যদি পানি ব্যবহারে অক্ষম হয়, তাহলে তার জন্য একটি সহজ বিকল্প রয়েছে, আর তা হল- ‘তায়াম্মুম’। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “যদি তোমরা অসুস্থ হও, অথবা সফরে থাক, বা তোমাদের মধ্যে কেউ পায়খানা থেকে আসে, অথবা স্ত্রীর সাথে সহবাস করে, তখন যদি তোমার কাছে পানি না থাকে, তাহলে তুমি তায়াম্মুম করবে পবিত্র মাটি দ্বারা।” (সুরা-৫ মায়িদাহ, আয়াত: ৬)।
তায়াম্মুম কখন করা হয়
যখন পানি থাকে না বা এমন দূরত্বে যে পানির জন্য অপেক্ষা করলে নামাজের সময় পার হয়ে যাবে অথবা এমন কোন অসুখ বা সর্দি আছে যে পানি ব্যবহার করলে মৃত্যু বা বড় ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে অজু ও গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যাবে। উভয় ক্ষেত্রেই তায়াম্মুমের নিয়ম ও পদ্ধতি একই। তায়াম্মুম করে নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত, কাবা শরিফ প্রদক্ষিণ, ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল- সব ধরনের ইবাদত করা যায়। যেসব ইবাদতে অজু বা পবিত্রতা অপরিহার্য নয়, সেসব ইবাদতে কোনো সমস্যা ছাড়াই তায়াম্মুম প্রযোজ্য। যেমন সব সময় পবিত্র থাকা, পবিত্রতার সাথে ঘুমানো ইত্যাদি।
তায়াম্মুমে ফরজ তিনটি
মনে মনে পবিত্রতার নিয়ত বা ইচ্ছা করা, পুরো মুখমণ্ডল একবার মাসেহ করা এবং উভয় হাত কনুইসহ একবার মাসেহ করা। মহান আল্লাহর বাণী, ‘এবং মাটি দ্বারা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিতে চান না। বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।’(সুরা-৫ মায়িদাহ, আয়াত: ৬)।
তায়াম্মুমের সুন্নাত পদ্ধতি
প্রথমে পবিত্রতা কামনা করে, তারপর উভয় হাতের তালু পবিত্র মাটি বা মাটির জিনিসের উপর রেখে একটু এদিক-ওদিক নাড়িয়ে ভালো করে স্পর্শ নেওয়া। তারপর দুই হাতের তালু দিয়ে পুরো মুখমণ্ডল মাসেহ করুন। আবার উভয় হাতের তালু পবিত্র মাটির বা মাটির পাত্রের উপর আগের মত রেখে একটু সামনে–পেছনে নেড়ে ভালো করে স্পর্শ নেওয়া এবং বাম হাতের তালু ডান হাতের কনুই পর্যন্ত এবং ডান হাতের তালু দ্বারা বাঁ হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা।
যে সকল বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করা যায়
মাটি বা মাটির সমজাতীয় জিনিষ দ্বারা তায়াম্মুম করা যেতে পারে, যা সাধারণত আগুনে পুড়ে যায় না বা গলে যায় না। যেমন কাদামাটি, পোড়ামাটি, পাথর, চুনাপাথর, কাঁচা ইট, পাকা ইট, টাইলস, সিমেন্ট এবং ইট, সিমেন্ট এবং পাথরের মেঝে বা দেয়াল ইত্যাদি। তবে, টাইলসের উপর রাসায়নিক আবরণ থাকলে এবং দেয়াল যদি ডিস্টেম্পার দিয়ে আঁকা হয় বা রাসায়নিক কোন আবরণ থাকে তবে তায়াম্মুম হবে না। উল্লেখ্য, তায়াম্মুমের জন্য ধুলাবালুর প্রয়োজন নেই; বরং হাতে বেশি ধুলাবালু লাগলে মাসেহ করার আগে তা ঝেড়ে ফেলতে হবে।
তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ
প্রত্যেক নামাযের সময় নতুন করে তায়াম্মুম করতে হবে। অজু ভঙ্গের সাতটি কারণ রয়েছে, আর তায়াম্মুম ভাঙ্গার কারণও তাই। সে সকল কারণে তায়াম্মুমও নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া পানি ব্যবহারের সক্ষমতা আসলে তায়াম্মুম অকার্যকর হয়ে যাবে। মনে রাখবেন, কঠিন সমস্যা ছাড়া তায়াম্মুম গ্রহণযোগ্য নয়। (বুখারী শরীফ, প্রথম খন্ড, তায়াম্মুম অধ্যায়, পৃষ্ঠা: ১৮৫-১৯৬, হাদিস: ৩২৭-৩৪০)
উপরিউক্ত কারণে তায়াম্মুম করা যায়। উক্ত আলোচনায় তায়াম্মুমের পদ্ধতি, ফরজ, সুন্নত ও তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ সমূহ আলোচনা করা হল। আশা করি তায়াম্মুম সংক্রান্ত উক্ত আলোচনা আপনাদের পবিত্রতার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামের সকল বিধি নিষেধ যথাযথ ভাবে পালন করার তৈফিক দান করুন। আমিন।।