তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদের নামায সুন্নাত। নবী (সঃ) এ নামাজ নিয়মিতভাবে পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা:) কে তা নিয়মিত পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। যেহেতু উম্মতকে নবীর পায়রবি করার হুকুম করা হয়েছে সেজন্য তাহাজ্জুদের এ তাকীদ পরােক্ষভাবে গােটা উম্মতের জন্য। কোরআন পাকে তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য বিশেষ তাকীদ করা হয়েছে। “এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে থাক। তােমার জন্য আল্লাহর অতিরিক্ত ফযল ও করম। শীঘ্রই আল্লাহ তােমাকে উভয় জগতে সর্বোচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করবেন।” | (বনী ইসরাইলঃ ৭৯) আজ আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে এখানে আলোচনা করবো।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

হুযুর পাক (সাঃ) বলেন ফরজ নামাজসমূহের পর সর্বোত্তম নামাজ হলাে ঐ নামাজ যা গভীর রাতে পড়া হয়। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ। হুযুর (সাঃ) আরাে বলেন, তাহাজ্জুদ পড়া তােমাদের জন্য জরুরী এটা হচ্ছে তােমাদের পূর্ববর্তী নেক লােকদের অভ্যাস। আর তােমাদের প্রভুর নৈকট্য লাভের পন্থা, অন্যায়, অশ্লীলতা থেকে বাধা দান কারী, গােনাহ মাফের উপায় এবং শরীর হতে রােগ দূরকারী।

যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদের আমল করে কোরআনে তাদেরকে মুহসীন ও মুত্তাকী নামে অবহিত করে জান্নাত দেওয়ার ওয়াদা করা হয়েছে।

“নিশ্চয়ই মুত্তাকীগন বাগ-বাগিচায় এবং ঝর্নার আনন্দ উপভােগ করতে থাকবে এবং যে যে নিয়ামত তাদের প্রভু পরােয়ারদিগার তাদেরকে দিতে থাকবেন সেগুলাে তারা গ্রহণ করতে থাকবেন। (কারণ) নিঃসন্দেহে তারা এর পূর্বে (দুনিয়ার জীবনে) মুহসেনীন (বড় নেক্কার) ছিল। তারা রাতের খুব অল্প অংশেই ঘুমাতো এবং শেষ রাতে ইস্তেগফার করতাে।” (যারিয়াতঃ ১৫-১৮) 

সত্যিকার অর্থে তাহাজ্জুদ নামায চরিত্র ও মনকে নির্মল করতে এবং সত্যপথে অবিচল থাকার জন্যে কার্যকর ও অপরিহার্য পন্থা।

“রাতে ঘুম থেকে ওঠে মনকে সানিত করার বেশী কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ এবং যিকির একেবারেই যথার্থ।” (সূরা মুয্যাম্মিল : ৬) 

এসব বান্দাহদেরকে আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহ বলেছেন এবং নেকী ও ঈমানদারীর সাক্ষ্য দিয়েছেন। (সুবহানাল্লাহ) 

“আলাহর প্রিয় বান্দাহ তারা যারা তাদের পরোয়ারদেগারের দরবারে সেজদা করে এবং দাড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়”। (সূরা ফুরকান : ৬৩-৬৪)

মুসলমানদের বিজয়ের বুনিয়াদী কারণগুলাের মধ্যে একটি যে, তারা রাতের শেষ অংশে আলাহর সান্নিধ্যে দাড়িয়ে রাত কাটিয়ে দিতেন। 

“এসৰ লােক অগ্নিপরীক্ষায় অচল, অটল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত, আল্লাহর পথে মাল উৎসর্গকারী এবং রাতের প্রহরে আলাহর কাছে ভুলত্রুটির জন্যে ক্ষমা প্রার্থী”। (সূরা আলে ইমরান : ১৭)

হযরত আবদুল্লাহ বিন সালাম (রা:) বলেন, নবী (সা:) মদীনায় তাশরীফ আনেন তখন প্রথম যে কথাগুলাে প্রথম বলেন তা হলাে : 

“হে লােকগণ! ইসলামের প্রচার ও প্রসার কর, মানুষের আহার দান কর, আত্মীয়তা অটুট রাখ, আর যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকবে তখন তােমরা রাতে নামায পড়তে যাও। তাহলে তােমরা নিরাপদে বেহেশতে যাবে”। (ইবনে মাজাহ, তিরমিযী)

হযরত সালমান ফারসী (রা:) বলেন, নবী (সা:) বলেন “তাহাজ্জুদ নামাজের ব্যবস্থাপনা কর, এ হলাে নেক লােকের স্বভাব, এ তােমাদেরকে আল্লাহর নিকট করে দিবে, গুনাহগুলাে মিটিয়ে দিবে, গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে, শরীর থেকে রােগ দূর করবে।” 

তাহাজ্জুদের অর্থ হলাে ঘুম থেকে উঠা। কোরআনে তাহাজ্জুদের যে তাকীদ করা হয়েছে তার অর্থ হলাে রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পর উঠে নামায পড়া। তাহাজ্জুদের মসনুন সময় হচ্ছে, ঈশার নামাযের পর মানুষ ঘুমাবে তারপর অর্ধেক রাতের পর উঠে নামায পড়বে।

নবী (সা:) কখনাে মধ্যরাতে, কখনাে তার কিছু অংশ আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠে  আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের ৯০-৯৪ নং আয়াত পড়তেন। তারপর মেসওয়াক ও ওজু করে নামায পড়তেন।

তাহাজ্জুদের নামাজ কত রাকাত পড়তে হয় 

-বােখারী ও মুসলিম শরিফে আম্মাজান আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযুর (সাঃ) রমজান ও গায়ের রমজানে ১১ রাকাতের বেশী পড়তেন না। উক্ত ১১ রাকাতের মধ্যে হানাফী মাযহাব মতে তিন রাকাত হতো বিতর আর বাকী আট রাকাত তাহাজ্জুদ। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত অপর এক রেওয়ায়েতে দেখা যায় যে এই সংখ্যা কখনাে কখনাে চার বা ছয় রাকাতে এসে দাড়াত । সুতরাং যার যার সুবিধামত দুই রাকাত থেকে নিয়ে আট রাকাত পর্যন্ত পড়া যেতে পারে। কেউ বেশী পড়তে চাইলে তারও অবকাশ আছে।

তাহাজ্জুদের নামাযের নিয়ত

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকআতাই ছালাতিত তাহাজ্জুদি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। 

বাংলা নিয়তঃ আমি আল্লাহর জন্য কেবলামুখী হইয়া তাহাজ্জুদের দুই রাকআত নামায আদায় করিতেছি, আল্লাহু আকবার।

 

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার উপযুক্ত সময়

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) রাত যখন গভীর হত তখনই তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। তিনি খুব কম সময়ই তাহাজ্জুদের নামাজ বাদ দিতেন। প্রায় প্রতিদিনই তিনি তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। এবং খুব লম্বা সূরা দিয়ে তিনি তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। সে হিসেবে তাহাজ্জুদ নামাজ এর গুরুত্ব অপরিসীম। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে মধ্যরাত বা গভীর রাত। অর্থাৎ রাত ১২টার পর থেকে সুবহে্ সাদেক এর আগ পর্যন্ত।

 

পরিশেষে বলতে চাই, তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব, ব্যাখ্যা বা তাৎপর্য বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) প্রায় প্রতি রাতেই উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে তাহাজ্জুদের নামাজ। তাই আমরা বেশি বেশি করে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবো। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এবং এর গুরুত্ব, ব্যাখ্যা বা তাৎপর্য সকলের কাছে প্রচারের মাধ্যমে অশেষ নেকী হাসিল করবো। আল্লাহ আমাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুক। আমিন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!