সূরা ইখলাস পবিত্র কোরআনের ১১২ তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৪ এবং রূকুর সংখ্যা ১টি এবং এর শব্দ সংখ্যা ১৫ ও অক্ষর ৪৮। এই সূরায় রয়েছে আল্লাহর অস্তিত্ব এবং সারাংশের সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা। এটি কুরআনের সবচেয়ে ছোট সূরা হিসেবেও বিবেচিত। গুরুত্বের দিক থেকে এই সূরাটি পবিত্র কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান বলা হয়েছে।
সূরা ইখলাসের ফজিলত অনেক। যিনি সুরা ইখলাসকে ভালবাসবেন তিনি জান্নাতে যাবেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে প্রার্থনা করল, আমি এই সূরাটিকে ভালোবাসি, রাসুল (সাঃ) বললেন, সুরা ইখলাসের প্রতি ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (মুসনাদ আহমদ)
বর্ণিত হয়েছে যে, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, ‘ তোমরা সবাই একসাথ হও, আমি তোমাদের কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত শুনাব। এরপর রাসুল (সাঃ) সূরা ইখলাস পাঠ করলেন। (মুসলিম, তিরমিযী)
এই সূরাটি নিয়মিত পাঠ করলে মহান আল্লাহ আমাদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। হাদিস অনুসারে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল এবং বিকালে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করবে তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য ইহাই যথেষ্ট। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী)
হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন বিছানায় যেতেন, তখন হাতের তালু একসাথ করতেন, তারপর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও নাস পাঠ করতেন। তারপর তিনি দুই হাতের তালু দিয়ে শরীরের উপর যতটা সম্ভব হাত নাড়তেন। তিনি এটি তিনবার করতেন। (বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী)
সূরা ইখলাস
আরবিঃ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
আরবি উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বাংলা অনুবাদঃ পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
(১)
আরবিঃ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ
আরবি উচ্চারণঃ কুল্ হুওয়াল্লা-হু আহাদ্।
বাংলা অনুবাদঃ বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়।
(২)
আরবিঃ اللَّهُ الصَّمَد
আরবি উচ্চারণঃ আল্লা-হুচ্ছমাদ্।
বাংলা অনুবাদঃ আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী।
(৩)
আরবিঃ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
আরবি উচ্চারণঃ লাম্ ইয়ালিদ্ অলাম্ ইয়ূলাদ্।
বাংলা অনুবাদঃ তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি।
(৪)
আরবিঃ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَد
আরবি উচ্চারণঃ অলাম্ ইয়া কুল্লাহূ কুফুওয়ান্ আহাদ্।
বাংলা অনুবাদঃ আর তাঁর কোনো সমকক্ষও নেই।
সূরা ইখলাস এর শানে নুযুল
মুশরিকরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তায়ালার বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। যার জবাবে এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছিল। আরেকটি রীতি অনুসারে, মদিনার ইহুদিরা আরো প্রশ্ন করেছিল যে, আল্লাহ তায়ালা কি দিয়ে তৈরি, সোনা-রূপা বা অন্য কিছু? এর প্রতিক্রিয়ায় সূরাটি নাযিল হয়েছে।
সূরা ইখলাসের ফজিলত
যদি সূরা ইখলাসের অর্থ ও তাৎপর্য বোঝা যায়, তাহলে আল্লাহর গুণাবলী সমূহ বান্দার হৃদয়ে গেঁথে যাবে। আমি মনে করি সেই ব্যক্তি শিরক মুক্ত ঈমানের অধিকারী হবে। এবং তার বিনিময়ে সে দুনিয়া ও আখিরাতে অনেক সুবিধা ও ফজিলত লাভ করতে সক্ষম হবে।
একবার এক সাহাবী রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সূরা ইখলাসকে ভালোবাসি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এই ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ “(বুখারী, তিরমিযী)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে ২০০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে তার ৫০ বছরের পাপ ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যদি সে ঋণগ্রস্থ হন, তবে তা ক্ষমা করা হবে না। ‘(তিরমিযী)
হযরত সাহল ইবনে সাদ সাইয়্যেদ (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বর্ণনা করেছেন যে, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে দারিদ্র্যের অভিযোগ করেছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি যখন বাড়ি যাও, তখন সালাম দাও এবং একবার সূরা ইখলাস পাঠ কর। এটি করার ফলে তার দারিদ্রতা কিছুদিনের মধ্যে দূর হয়ে যায়। ‘(তাফসীর কুরতুবী)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল -সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে আর তা তাকে বিপদ-আপদ থেকে বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট।’ (ইবনে কাসীর)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে সূরা ইখলাস পাঠ করতে শুনলেন। তিনি বললেন, ‘এটা তার অধিকার।’ সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘তার অধিকার কী? তিনি উত্তরে বললেন, তার অধিকার জান্নাত। (মুসনাদ আহমদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সূরা ইখলাসের অর্থ ও তাৎপর্য বুঝে ধীরে ধীরে বিশ্বাস করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর একত্ব ও ক্ষমতার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ আমাদের হাদিসে ঘোষিত মর্যাদা ও পুণ্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমীন।