সূরা তীন পবিত্র কোরআন মাজিদের ৯৫ নাম্বার সূরা। এই সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ৮ টি। সূরা তীন এর বাংলা অর্থ- ডুমুর। সূরা তীন মাক্কায় অবতীর্ণ একটি সূরা ।
এই সূরার শুরুতে আঞ্জির (ডুমুর), জয়তুন (জলপাই), সিনাই পর্বত এবং মক্কা শহরের দোহাই দেওয়া হয়েছে। ডুমুর এবং জলপাই সে সময় আরবের দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফল ছিল; খাদ্য ও অর্থকরী ফসল হিসেবে এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সিনাই পর্বত হযরত মুসা (আঃ) এর স্মৃতিস্থল। আর মক্কা ছিল হযরত ইব্রাহিম ও ইসমাইল (আঃ) এর স্মৃতিবিজড়িত জায়গা। তদুপরি পবিত্র কাবার মর্যাদার কারণে শহরটিকে সে সময় নিরাপদ শহর হিসেবে বিবেচনা করা হতো; অধিবাসীরা যুদ্ধ ও লুণ্ঠনের ভয় থেকে মুক্ত ছিল। এসব কথা উল্লেখ করার পর বলা হয়, মানুষকে খুব সুন্দর আকারে সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু স্রষ্টা ও প্রভুকে বিশ্বাস না করলে এবং ভালো কাজ না করলে তাদের আবার নিচে নামানো হবে। তাছাড়া বিচারের দিন তাদেরও কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। পরিশেষে এটাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, মহান প্রভু কখনো কারো প্রতি অবিচার করবেন না; শুধুমাত্র ন্যায় বিচারই করবেন।
সূরা তীন
(১)
আরবিঃ وَٱلتِّينِ وَٱلزَّيْتُونِ
আরবি উচ্চারণঃ ওয়াততীন ওয়াঝঝাইতূন।
বাংলা অনুবাদঃ শপথ আঞ্জীর (ডুমুর) ও যয়তুনের।
(২)
আরবিঃ وَطُورِ سِينِينَ
আরবি উচ্চারণঃ ওয়া তূরি ছীনীন।
বাংলা অনুবাদঃ এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের।
(৩)
আরবিঃ وَهَٰذَا ٱلْبَلَدِ ٱلْأَمِينِ
আরবি উচ্চারণঃ ওয়া হা-যাল বালাদিল আমীন।
বাংলা অনুবাদঃ এবং এই নিরাপদ নগরীর।
(৪)
আরবিঃ لَقَدْ خَلَقْنَا ٱلْإِنسَٰنَ فِىٓ أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ
আরবি উচ্চারণঃ লাকাদ খালাকনাল ইনছা-না ফীআহছানি তাকবীম।
বাংলা অনুবাদঃ আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
(৫)
আরবিঃ ثُمَّ رَدَدْنَٰهُ أَسْفَلَ سَٰفِلِينَ
আরবি উচ্চারণঃ ছু ম্মা রাদাদ না-হু আছফালা ছা-ফিলীন।
বাংলা অনুবাদঃ অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নীচ থেকে নীচে।
(৬)
আরবিঃ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ
আরবি উচ্চারণঃ ইল্লাল্লাযীনা আ-মানূওয়া‘আমিলুসসা-লিহা-তি ফালাহুম আজরুন গাইরু মামনূন।
বাংলা অনুবাদঃ কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে অশেষ পুরস্কার।
(৭)
আরবিঃ فَمَا يُكَذِّبُكَ بَعْدُ بِٱلدِّينِ
আরবি উচ্চারণঃ ফামা-ইউকাযযি বুকা বা‘দুবিদ্দীন।
বাংলা অনুবাদঃ অতঃপর কেন তুমি অবিশ্বাস করছ কেয়ামতকে?
(৮)
আরবিঃ أَلَيْسَ ٱللَّهُ بِأَحْكَمِ ٱلْحَٰكِمِينَ
আরবি উচ্চারণঃ আলাইছাল্লা-হু বিআহকামিল হা-কিমীন।
বাংলা অনুবাদঃ আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্টতম বিচারক নন?
তাফসীর
আল্লাহ অত্র সূরায় তীন, যয়তুন, তূর পাহাড় ও মক্কা নগরীর শপথ করে বলছেন যে, তিনি মানুষকে সর্বোত্তম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন।
ডুমুর এবং জলপাইয়ের কসম, আল্লাহ এই দুটি গাছের শপথ নিয়েছেন কারণ তারা প্রচুর উপকার দেয় এবং ফল দেয়। অধিকন্তু, এই গাছগুলি প্রধানত শামে পাওয়া যায় যেখানে ঈসাকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছিল। সিনাই পর্বত দ্বারা, সেই স্থান যেখানে মুসাকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছিল, এবং এই নিরাপদ ভূমি, মক্কা, সেই স্থান যেখানে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছিল। আল্লাহ এই তিনটি স্থানের শপথ নিয়েছেন যা তিনি নির্বাচিত করেছেন এবং যেখান থেকে তিনি সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীদের নিয়োগ দিয়েছেন। শপথের উদ্দেশ্য নিম্নরূপ: আমরা প্রকৃতপক্ষে মানুষকে সর্বোত্তম ছাঁচে সৃষ্টি করেছি, একটি সম্পূর্ণ সৃষ্টি, ভাল আনুপাতিক এবং ন্যায়পরায়ণ আকারের। বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণভাবে তার প্রয়োজনের কোন কিছুরই তার অভাব নেই। তবুও, এই মহান আশীর্বাদ সত্ত্বেও, অধিকাংশ সৃষ্টি এই নিয়ামত দানকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, অলস বিনোদন এবং খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে। তারা সর্বনিম্ন গুণাবলী এবং নিকৃষ্ট আচার-আচরণকে প্রাধান্য দিয়েছিল তাই অতঃপর আমরা তাকে নীচ থেকে সর্বনিম্ন, আগুনের সর্বনিম্ন অংশে নামিয়ে দিয়েছিলাম, অবাধ্যদের জন্য সংরক্ষিত স্থান, যারা সাহসের সাথে তাদের পালনকর্তার দ্বারা নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করেছিল। এর থেকে মুক্ত তারাই যাদেরকে আল্লাহ ঈমান, সৎ কাজ এবং উচ্চ, করুণাময় আচরণের দ্বারা অনুগ্রহ করেছেন: তাদের উচ্চস্থানের প্রতিদানে একটি অবিরাম পুরস্কার, কখনো শেষ হবে না, বরং তারা প্রচুর আনন্দ, অগণিত আনন্দ এবং পূর্ণ আশীর্বাদ পাবে এবং প্রচুর খাদ্য এবং ফল এবং অনন্তকালের জন্য ছায়া। তাহলে কি তোমাদের হিসাবকে অস্বীকার করবে? অর্থ্যাৎ কি তোমাকে প্রতিদানের দিনকে অস্বীকার করবে? আপনি আল্লাহর অনেক নিদর্শন দেখেছেন যা আপনাকে নিশ্চিত হওয়ার দিকে নিয়ে যাবে এবং আপনি তার অনেক নেয়ামত দেখেছেন যা আপনাকে কৃতজ্ঞতার দিকে নিয়ে যাবে। আল্লাহ কি সব বিচারকদের মধ্যে সবচেয়ে ন্যায়বিচারক নন? তাঁর প্রজ্ঞা কি নির্দেশ করবে যে তিনি মানুষকে উদ্দেশ্যহীনভাবে বিচরণ করতে ছেড়ে দেন, আদেশ বা নিষেধ করা হয় না, পুরস্কৃত বা শাস্তি দেওয়া হয় না? অথবা তিনিই যিনি মানুষকে বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় পর্যায়ে সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাকে অসংখ্য আশীর্বাদ ও উপহার দিয়েছেন এবং যিনি তাকে সর্বোত্তম উপায়ে চাষ ও লালন-পালন করেছেন, তিনি তাকে এমন এক দেশে ফিরিয়ে দেবেন যা হবে তার শেষ আবাসস্থল। বাসস্থান, তার যাত্রার শেষ স্টপ, কোন দিকে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
আল্লাহ আমাদের সকলকে সূরা তীন এর গুরুত্ব বুঝার তৈফিক দান করুন। আমিন।।