আত্মহত্যা আজকের সমাজে সংঘটিত পাপের সবচেয়ে জঘন্য পাপের একটি। এ কারণেই আত্মহত্যা ইসলামে কবিরা গুনাহ। নিজের জীবনকে চিরতরে ধ্বংস করার নামই আত্মহত্যা। আত্মহত্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো সুইসাইড। সুইসাইড শব্দটি ল্যাটিন সুই সেডিউর থেকে এসেছে। ইসলামে আত্মহত্যা যেমন মারাত্মক অপরাধ তেমনি এর শাস্তি খুবই বয়াবহ। এ বিষয়ে ইসলামের বিধান হচ্ছে-
আল্লাহ মানুষের জীবনের মালিক; এবং মৃত্যুও তার হাতে। কোরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন: ‘প্রত্যেক জীবই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; অতঃপর তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে। (সূরা আল-আনকাবুত: আয়াত ৫৭)
আত্মহত্যা
আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বাভাবিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করে একজন বান্দার জীবন শেষ করা ইসলামে গুরুতর অপরাধ ও হারাম কাজ। আর পরকালে এর পরিণাম ভয়াবহ।
ইসলাম কখনই আত্মহত্যার মতো অপরাধ সমর্থন করে না। এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে আল্লাহ পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াতে ঘোষণা করেছেন:
১. ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল।’ (সুরা নিসা : আয়াত ২৯)
২. ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৬)
মানুষ কেন আত্মহত্যা করে?
আসুন দেখে নেওয়া যাক কেন মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার অনেক কারণ রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
১. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য, যৌতুকের কারণে ঝগড়া বিবাদ
২. পিতামাতা এবং সন্তানদের মধ্যে একঘোয়ামীতা,
৩. পরীক্ষায় ব্যর্থতা,
৪. দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারনে,
৫. প্রেম-বিচ্ছেদ, মিথ্যা প্রেমের ফাঁদে পা দেওয়া
৬. ব্যবসায় বারবার ব্যর্থতা,
৭. শত্রুর হাতে ধরা না পড়া ।
৮. মানসিক অস্থিরতার কারণে।
৯. জ্ঞান-বুদ্ধি-বোধ-উপলব্ধির শক্তি যখন লোপ পায়, অসহায়-অবিশ্বস্ত বোধ করে, তখন মানুষ আত্মহত্যা করে।
বিশেষ করে
আত্মহত্যার এই প্রবণতা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে খুব বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাদের অনেকেই নানা কারণে এ অপরাধে জড়িত; যেমন-
১. পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া বা ভালো ফলাফল করতে ব্যর্থ হওয়া।
২. প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বা প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করে অনেকেই আত্মহত্যা করছেন। তবে ইসলামি আইন অনুযায়ী বিয়ে ছাড়া যুবক ও যুবতীর মধ্যে প্রেম স্থাপন সম্পূর্ণরূপে হারাম।
কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় সঠিক ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই ইসলামের এই প্রকৃত বিধান উপলব্ধি করতে পারছেন না। ফলে আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যু সংখ্যা সমাজে দিন দিন বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
প্রতিটি পিতা-মাতার উচিত তাদের সন্তানদের আত্মহত্যার মতো গুরুতর অপরাধ থেকে মুক্ত রাখতে তাদের সন্তানের আরও যত্ন নেওয়া। আপনার সন্তানকে কুরআন ও হাদীসের আলোকে ভালোবাসার নিয়ম সম্পর্কে অবহিত করা। সন্তানের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন- যাতে শিশু তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নির্ভয়ে বাবা-মায়ের সাথে সহজে যোগাযোগ করতে পারে।
এটা ভুলে গেলে চলবে না যে আত্মহত্যা শুধু জীবনের প্রদীপ নিভিয়ে দেয় না; তার বদলে হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা হাজারো স্বপ্ন মাটির সাথে মিশে ধুলোয় পরিণত হয়।
এছাড়া কোনো কাজে ব্যর্থ হলেই আল্লাহর ওপর ভরসা না করে হতাশা থেকে অনেকে আত্মহত্যা করে। তবে বিভিন্ন বিপদ-আপদ মোকাবিলায় কী কী কর্তব্য হবে তাও পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
‘হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য চাও; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা : ১৫৩)
সবাইকে মনে রাখতে হবে, আত্মহত্যার মতো মারাত্মক অপরাধ প্রবণতা থেকে বাঁচতে হলে জীবনে চলার পথে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হয় এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। শত বিপদের মাঝেও সবসময় হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করা উচিত। আপনাকে নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে এবং আপনার জীবনকে পুনর্বিন্যাস করার চেষ্টা করতে হবে।
এই জীবন যুদ্ধে যিনি ধৈর্য্যের সাথে প্রতিটি মুহূর্ত মোকাবেলা করবেন, দিন শেষে তিনিই সফলতার মুখ দেখবেন। বাংলা ভাষায় সেই প্রবাদ বাক্যই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যে ‘সবুরে মেওয়া ফলে’। আর এই ধৈর্য আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয়। আল্লাহ বলেন- ‘আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালবাসেন।
আত্মহত্যা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
এখন আমরা দেখবো আত্মহত্যা এবং এর পরিণতি সম্পর্কে ইসলাম কী বলছে। ইসলামিক আইন আত্মহত্যাকে নিষিদ্ধ করে, এবং এর পরিণামে, অপরাধী যেভাবে আত্মহত্যা করেছে সে অনুযায়ী তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ আপনার প্রতি সহানুভূতিশীল। ‘(সূরা আন-নিসা’২৯-৩০,) অন্যদিকে, অনেক হাদিস আমাদের আত্মহত্যা এবং এর শাস্তি সম্পর্কে অবহিত করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ আমরা আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীস উল্লেখ করতে পারি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার আযাব জাহান্নামে অব্যাহত থাকবে। আর যে ব্যক্তি ধারালো বস্তু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নামে অব্যাহত থাকবে। ‘(সহিহ বুখারি) এখন যারা ইসলামী অনুশাসনে বিশ্বাসী এবং সে আলোকে নিজেদের জীবন পরিচালনা করেন, তারা কখনো আত্মহত্যা করে নিজেদের পরকালীন জীবনকে জাহান্নামে নিশ্চিত করতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক।
উপরন্তু, আমরা উল্লেখ করতে পারি যে বিশ্বের কোন ধর্মই আত্মহত্যা সমর্থন করে না। তাই এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব যদি ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারসহ অন্যান্য গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় এবং বাস্তব জীবনে মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সমন্বয় ঘটানো যায়। একাডেমিক কার্যক্রমই নৈতিকতা ও মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারের একমাত্র উপায় নয়। বরং অন্যান্য মাধ্যমও ব্যবহার করতে হবে। যেমন, প্রতিটি মসজিদের জুমার খুতবায় বা ওয়াজ মাহফিলে এসব সামাজিক সমস্যা এবং ইসলামের শিক্ষাগুলোকে সুস্পষ্ট ও বোধগম্যভাবে উপস্থাপন করা জরুরি। এক্ষেত্রে সামাজিক ও ধর্মীয় নেতারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। একই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে কাজটা সহজ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মহত্যার পরিণতি
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। আল্লাহ মানুষকে নশ্বর সৃষ্টি করেছেন। তিনিই মৃত্যুর দান কারী। কিন্তু আত্মহত্যার মাধ্যমে বান্দা স্বাভাবিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে আত্মহত্যা করে। সেজন্য এটি একটি জঘন্য কাজ। যা আল্লাহ তায়ালা মোটেই পছন্দ করেন না। এ কারণে আত্মহত্যার জানাজা শরীয়তে আদায় করা রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও তা শিক্ষা দেননি। এটা শিষ্যদের দ্বারা শেখানো হয়. এই সূত্র ধরে আমাদের সমাজেও অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির জানাজার নামাজ উচ্চ ব্যক্তিত্বের ব্যক্তির পরিবর্তে সাধারণ ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিই পড়ান।
কোরআনের বাণী
আত্মহত্যা মহাপাপ। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করার জন্য কঠোর ও বেদনাদায়ক শাস্তির বর্ণনা দিয়ে পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল করেছেন।
মহান আল্লাহ বলেন, “আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে উহা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্য আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে উহা সহজসাধ্য।” (সূরা-নিসা-২৯-৩০)
রাসুল (সা.) এর বাণী
ক) সাহাবী আবূ হোরায়রা (রাঃ) থেকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে নিজেকে সর্বদা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।
খ) যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করেছে সে নিজের হাতে জাহান্নামে বিষপান করতে থাকবে।
গ) যে কেউ ধারালো অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করেছে তার জাহান্নামে একটি ধারালো অস্ত্র থাকবে যা দিয়ে সে সবসময় তার পেট ফাটিয়ে দেবে।
ঘ) রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামে ঝুলে থাকার শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বর্শা ইত্যাদি দিয়ে আঘাত করে আত্মহত্যা করবে- সে নিজেকে একইভাবে জাহান্নামে শাস্তি দেবে।
ঙ) হজরত জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এর পর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।
আত্মহত্যা এবং এর কুফল
আত্মহত্যা আজকের সমাজের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই আমরা কোনো না কোনো দৈনিক পত্রিকায় আত্মহত্যার খবর পাই। আমরা এটাও জানি যে এই আত্মহত্যাগুলো বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। কিন্তু এর থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।
গত কয়েক বছরের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান অন্তত আমাদের সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের অবস্থা একই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর প্রায় আট মিলিয়ন মানুষ আত্মহত্যা করে। তবে, ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী যুবক-যুবতীরা আত্মহত্যা করার সম্ভাবনা বেশি। আত্মহত্যায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দশম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো হতাশা, দাম্পত্য বা যেকোনো সম্পর্কের দ্বন্দ্ব, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য ও সহযোগিতা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। তাদের মতে, এগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে আত্মহত্যার প্রবণতা কমানো বা বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হলো- সমাজের পক্ষে কি কখনো উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া সম্ভব? অবশ্যই না. পৃথিবীর শুরু থেকেই মানুষ দারিদ্র্য দূর করার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু সেই দারিদ্র্য কমেনি বরং বেড়েছে নানাভাবে। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরও অনেক কিছুর অভাব থাকে। সম্পর্কের দ্বন্দ্ব ঠিক তেমনই। যতদিন সম্পর্ক থাকবে ততদিন দ্বন্দ্ব থাকবেই। এটাই নিয়ম। তাই উল্লেখিত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে না পারলে আত্মহত্যা ও এর প্রবণতা বন্ধ করা যাবে না বলাটা অযৌক্তিক। বিভিন্ন উপায় থাকতে হবে। আর তা হলো- নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ইত্যাদি। যতদিন ব্যক্তিজীবনে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রয়োগ না হবে, ততদিন এসব সমস্যার সমাধান কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। আর একমাত্র ধর্মই পারে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ। সেক্ষেত্রে ইসলামই হবে একমাত্র সমাধান যা আল্লাহর পূর্ণ ও মনোনীত।
আত্মহত্যা থেকে মুক্তির উপায়
১. পিতামাতার কর্তব্য তাদের সন্তানদের অকারণে ভয় না দেখানো।
২. তাদের এমন মানসিক যন্ত্রণা না দেওয়া যাতে তারা আত্মহত্যার মতো চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।
৩. মারাত্মক ও কষ্টদায়ক অসুখে পড়লে নামাযে দাঁড়িয়ে যাওয়া। দাঁড়াতে না পারলে বসুন, না পারলে শুয়ে পড়ুন, অঙ্গভঙ্গি করুন এবং সিজদায় করুন। হে আমার রব! আমি অসুস্থ তুমি পরম করুণাময়। আমাকে রোগমুক্ত কর। আইয়ুব (আঃ) তাঁর মহা অসুস্থতার কারণে এই দো‘আ পাঠ করেছিলেন (সূরা আম্বিয়া আয়াত ৮৩ “রাব্বি আন্নি মাস্যানিয়াত দুররু ও আনাতা আরহাদুর রাহেমিন”।
৪. ব্যবসায় ক্রমাগত ক্ষতি হলে মাঝে মাঝে নফল নামায পড়ে সেজদায় যান এবং এই দোআটি পাঠ করুন: আল্লাহুম্মার জুকনা রিযকান হাসানা। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবুকা মিনাল ফাকরি অলকিল্লাতি অজজিল্লা”। অর্থ হলোঃ হে আল্লাহ। আমাকে মঙ্গলকর জীবিকা দান করুন। আমি আপনার নিকট গরিবী স্বল্পতা ও হীনতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আপনিই তো একমাত্র রিজিকের মালিক এবং দাতা। আপনি সূরা জুমার ৫৩ আয়াতে বলেছেন “ আমার দয়া থেকে নিরাশ হয়ো না”। তাই আমার রুজি বাড়িয়ে দিন।
৫. পরীক্ষা এলে শিক্ষার্থীদের নফল নামাজে যেতে হবে এবং সময়ে সময়ে সেজদা করতে হবে। হে আল্লাহ! তুমি জ্ঞান, প্রতিভা, বুদ্ধি ও ফলের অধিকারী। দয়া করে আমাকে এগুলো দিয়ে সাহায্য করুন যাতে আমি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারি। কোরআনের ভাষায় এই দোয়া হলো ‘রাব্বি জিদনি এলমা’। অর্থ হচ্ছে. হে প্রভু. আমার জ্ঞান বাড়াও।
৬. আত্মহত্যার কথা ভাবলে, আসলে এই বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য, উচ্চতর প্রার্থনায় দাঁড়ানো এবং সেজদা করার সময় বিনীতভাবে আল্লাহর আগ্রহ, রহমত ও সাহায্য প্রার্থনা করা প্রয়োজন। প্রতি মুহূর্তে ধৈর্য ধরতে হবে।
৭. দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এই জীবনে কখনো কখনো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একগামীতা থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পোশাক। একে অপরের শান্তিদাতা এবং শান্তিদাতা। দোষ-গুণ সম্পন্ন মানুষ। সকল গুণের সমাহার কারো কাছেই বিরল। স্বামীর যেমন কিছু গুণ থাকে তেমনি কিছু দোষও থাকে। স্ত্রীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাই সুখ-দুঃখ দুজনকেই ভাগ করে নিতে হয়। নিজেদের মধ্যে সংলাপ-সহযোগিতা-বোঝাবুঝি-সহমর্মিতা থাকতে হবে। উভয়কেই ধৈর্য ধরতে হবে। আল্লাহ সূরা ফুরকানের ৬৪ নং আয়াতে দোয়া শিখিয়েছেন যার অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা। আমাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের দৃষ্টিকে তৃপ্ত করুন এবং মোত্তাকিদেরকে আমাদের আদর্শ করুন।
সর্বোপরি, যখনই আপনি অসহায় ও হতাশ বোধ করেন এবং আত্মহত্যার কথা ভাবেন, তখনই আপনাকে ভাবতে হবে যে শয়তান এসেছে। ইসলামে আত্মহত্যা জায়েজ নয় এবং এর পরিণতি জাহান্নাম। তাই এ থেকে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়। একই সাথে আমাকে মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ আমার সহায় এবং আশার আলো। তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ের সাথে সাথে উচিৎ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও সাহায্য কামনা করা। প্রতি মুহূর্তে ধৈর্য ধরতে হবে। ইনশাআল্লাহ মন ও অন্তর শান্ত হবে এবং বিপদ দূর হবে।
উপসংহার
আমরা যেভাবে এইচআইভির বিরুদ্ধে সর্বস্তরে কার্যকর অবস্থান নিয়েছি, আমাদের অবশ্যই আত্মহত্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। এই মহা সামাজিক ব্যাধি থেকে মানবতাকে মুক্ত করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। হে মহান আল্লাহ। সর্বস্তরের নারী-পুরুষ ও শিশুদের আত্মহত্যার মতো পাপ থেকে বাঁচতে এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রজ্ঞা দান করুন। আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। গুরুতর অপরাধ এবং আত্মহত্যার মত হারাম কাজ এড়াতে তৌফিক দান করুন। আমীন।