সাইয়েদুল ইস্তেগফার

তওবা বা ইস্তেগফার এর অর্থ অনুশোচনা বা ফিরে আসা। আমরা মানুষ, মানুষ হিসেবে আমরা কেউই ভুলের উর্ধে নয়। অর্থাৎ আমরা ভুল করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবো, আর আল্লাহ আমাদের কে মাফ করে দিবেন। ইসলামী পরিভাষায় মানুষ ভুল করবে, আর তার পর পরই অনুশোচনা করে সেই ভুল না করার প্রতিশ্রতি করে ফিরে আসাই হচ্ছে “তওবা বা ইস্তেগফার”।  নিন্মে সাইয়েদুল ইস্তেগফার আলোচনা করা হলঃ

সাইয়েদুল ইস্তেগফার

 

সাইয়েদুল ইস্তেগফার

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) ‘তাওবাতুন নাসূহ’ এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, তাওবাতুন নাসূহ’র অর্থ হলাে এই যে-

১। মানুষ মনে প্রাণে লজ্জিত হয়ে যাবে। 

২। মুখে ইস্তেগফার করবে। 

৩। দ্বিতীয়বার গুনাহ করবে না এর উপর বদ্ধপরিকর থাকবে।

 

আল্লাহ তা’আলা এটাই এরশাদ করেন-

“হে ঈমানদারগণ! তােমরা আল্লাহর কাছে সত্যিকার খাঁটি তওবা করাে”। 

 

হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেন-

“মুখে ইস্তেগফার করার পরও গুনাহর উপর অটল থাকার অর্থ আল্লাহ তা’আলার সাথে ঠাট্টা করার নামান্তর”। (নাউজুবিল্লাহ)। 

 

হযরত রাবেয়া বসরী (রহঃ) বলেন-

“আমাদের ইস্তেগফারই ইস্তেগফারের মুখাপেক্ষী অর্থাৎ আমাদের ইস্তেগফারকেও ইস্তেগফার করানো দরকার।”

“ইস্তেগফারের সাথে গুনাহ না করার দৃঢ় ইচ্ছা থাকতে হবে।”

 

সাইয়েদুল ইস্তেগফার ও তওবার দোয়া

 

 

সাইয়েদুল ইস্তেগফার / তওবার দোয়া আরবীঃ

সাইয়েদুল ইস্তেগফার

 

সাইয়েদুল ইস্তেগফার এর উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খলাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আ’লা আহ্দিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত’তু আঊযুবিকা মিন শাররি মা সনা’তু আবু উলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া ওয়া আবুঊ লাকা বিযানবি ফাগ্ফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুযযূনুবা ইল্লা আনতা।”

সাইয়েদুল ইস্তেগফার এর অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমিই আমার রব, তুমি ভিন্ন আর কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ এবং আমি তােমার গােলাম । আমি যথাসাধ্য তােমার দেয়া ওয়াদা প্রতিশ্রুতি পালনে দৃঢ় থাকব। আমি আমার কৃতকর্মের মন্দ পরিণাম হতে তােমার নিকট আশ্রয় চাই। আমার প্রতি তােমার নিয়ামতসমূহকে স্বীকার করি। আমি আরও স্বীকার করি আমার গুনাহসমূহের কথা । কাজেই তুমি আমার গুনাহগুলি মাফ কর। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার কেউ নেই।”

 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

            তােমাদের কেউ একথাগুলাে সন্ধ্যাবেলায় বললে, অতঃপর ভাের হবার আগে তার মৃত্যু হলে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। অনুরূপভাবে তােমাদের কেউ তা ভাের বেলায় বললে, অতঃপর সন্ধ্যার আগেই তার মৃত্যু হলে তার জন্যও বেহেশত অবধারিত হয়ে যায়।

 

তওবা কবুলের নিদর্শন

কোন এক দার্শনিক ব্যক্তি বলেন যে, কারও তাওবা কবুল হয়েছে কিনা, তা জানার জন্য তার মধ্যে চারটি আলামত পরিলক্ষীত হবে।

১। স্বীয় মুখ বেহুদা কথা, মিথ্যা ও গীবত থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া। 

২। নিজের অন্তরে কারাে ব্যাপারে হিংসা ও দুশমনী স্থান না পাওয়া। 

৩। খারাপ সাথীদের ছেড়ে দেয়া।

৪। মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করতে, সব সময় লজ্জিত ও অনুতপ্ত থাকবে, ইস্তেগফার করতে থাকবে, আর আল্লাহর আনুগত্যে লেগে থাকবে।

 

জনৈক হাকীম সাহেবের কাছে প্রশ্ন করা হলাে, তওবাকারীর জন্য এমন কোন আলামত আছে কি যে, তার তওবা কবুল হয়েছে কিনা, জানতে পারে? বললেন, হাঁ চারটি আলামত আছে।

১। অসৎ সঙ্গ ছেড়ে দিয়ে সৎ সঙ্গ গ্রহণ করবে, এবং অন্তরে তাঁর ভীতি সঞ্চার হবে।

২। সকল প্রকার গুনাহ থেকে বের হয়ে ইবাদত ও আনুগত্যের দিকে ধাবিত হবে।

৩। দুনিয়ার মুহাব্বত অন্তর থেকে বেরিয়ে যাবে, এবং পরকালের চিন্তায় চিন্তিত থাকবে।

৪। আল্লাহ পাক যে রিযিকের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাতেই সন্তুষ্ট থেকে আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকবে।

 

এ ধরনের ব্যক্তিদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের উপর চারটি বিষয় পালনীয় ও করণীয়-

১। তওবা কবুল কারীদেরকে মুহাব্বত করবে, কেননা আল্লাহ্ পাকও তাদেরকে মুহাব্বত করেন।

২। তারা যেন তওবার উপর অটল থাকতে পারে তাঁদের জন্যে দোয়া করতে হবে। 

৩। অতীত গুনাহর জন্যে তাদেরকে ভর্ৎসনা দেবে না ।

৪। তাদের সংস্পর্শ, সঙ্গ অবলম্বন করবে, তাদের আলােচনা করবে এবং  তাদের সাহায্য-সহযােগিতা করবে।

 

তওবা কবুল হওয়ার কারন

কেউ কেউ বলেছেন, হযরত আদম (আ.) -এর দুআ আল্লাহ তাআলার দরবারে কবুল হয়েছে পাঁচটি কারণে। অনুরূপভাবে পাঁচটি কারণে শয়তানের তাওবা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

আদম (আ.) -এর দুআ কবুল হওয়ার কারণ পাঁচটি হলাে-

১. আদম (আ.) স্বীয় অন্যায় স্বীকার করেছেন, 

২. স্বীয় অপরাধের কারণে অনুতপ্ত হয়েছেন। 

৩. সঙ্গে সঙ্গেই তাওবায় ভেঙ্গে পড়েছেন।

৪.স্বীয় নফস ও প্রবৃত্তিকে তিরস্কর করেছেন এবং

৫. আল্লাহর রহমত ও দয়া সম্পর্কে নিরাশ হননি। (যে কোন ব্যক্তির তাওবা কবূল হওয়ার জন্যে এই পাঁচটি বিষয় অনিবার্য)।

 

আর যে পাঁচটি কারণে শয়তানের তাওবা কবুল হয়নি। তাহলাে-

১. স্বীয় অপরাধকে স্বীকার না করে বরং বলেছে, আমি আদমের চেয়ে উত্তম। 

২. স্বীয় অপরাধের জন্যে লজ্জিত হয়নি।

৩. স্বীয় নফসকে ভৎসনা করে। (অহংকারের কারণেই এমনটি হয়েছে)।

৪. সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করেনি। (রবং আল্লাহর সাথে এই অভিশপ্ত বাহাদুরী প্রদর্শন করেছে)।

৫. আল্লাহ’র দয়া সম্পর্কে নিরাশ হয়ে পড়েছে। (আর এমন অহংকারী অভিশপ্তজন নিরাশ না হয়েই বা কী করবে)।

 

দোযখ অতিক্রমকালে তওবাকারীকে আগুণ স্পর্শ করবে না

হযরত খালেদ ইবনে মা’দান (রহঃ) বলেন যে, যখন তওবাকারীগণ জান্নাতে পৌঁছে যাবেন তখন তারা বলবেন; আল্লাহ তা’আলা তাে এরশাদ করেছিলেন যে, আমরা জান্নাতে যাওয়ারকালে দোযখের উপর দিয়ে অতিক্রম করবাে, (কিন্তু কৈ, তখন) তাদেরকে বলা হবে যে, তোমরা দোযখের উপর দিয়েই চলে এসেছো কিন্তু তখন ঠান্ডা ছিল।

 

তিন ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করা ভাল

১। নামাযের যখন সময় হয়ে যায়, (মােস্তাহাব ওয়াক্তের পর দেরী করা সমীচীন নয়)।

২। মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির দাফন, (উচিৎ হচ্ছে কারো ইন্তেকালের পর পরই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তাকে দাফন করে দেয়া)।

৩। গুনাহের পর তওবা সম্পাদন, (এমনটি যেন না হয় যে, তওবার আগেই মৃত্যু এসে যায়, তাই এ কাজটিও খুব তাড়াতাড়ি করা উচিত)।

 

তাওবাকারীর সম্মান 

আল্লাহ্ তায়ালা তওবাকারীকে ৪টি বিষয়ে সম্মান দান করে থাকেন।

১। তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত করে দেন, যেন সে কখনাে গুনাহ করেই নি।

২। আল্লাহ্ তায়ালা নিজেই এমন বান্দাহদেরকে মুহাব্বত করতে থাকেন। 

৩। শয়তান থেকে তাকে হেফাজত করেন।

৪। দুনিয়া ত্যাগের (অর্থাৎ মরণের) আগে তাকে ভয়-ভীতিহীন ও নিশ্চিন্ত করে দেন।

আল্লাহ! আমাদেরকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, আমীন।

 

তাওবার দ্বারা গুনাহ্ সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে যায়

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যখন বান্দাহ সত্যিকার তওবা করে, তখন আল্লাহ তা’আলা তার তওবা কবুল করতঃ গুনাহ লিখক ফেরেশতাকে এবং গুনাহগারের অঙ্গাবলীকে সে গুনাহ ভুলায়ে দেন, যাতে কেউ সাক্ষ্য দিতে না পারে। এমনকি গুনাহর স্থান পর্যন্ত ভুলিয়ে দেয়া হয়।।

যখন শয়তানের উপর আল্লাহ তা’আলার লানত পড়ল, তখন বলতে লাগল, তােমার ইজ্জতের কসম! যতক্ষণ পর্যন্ত তােমার বান্দাহ জিন্দা থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তার বুক (ভিতর) থেকে বের হবাে না।।

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করলেন, আমারও আমার ইজ্জতের কসম! যে, আমি তার সারা জীবনই তার তওবা কবুল করতে থাকবাে।

তওবাকারীকে দেখে শয়তানও আফছোছ করে

কোন একজন তাবেয়ী (রহঃ) বলেন যে, যখন কোন ব্যক্তি গুনাহ করার পর তাওবা ও ইস্তেগফার করে এবং লজ্জিত হয়, তখন তার তাওবা ও অনুতাপ অনুশােচনার কারণে তার মর্যাদা আরাে বেড়ে যায় আর জান্নাতের যােগ্য হয়ে যায় ।

 

শয়তান তখন আফছোছ করতে করতে বলে যে, হায়! যদি আমি তাকে গুনাহর জন্যে উদ্বুদ্ধ না করতাম, তাহলেই তো ভাল ছিল। তাঁর মর্যাদা এত বৃদ্ধি পেতো না, যা ছিল তাই থাকতাে।

 

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সাইয়েদুল ইস্তেগফার / তওবার দোয়া মুসলিম তথা ঈমানদারদের জন্য এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ  যে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার তৈফিক দান করুন। আমিন।।

 

অনুচ্ছেদটি পড়ে ভালো লাগলে বা বৃন্দু পরিমান উপকৃত হলে আমাদের চেষ্টা সফল হবে বলে মনে করবো। শেয়ার করে অন্যকে জানাতে সহযোগীতা করুন। ভুল-ত্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং কিছু বলার থাকলে তা নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্টস করে জানাবেন। আল্লাহ হাফেজ।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!