“যে ব্যক্তি এই মাসটি পাবে সে যেন অবশ্যই এই মাসের রােজা পালন করে” (আল-কুরআন)। মহা পবিত্র আল-কুরআনে রােজাকে রমাদান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যাবতীয় ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে রােজা। রোজার মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হওয়ার যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে। যে সকল কারনে রোজা ভঙ্গ হয় সে সব বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। রােজা থেকে সঠিক ফায়দা হাসিলের জন্য রোজা ভঙ্গের কারণ জানা একান্ত প্রয়ােজন। নিন্মে তা আলোচনা করা হলঃ
রোজা ভঙ্গের কারণ
যে সকল কারণে রোজার কাজা আদায় করতে হবে:
১। কুলি করার সময় হঠাৎ গলায় পানি ঢুকে গেলে।
২। জোর করে গলায় কিছু ঢুকিয়ে দিলে।
৩। নাকের ভিতর বা কানের ভিতর ঔষধ ঢেলে দিলে।
৪। ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভরে বমি করলে।
৫। অখাদ্য যেমন কাঁকড়, মাটি বা কাঠের টুকরা খেলে।
৬। পায়ুপথে পিচকারী দিলে।
৭। পেটে বা মস্তিষ্কে ঔষধ লাগালে তার তেজ যদি উদর বা মস্তিষ্কে প্রবেশ করে।
৮। ঘুমের ভিতর পেটে কিছু প্রবেশ করলে।
৯। রাত আছে মনে করে বা সূর্য ডুবে গেছে মনে করে কিছু খেয়ে ফেললে।
১০। অনিচ্ছাকৃত কারণে বমি আসার পর মুখের ভিতর থেকে তা পুনরায় গিলে ফেললে।
১১। দাঁতের ভিতর লুকিয়ে থাকা ছোলা পরিমাণ কিছু বের করে তা গিলে ফেললে।
যে সকল কারণে রােজা ভঙ্গ করা যায়
১। অসুস্থ অবস্থায় রােজা রাখলে রােগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে এবং রােজা থাকলেও এমতাবস্থায় রােজা ভাঙ্গা জায়েয হবে।
২। রােজাদার কোন মহিলার রােজা রাখার ফলে যদি দুধ কমে যাওয়ার আশংকা থাকে এবং শিশুর কষ্ট হয়, তখন ঐ মহিলা রােযা ভঙ্গ করতে পারবে।
৩। বয়স বৃদ্ধির কারণে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়লে।
৪। রােজা রাখার কারনে গর্ভের সন্তান যদি ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
৫। ক্ষুধা তৃষ্ণায় মৃত্যুর আশংকা থাকলে।
৬। মুসাফির অবস্থায় থাকলে।
৭। সাপে দংশন করলে।
৮। মহিলাদের হায়েয-নেছাফ হলে রােযা ভঙ্গ করবে।
যে সকল কাজে রােজা ভঙ্গ হয় না
১। রােযা রাখা অবস্থায় ভুলবশতঃ কোন কিছু পানাহার করে ফেললে, তবে রােযার কথা মনে পড়লেই মুখে যা কিছু আছে সব ফেলে দিতে হবে।
২। তৈল মালিশ করলে।
৩। মুখের থুথু গিলে ফেললে।
৪। সামান্য পরিমাণ বমি হলে।
৫। নাক কিংবা কানের মধ্যে পানি ঢুকলে।
৬। আতর, লােবান, আগর বাতি প্রভৃতির সুবাস গ্রহণ করলে।
৭। স্বপ্নদোষ হলে।
৮। চোখের মধ্যে সুরমা লাগালে।
৯। মিথ্যা কথা ও অশ্লীল বাক্যালাপ করলে।
১০। চুকা ঢেকুর ওঠলে।।
১১। অন্যের গীবত করলে।
১২। হঠাৎ করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মশা-মাছি বা ধূলাে-বালি গলার ভিতর ঢুকে গেলে।
১৩। দিনের বেলায় ফরয গােসল করলে।
১৪। রােগবশতঃ বিনা উত্তেজনায় মনি নির্গত হলে।
রােজার কাফফারা
যে সকল ব্যক্তির উপর রােজার কাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়, সে সকল ব্যক্তি একটি রােজার পরিবর্তে একটি রােজা রাখবে তার কাফফারা স্বরূপ। একটি সুস্থ সবল নিখুঁত গােলামকে মুক্ত করে দিবে। এতে যদি সক্ষম না হয়, তবে ৬০ জন মিসকীনকে পরিপূর্ণ সহকারে এক বেলা আহার করাবে। এতেও যদি সক্ষম না হয়, তবে একজন মিসকীনকে নিজে যেভাবে আহার করে ঠিক সেভাবে ৬০ দিন পর্যন্ত আহার করাবে। আর এতেও যদি অক্ষম হয়, তবে দুই মাস লাগাতার রােযা রাখবে। এতে ৬০ দিনের মধ্যে যদি একটি রােজাও ছুটে যায়, তবে আবার প্রথম থেকে ৬০ দিন পরিপূর্ণ করতে হবে। পূর্বের দিনগুলাের রােজা কোন কাজে আসবে না। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, যেন কাফফারা আদায় করার সময়ে বছরে হারামের ৫ দিনে না পড়ে। আর স্ত্রী লােকের ক্ষেত্রে যদি কাফফারা আদায় করা অবস্থায় হায়েয উপস্থিত হয়, তবে হায়েযের সময় সীমার মধ্যে রােজা না রেখে পবিত্র হওয়া মাত্রই রােজা রাখা আরম্ভ করতে হবে।
রোজা ভঙ্গের কারণ
আল্লাহ তায়ালা নিখুঁত প্রজ্ঞা অনুসারে রোজা রাখার বিধান জারি করেছেন। তিনি রোজাদারকে ভারসাম্য রেখে রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন; একদিকে যাতে রোজাদারের কোনো শারীরিক ক্ষতি না হয়। পক্ষান্তরে, সে যেন রোজা ভঙ্গ করে এমন কোনো কাজে লিপ্ত না হয়।
এ কারণে রোজা ভঙ্গকারী জিনিসগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
কিছু দ্রুত-ব্রেকিং কারণ রয়েছে যা শরীর থেকে কিছু নিঃসরণকে জড়িত করে। যেমন সহবাস, ইচ্ছাকৃত বমি, ঋতুস্রাব এবং শিং ফুঁক। এগুলো শরীর থেকে বের হওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এই কারণে, আল্লাহ তায়ালা তাদের রোজা ভঙ্গকারী জিনিস হিসাবে নির্ধারণ করেছেন; যাতে তাদের মুক্তির দুর্বলতা এবং রোজার দুর্বলতা একত্রিত না হয়। এমনটি হলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে এবং রোজায় আর ভারসাম্য বজায় থাকবে না।
আর শরীরে ঢুকে যাওয়ার সাথে কিছু দ্রুত ভঙ্গকারী জিনিস আছে। উদাহরণস্বরূপ, খাওয়া। কাজেই রোজাদার খাওয়া-দাওয়া করলে যে উদ্দেশ্যে রোজা ফরজ করা হয়েছে তা পূরণ হবে না। [মাজমুল ফাতাওয়া ২৫/২৪৮]
আল্লাহ তায়ালা নিম্নোক্ত আয়াতে রোজা ভঙ্গকারী বিষয়ের মূলনীতি উল্লেখ করেছেন:
“এখন আপনার স্ত্রীদের সাথে সহবাস করুন এবং (সন্তানদের) সন্ধান করুন যা আল্লাহ আপনার জন্য লিখে রেখেছেন। আর খাও ও পান কর যতক্ষণ না ভোরের সাদা সুতো কালো সুতো থেকে বের হয়…” [সূরা বাকারা, আয়াত 187]
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রোজা ভঙ্গকারী প্রধান বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো- খাওয়া-দাওয়া এবং মিলন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাদীসে রোযা ভঙ্গকারী অন্যান্য বিষয় উল্লেখ করেছেন।
সুতরাং ৭টি জিনিস যা রোজা ভঙ্গের কারণ তা হল-
1. সহবাস
2. হস্তমৈথুন
3. মদ্যপান
4. যা কিছু খাবারের বিকল্প
5. ছিদ্র বা অন্য কোন অনুরূপ কারণে রক্তপাত
6. ইচ্ছাকৃত বমি করা
7. মহিলাদের মাসিক এবং মাসিক পরবর্তী রক্তপাত
এর মধ্যে প্রথমটি হলো- সহবাস; এটাই সবচেয়ে বড় কাজ যা রোজা নষ্ট করে এবং এতে লিপ্ত হলে সবচেয়ে বড় গুনাহ। যে ব্যক্তি রমজানের দিনে স্বেচ্ছায় কোনো নারীর সাথে সহবাস করে, অর্থাৎ দুই সুন্নত স্থানের মিলন এবং লিঙ্গের অগ্রভাগ যৌবনের অভ্যন্তরে চলে যায়, তার রোজা ভেঙ্গে গেল; এতে বীর্যপাত হয় বা না হয়। তার উপর তওবা করা, ঐ দিনের সিয়াম পূর্ণ করা, পরবর্তীতে ঐ দিনের সিয়াম পালন করা এবং কঠিন কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব। এর প্রমাণ হল আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেন: “এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাকে কিসে ধ্বংস করেছে? তিনি বলেনঃ আমি রমযানে (দিনে) আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। তিনি বললেনঃ তুমি কি একজন গোলাম মুক্ত করতে পারবে? তিনি বললেনঃ না। তিনি বললেনঃ তাহলে আপনি কি একটানা দুই মাস রোজা রাখতে পারবেন? তিনি বললেনঃ না। তিনি বললেনঃ তাহলে ষাট জন মিসকীনকে খাওয়াতে পারবে? তিনি বললেনঃ না… [হাদিসটি সহীহ বুখারীতে (1936) এবং সহীহ মুসলিমে (1111) আছে]
দাম্পত্য সহবাস ছাড়া অন্য কোনো কারণে কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব নয়।
দ্বিতীয়: হস্তমৈথুন। হস্তমৈথুন মানে হাত বা অন্য কিছু দিয়ে বীর্যপাত করা। হস্তমৈথুন রোজা ভঙ্গের প্রমাণ- হাদিসে কুদসিতে রোজাদার সম্পর্কে আল্লাহর বাণী: “সে আমার কারণে পানাহার এবং সহবাস থেকে বিরত থাকে” সুতরাং যে ব্যক্তি রমজানের দিনের বেলায় হস্তমৈথুন করে তার জন্য বাধ্য- তওবা করে, বাকি দিন রোজা রাখে এবং পরে রোজা রাখে। আর যদি তাই হয়- হস্তমৈথুন শুরু হয়েছে; কিন্তু যদি সে বীর্যপাতের আগে বিরত থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে; তার রোজা বৈধ। বীর্যপাত না হওয়ায় রোজা ভাঙতে হবে না। যৌন উত্তেজনা জাগায় এমন সবকিছু থেকে দ্রুত বিরত থাকা এবং সমস্ত নেতিবাচক চিন্তা থেকে তার মনকে সংযত করা উচিত। আর যদি বের হয়, তাহলে নেতৃস্থানীয় মতানুযায়ী- এতে রোজা ভঙ্গ হচ্ছে না।
তৃতীয়: খাদ্য। খাওয়া মানে মুখ থেকে পেটে কিছু নিয়ে যাওয়া। একইভাবে, যদি কিছু নাক দিয়ে পেটে পৌঁছায় তবে তাও পান করার পর্যায়ের অন্তর্গত। এ কারণেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নাকে ভালোভাবে পানি দাও, যদি না তুমি রোজা রাখো।” [সুনানে তিরমিযী (৭৮৮), আলবানী সহীহ তিরমিযীতে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন] অতএব, নাক দিয়ে পেটে পানি ঢাললে যদি রোযার ক্ষতি না হয়, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করতেন না। নাক দিয়ে পানি ঢালা নিষেধ।
চতুর্থ: খাবার প্রতিস্থাপন করে এমন কিছু। এটি দুটি জিনিস কভার করে। ১. রোজাদারের শরীরে রক্ত ঢেলে দিলে। যেমন, আঘাতের কারণে রক্তক্ষরণের কারণে যদি কারো শরীরে রক্ত ঢুকে যায়; তাহলে ঐ ব্যক্তির রোজা ভেঙ্গে যাবে। যেহেতু পানের উদ্দেশ্য রক্ত তৈরি করা। ২. খাবারের বিকল্প হিসাবে ইনজেকশন পুশ করা। কারণ এ ধরনের ইনজেকশন নিলে খাবারের প্রয়োজন হয় না। যাইহোক, যে ইনজেকশনগুলি খাবারের বিকল্প নয়; বরং চিকিৎসার জন্য দেওয়া, যেমন ইনসুলিন, পেনিসিলিন, বা শরীরকে শক্তিশালী করার জন্য দেওয়া বা ইনজেকশন হিসেবে দেওয়া, এগুলো রোজা ভাঙবে না; এই ইনজেকশনগুলি ইন্ট্রামাসকুলার বা শিরাপথে দেওয়া যেতে পারে।
কিডনি ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে রোগীর শরীর থেকে রক্ত বের করে রক্ত পরিশোধন করা হয়, কিছু রাসায়নিক ও খাদ্য উপাদান (যেমন চিনি ও লবণ ইত্যাদি) যোগ করে রক্ত আবার শরীরে ঠেলে দেওয়া হয়; এতে করে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
পঞ্চম: শিং লাগিয়ে রক্ত বের করা। প্রমাণ হল- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ “যে ব্যক্তি শিঙ্গা রাখে এবং যে শিঙ্গা রাখে উভয়ের রোযা ভেঙ্গে যাবে।”
রক্ত দান করাও শিং লাগানোর পর্বের অংশ। কারণ রক্ত দিলে শরীরে শিং লাগানোর মতো প্রভাব পড়ে। তাই রোযার জন্য রক্ত দেওয়া জায়েয নয়। তবে কোনো রোগীকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হলে রক্ত দেওয়া জায়েয হবে। রক্তদাতার রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং সে দিনের রোজা কাযা করবে।
যে ব্যক্তির কোন কারণে রক্তপাত হয় তার রোযা ভাঙ্গবে না; কারণ রক্তপাত ইচ্ছাকৃত ছিল না।
আর দাঁত তোলা, ক্ষতস্থানের ড্রেসিং বা রক্ত পরীক্ষার কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না; কারণ তারা হর্নিং পর্বে নেই। কারণ এগুলো শিং লাগানোর মতো শরীরে কোনো প্রভাব ফেলে না।
ষষ্ঠঃ ইচ্ছাকৃত বমি করা। দলীল হল- “যে ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তাকে উক্ত রোজা পালন করতে হবে না।” তবে যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করবে তাকে অবশ্যই তার রোজা কাযা করতে হবে” [সুনানে তিরমিযী (720), আলবানী সহীহ তিরমিযী (577) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
হাদীসে زرعة শব্দের অর্থ غلبه।
ইবনু মুনযির বলেন: আলেমদের ঐক্যমত (ইজমা) হল যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে তার রোজা ভেঙ্গে যায়। [আল-মুগনী (৪/৩৬৮)]
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মুখে হাত দিয়ে বা পেট চেপে বমি করেছে বা ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু শুকিয়েছে বা বারবার দেখেছে যে সে কোনো সময় বমি করেছে তারও রোজা রাখতে হবে।
তবে পেট ফুলে গেলে বমি বন্ধ রাখা বাধ্যতামূলক নয়; কারণ এতে তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে।
সপ্তমঃ মাসিক ও নিফাস রক্তপাত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন মহিলারা ঋতুস্রাব হয়, তখন কি তারা নামায ও রোযা ত্যাগ করে না!” সূর্যাস্তের একটু আগে হলেও। এবং যদি একজন মহিলা মনে করেন যে তার মাসিক শুরু হতে চলেছে; কিন্তু সূর্যাস্তের আগে রক্ত বের না হলে তার রোজা শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং ওই দিনের রোজার কাযা হবে না।
আর যদি ঋতুস্রাব ও প্রসব পরবর্তী মহিলার রক্ত রাতে বন্ধ হয়ে যায় এবং সে সাথে সাথে রোযা রাখে; তবে গোসলের আগে ফজর পড়লে আলেমদের মাযহাব অনুযায়ী তার রোজা শুদ্ধ হবে।
একজন ঋতুমতী মহিলার জন্য তার স্বাভাবিক ঋতুস্রাব চালিয়ে যাওয়া এবং আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকাই উত্তম, ঋতুস্রাব প্রতিরোধে কোনো কিছু ব্যবহার না করা। বরং আল্লাহ তার কাছ থেকে যা গ্রহণ করেন তা গ্রহণ করা, অর্থাৎ ঋতুস্রাবের সময় রোজা ভঙ্গ করা এবং পরে এর প্রতিদান। উম্মুল মু’মিন ও সালাফ মহিলারা এভাবে আমল করতেন।
তাছাড়া, মেডিক্যাল গবেষণা এই উপাদানগুলোর বহুমুখী ক্ষতি প্রমাণ করেছে যা মাসিক রোধ করে। এগুলো ব্যবহারের ফলে অনেক নারীর পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। তারপরও যদি কোন মহিলার মাসিক বিরোধী ঔষধ খাওয়ার ফলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায় এবং দাগ শুকিয়ে যায় তাহলে সে রোযা রাখতে পারবে এবং তার রোযা পূর্ণ হবে।
উল্লেখিত বিষয়গুলো হলো- রোজা ভঙ্গ করা। তবে ঋতুস্রাব ও নিফাস ব্যতীত রোজা ভাঙার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে:
– যে ব্যক্তি রোজা ভঙ্গ করে; অর্থাৎ তিনি এ ব্যাপারে অজ্ঞ নন।
-তাকে মনে রেখো।
– জবরদস্তি ছাড়াই স্বেচ্ছায় ভোগ।
এখন আমরা এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করব যা রোজা ভঙ্গ করে না:
– এনিমা ব্যবহার করা, চোখে বা কানে ফোঁটা দেওয়া, দাঁত তোলা, ক্ষতস্থানের চিকিৎসা করা ইত্যাদিতে রোজা ভঙ্গ হবে না।
– হাঁপানি বা অন্য কোনো রোগের চিকিৎসায় জিহ্বার নিচে রাখা ট্যাবলেট থেকে নিঃসৃত কোনো পদার্থ গলায় না ঢুকলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
মেডিকেল পরীক্ষার জন্য যোনিতে ঢোকানো কিছু; যেমন সাপোজিটরি, লোশন, কলপোস্কোপ, আঙ্গুল ইত্যাদি।
– স্পেকুলাম বা আই, ইউ, ডি বা এ জাতীয় যেকোন মেডিকেল ডিভাইস জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়।
– পুরুষ বা মহিলা মূত্রনালী দিয়ে ঢোকানো কিছু; উদাহরণস্বরূপ, ক্যাথেটার, সিস্টোস্কোপ, এক্স-রেতে ব্যবহৃত রং, ওষুধ, মূত্রাশয় পরিষ্কার করার জন্য ইনজেকশন দেওয়া সমাধান।
– রুট ক্যানেলিং, দাঁত তোলা, জাল ওয়াকার বা ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করা; যদি লোকটি গলায় কিছু পায় এবং তা গিলে না ফেলে।
– গার্গলিং এবং চিকিত্সার জন্য মুখের স্প্রে; গলায় কিছু ঢুকে গেলে মানুষ তা গিলে ফেলে না।
-অক্সিজেন, অ্যানেস্থেশিয়ার জন্য ব্যবহৃত গ্যাস রোজা ভঙ্গ করবে না; যদি না রোগীকে এর সাথে খাবার-দ্রবণ দেওয়া হয়।
– ত্বকের মাধ্যমে শরীরে যে কোনো জিনিস প্রবেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, তেল, মলম, ওষুধ এবং রাসায়নিক পদার্থ ধারণকারী মেডিকেল প্লাস্টার।
– ডায়াগনস্টিক ইমেজিং বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে হৃদপিন্ডের ধমনীতে বা শরীরের অন্য কোন অংশের শিরাতে একটি ছোট টিউব প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হবে না।
– নাভি পরীক্ষা করার জন্য বা অন্য কোনো অস্ত্রোপচারের জন্য পেটে মেডিক্যাল স্কোপ ঢুকিয়ে দিলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
– যকৃতের কিছু অংশ বা অন্য কোনো অঙ্গ নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করলে রোজা ভঙ্গ হবে না; এ ক্ষেত্রে কোনো সমাধান না হলে।
– পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রোস্কোপ ঢুকিয়ে দিলে রোজা ভঙ্গ হবে না; যদি না একটি সমাধান যোগ করা হয়।
– চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মস্তিষ্ক বা মেরুদন্ডে কোন চিকিৎসা যন্ত্র বা কোন পদার্থ প্রবেশ করানো হলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
আল্লাহ ভাল জানেন রোজা ভঙ্গের কারণ রোজা ভঙ্গের কারণ রোজা ভঙ্গের কারণ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে রোজা ভঙ্গের কারণ ও রোজার সকল নিয়ম কানুন মেনে এবং রোজার যথাযথ হক আদায় করে সঠিক ভাবে রোজা রাখার তৈফিক দান করুন। আমিন।।