গোসল একটি আরবি শব্দ। অঞ্চলভেদে একে অনেকে গোসল করা বললেও কেউ স্নান করা, নাইতে যাওয়াও বলে থাকে। তবে আরবি গোসল শব্দের অর্থ হচ্ছে পুরো শরীর ধোয়া। আর ইসলামের পরিভাষায় পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দিয়ে পুরো শরীর ধৌত করাকে গোসল বলে। ইসলামের সকল বিধি-বিধানের আনুগত্য পবিত্রতার উপর নির্ভরশীল। এ কারণেই পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। এখানে পবিত্রতার অর্থ জাহেরী ও বাতেনী উভয় প্রকার অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়া। পবিত্রতার অনেক গুণ ও উপকারিতা রয়েছে। এখানে আজ আমরা ফরজ গোসলের নিয়ম সমূহ সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন, আশা করি উপকৃত হবেন। তো চলুন শুরু করা যাক-
ফরজ গোসলের নিয়ম
ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম না জানার কারণে অনেক মুসলিম ভাই-বোনের নামাজসহ অনেক আমল কবুল হয় না। যা ঈমানের জন্য সবচেয়ে খারাপ দিক।
ইসলামে পবিত্রতা অর্জনের কিছু নির্দিষ্ট উপায় রয়েছে। যেমন: গোসল, অজু, খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, দাঁত পরিষ্কার রাখার জন্য মেসওয়াক, শরীরে ময়লা থাকলে ধোয়া ইত্যাদি। ইসলাম শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয়, সামাজিক জীবনেও পবিত্রতা অর্জনের দিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেয়।
যে কারণে গোসল ফরজ হয়
পাঁচটি সুনির্দিষ্ট কারণের যে কোনো একটি ঘটলেই গোসল ফরজ। তাহল-
১. নারী-পুরুষের যৌন মিলন, স্বপ্নদোষ বা যে কোনো উপায়ে বীর্যপাত হলে।
২. ঋতুস্রাবের পর পবিত্র হওয়ার জন্য মহিলাদের জন্য গোসল করা ফরজ।
৩. সন্তান প্রসবের পর শ্বাস-প্রশ্বাসের রক্তপাত বন্ধ হয়ে গেলে পবিত্র হওয়ার জন্য মহিলাদের জন্য গোসল করা ফরজ।
৪. জীবিতদের জন্য মৃতকে গোসল করা ফরজ।
৫. ইসলাম গ্রহণ করলে (নতুন মুসলিম হলে)।
গোসলের ফরজ কাজগুলো
উল্লেখিত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য ৩টি কাজ করা ফরজ। এই ৩টি কাজ সঠিকভাবে পালন না করলে গোসলের দায়িত্ব পূর্ণ হবে না। কাজ তিনটি-
১. কুলি করা । (বুখারি, ইবনে মাজাহ)
২. নাকে পানি দেওয়া। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)
৩. সারা শরীর পানি দিয়ে এমনভাবে ধোয়া যাতে দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। (আবু দাউদ)
ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
(১) গোসলের জন্য নিয়ত করতে হবে।
(২) প্রথমে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ৩ বার ধুতে হবে।
(৩) অতঃপর ডান হাত দিয়ে পানি ঢালতে হবে এবং বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান ভালো করে ধুতে হবে। শরীরের অন্য কোনো অংশে বীর্য বা অপবিত্রতা থাকলে তাও ধুয়ে ফেলতে হবে।
(৪) এবার বাম হাত ভালো করে ধুতে হবে।
(৫) এখন ওযুর নিয়ম অনুযায়ী ওযু করতে হবে কিন্তু দুই পা ধোয়া যাবে না।
(৬) ওযু শেষে মাথায় তিনবার পানি ঢালতে হবে।
(৭) এবার সারা শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে ডানে ৩ বার পানি ঢেলুন এবং বাম দিকে ৩ বার ভালো করে ধুয়ে ফেলুন, যাতে শরীরের কোনো অংশ বা কোনো লোম বাকী না থাকে। নাভি, বগল এবং অন্যান্য কুঁচকানো জায়গায় ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
(৮) সব শেষে একটু অন্য জায়গায় সরে গিয়ে উভয় পা ৩ বার ভালভাবে ধুয়ে নিন।
মনে রাখবেন:
(১) রাতে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে, সকালে ফজরের নামাযের আগে এবং দিনে করলে পরবর্তি নামাযের আগে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই গোসল করতে হবে। এ গোসলকে জানাবাতের গোসল বলা হয় এবং গোসল না করা পর্যন্ত নাপাক থাকাকে জানাবাতের অবস্থা বা জুনুবী বলে। জানাবত তথা ফরজ গোসলে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। স্বামী-স্ত্রী দুজনই যৌনাঙ্গের পবিত্রতার ব্যাপারে খুবই যত্নবান হতে হবে। স্বামী তার অঙ্গকে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিবে যেনো চামড়ার মধ্যে বীর্য আটকে থাকতে না পারে।
(২) পুরুষদের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের চুল ভালোভাবে ভেজাতে হবে।
(৩) এই নিয়ম অনুযায়ী গোসলের পর ওযু না ভঙ্গ হলে নতুন ওযুর প্রয়োজন নেই।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে পবিত্র কুরআন ও সহীহ সুন্নাহকে সঠিকভাবে অনুসরণ করার এবং আগে না জানা ভুলগুলোকে ক্ষমা করার তাওফীক দান করুন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ গোসলের নিয়ম এবং সঠিকভাবে গোসল করার সময় এসব বিষয়ে খেয়াল রাখার তাওফীক দান করুন। আমীন।