ওযু একটি আরবি শব্দ। এর আক্ষরিক অর্থ হল চারটি নির্দিষ্ট অংশ ধোয়া। ইসলামের পরিভাষায়, অযু হলো শরীরকে পবিত্র করার জন্য কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পবিত্র পানি দিয়ে ধৌত করা। সঠিক নিয়মে ওযু না হলে নামাজ হবে না, তাই ওযু সঠিক হওয়া জরুরী। আজ আমরা এখানে ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ সম্পর্কে জানবো।
ওযু সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “যারা ইমান এনেছ জেনে রেখো, যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াবে তার আগে নিজেদের মুখমণ্ডল ধুয়ে নেবে, তোমাদের দু হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে, মাথা মাসেহ্ করবে এবং উভয় পা গিরাসহ ধুয়ে নেবে।” (সূরা আল মায়িদা – ০৬)
ওযু সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “কেয়ামতের দিন আমার উম্মতগণকে এমন অবস্থায় পেশ করা হবে যে, তখন তাদের চেহারা দুনিয়ায় থাকিতে যে ওযু করেছিল, তার বরকতে এমন ঝকমক করতে থাকবে – যেমন ঘোড়ার কপালে চাঁদ উজ্জ্বল দেখায়।”
ওযু ভঙ্গের কারণ
কোরআন কিংবা হাদিসে ওযু ভঙ্গের ব্যাপারে কি বলেছে আমরা কি তা জানি? চলুন জেনে নেই আসলে কি কি কারণে ওযু ভেঙে যায়। ওযু ভঙ্গের কারণ এর মধ্যে মৌলিক ও প্রধান কারণ ৭টি। যথা-
(১) পেশাবের ও পায়খানা রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি।
পবিত্র কোআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও) (সুরা মায়িদা-৬) হজরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শরীর থেকে যা বের হয় তার কারণে অজু ভেঙ্গে যায়।
(২) পূঁজ, রক্ত বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর নাক থেকে যখন রক্ত পড়তো তখন তিনি ফিরে গিয়ে ওযু করতেন। [মুওয়াত্তা মালিক-১১০]
(৩) মুখ ভরে বমি করা।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে, যদি কোন ব্যক্তি বমি করে বা তার নাক দিয়ে রক্ত বের হয়, অথবা মোজি (সহবাসের পূর্বে সাদা পানি বের হয়) তাহলে সে যেন ফিরে যায় এবং অজু করে। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১২২১]
(৪) থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া।
হাসান বসরী (রহ.) বলেন, কোন ব্যক্তি যদি তার থুথুতে রক্ত দেখতে পায় এবং তার থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার অযু করতে হবে না। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ১৩৩০]
(৫) কাত বা চিৎ হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া।
ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভেঙ্গে যায় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে তা ভেঙ্গে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে থাকলে আপনার শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বাতকর্ম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে] (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ২৩১৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২০২)
(৬) মাতাল, পাগল বা অচেতন হলে।
হজরত হাম্মাদ (রহ.) বলেন, পাগল ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে নামাজের জন্য উযূ করতে হবে। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ৪৯৩]
(৭) নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে।
হজরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাযে উচ্চস্বরে হাসবে সে আবার ওযু ও নামায আদায় করবে। হজরত হাসান ইবনে কুতায়বা (রা.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসে, তখন সে অজু ও নামাজের পুনরাবৃত্তি করবে। [সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং ৬১২]
যেহেতু ওযুর উপর নামাজ নির্ভরশীল। সেহেতু ওযু অবশ্যই সঠিক পদ্ধতিতে করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক নিয়মে ওযু করার এবং কিসে ওযু ভঙ্গ হয় তা বুঝার তৈফিক দান করুন। আমিন।।