ইসলাম-পূর্ব আইয়ামে জাহেলিয়া যুগে আরবের মেয়েদের কে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হতো। পিতারা তাদের কন্যাদেরকে বোঝা মনে করতেন। তাদের সামাজিক ভাবে কোন অধিকার ছিল না। কেউ কেউ তাদেরকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করতেন এবং তাদেরকে জীবন্ত পুঁতে ফেলার প্রমাণও মেলে। একমাত্র ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষনে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করেছে।
ইসলামী যুগে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে দিয়েছেন অধিকার এবং করেছেন সম্মানিত। ঘৃণা, অবহেলা, নির্যাতন ও হত্যার মতো সকল নিকৃষ্ট কাছ থেকে মুক্তি দিয়ে তাদেরকে দিয়েছেন মুক্তির আনন্দ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠা করেছেন সর্বক্ষেত্রে। তিনি নারীদেরকে কন্যা হিসেবে যেমন দিয়েছেন সর্বোচ্চ মর্যাদা ঠিক তেমনি স্ত্রী ও মা হিসেবে ও নারীকে দিয়েছে পরিপূর্ণ মর্যাদা ও সম্মান।
নারীর মর্যাদা ও অধিকার
ইসলামে প্রথমত একজন নারী পায় কন্যার মর্যাদা তারপর স্ত্রী এবং পরবর্তীতে সেই পায় আবার মায়ের মর্যাদা।
কন্যা হিসেবে নারীর মর্যাদা
রাসূল (সঃ) বলেন, যে ঘরে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে সে ঘরে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। এবং ঘোষণা করেন যার একটি কন্যা সন্তান আছে সে একটি জান্নাতের মালিক। নিজ কন্যাদের ভালোবাসার মাধ্যমে তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে মেয়েদের কে ভালবাসতে হয়। তিনি কোথাও যাওয়ার সময় মেয়ে ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে বলে যেতেন এবং ফিরে এসে প্রথম, মেয়ে ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সাথে দেখা করতে।
স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা
স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা সর্বোচ্চ নিশ্চিত করেছেন ইসলাম। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন স্বামী তার স্ত্রীর ধার্যকৃত মোহরানা আদায় সহ তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক বিষয়াবলী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এবং তাদের সাথে অবশ্যই ভাল ব্যবহার করবে।
মা হিসেবে নারীর মর্যাদা
একবার এক সাহাবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ইসলামের খেদমতে এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমি জিহাদে যেতে ইচ্ছুক রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন, তোমার ঘরে কি তোমার মা আছে? সে বলল, জি আছে। মুহাম্মদ (সঃ) বললেন, যাও মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো তার পায়ের নিচে তোমার জান্নাত।
একবার এক ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার এর বেশী হকদার? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বললো, তারপর কে? রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন, তোমার মা। লোকটি বললেন, তারপর কে? রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন, তোমার মা। লোকটি আবার বললেন, তারপর কে? রাসূলের (সঃ) বললেন, তোমার বাবা’ (বুখারী- মুসলিম)। অর্থাৎ ইসলাম মায়ের মর্যাদা অনেক গুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। কেউ যদি তার মায়ের মনে কষ্ট দেয় বা তার ভালো কথাগুলো অমান্য করে তাহলে তার জান্নাতে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।
ইসলাম একজন নারীকে তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী ও সন্তানদের নিকট থেকেও নিশ্চিত করেছেন তার প্রাপ্য অধিকার। উত্তরাধিকার সূত্রেও সম্পদের মালিকানার সুযোগ দিয়েছেন ইসলাম। বিবাহের ক্ষেত্রে নারীর প্রথম সম্মতির সুযোগ দিয়েছেন ইসলাম। ইসলাম নারীর মর্যাদা ও অধিকার এবং পর্দা রক্ষার স্বার্থে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহনের স্বাধীনতা দিয়েছেন ইসলাম।
ইসলামে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন
ইসলাম যেমনি ভাবে দিয়েছেন নারীর মর্যাদা ও অধিকার তেমনি দিয়েছেন নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন। নিন্মে তা আলোচনা করা হলঃ
সমাজে নারীর অবস্থান এবং অধিকার নিয়ে আমরা নানা কথা শুনে থাকি৷ নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা বিষয়ে বর্তমানে যে কথাগুলাে বলা হয়, তার মধ্যে অনেকগুলােই গ্রহণযােগ্য। আবার কিছু কথার সাথে দ্বিমত পােষণ করার অবকাশ আছে৷ নারী-পুরুষ সকলেরই অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়া অনস্বীকার্য। কারণ সমাজ দিনে দিনে সামনে এগুচ্ছে৷ তাই শুধু নারী বা পুরুষের নয়, বরং সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
গত পঞ্চাশ বছরে সমাজ অনেকটা এগিয়েছে৷ এ সময়ে পুরুষের সাথে নারীরাও সমান-সমান না হলেও, এগিয়ে এসেছে৷ বেগম রােকেয়ার সময়ে যে সমাজ ছিল , সে সমাজকে আমরা অনেক পেছনে ফেলে এসেছি। তিনি দেখেছিলেন যে, সে সময়ে মেয়েরা লেখাপড়ার কোন সুযােগই পেতনা৷ সে সময়ে বেগম রােকেয়া জন্ম না নিলে এবং নারী শিক্ষার ব্যাপারে সাহসী উদ্যোগ না নিলে আজ আপনারা, নারীরা কেউই কিন্তু পড়ালেখা শিখতে পারতেন না। অবশ্য আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তখন অন্য কোন নারীকে পৃথিবীতে পাঠাতেন যিনি এই কাজটি করতেন৷ যা হােক, আমি সেদিকে গেলাম না।
সারা পৃথিবীতে, বিশেষ করে আমাদের দেশে পুরুষরা বিশ্বাস করে যে- নারী পুরুষের চেয়ে ছােট , তাদের কোয়ালিটি খারাপ এবং তারা নিচু৷ এই বিশ্বাস অবশ্য নারীর মধ্যেও কিছুটা বিদ্যমান। মানুষের মধ্যে কতগুলাে বিভ্রান্তি থেকে এ বিশ্বাসের জন্ম। আর এই বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে নারীর উপর অবহেলা, বঞ্চনা এবং নির্যাতন।
এখন আমাদের দেশ থেকে যদি নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হয়, তবে ইসলামকে বাদ দিয়ে তা করা যাবে না। আমি এটা খুব পরিষ্কারভাবে আপনাদের বলতে চাই যে, ইসলামকে বাদ দিয়ে আমাদের মত দেশে (যে দেশে মূলত নব্বই ভাগ মানুষ মুসলিম) চলা যাবে না। যারা ইসলাম থেকে বিদ্রোহ করেছে তারা কিন্তু টিকতে পারেনি, পারছে না। এক মহিলা বিদ্রোহ করেছিলেন-আমি নাম বলবাে না- তার পরিণতি ভাল হয়নি৷ খারাপ হয়েছে৷ বিনীতভাবে বলতে চাই যে, ইসলামের ‘ফ্রেমওয়ার্ক’- এর মধ্যে আমরা যদি এগুতে পারি, তবে তা সব চাইতে ভাল হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইসলামে এরকম একটি ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ আছে, যা নারীদের সামনে এগিয়ে দিতে পারে।
সত্যিকার অর্থেই ইসলাম নারীকে ক্ষমতায়িত করেছে এবং নারীকে সম্মানিত করেছে৷ নারীকে অধিকার দিয়েছে। সেগুলাে ব্যাখ্যা করার আগে আমি আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশন-এর নতুন ভিত্তি যেটা হতে পারে, সেটা বলতে চাই৷
কি সেই ভিত্তি? যে ভিত্তির উপর নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্য বিদ্যমান? আল্লাহ মানুষের চেহারা এক রকম করেন নাই। সকল দিক থেকে যে কোনাে দু’টি মানুষ সমান নয়৷ ওজন, উচ্চতা, রঙ, শিক্ষা ইত্যাদি সবকিছুতে একটি মানুষ থেকে আরেকটি মানুষ আলাদা। কিন্তু মৌলিকভাবে প্রতিটি মানুষ সমান। আল্লাহর কাছে সমান। তার চারটি প্রমাণ আমি আপনাদের দিচ্ছি।
১. আল্লাহ তায়ালা এ কথা খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, মূল মানুষ হচ্ছে ‘রূহ’। যাকে আমরা ‘ আত্মা’ বলি৷ মূল মানুষ কিন্তু শরীর না৷ দেহ তাে কবরে পঁচে যাবে। আমরা যারা ইসলাম বিশ্বাস করি তারা জানি , মূল মানুষ হচ্ছে ‘রূহ’। আল্লাহ সকল মানুষকে, তার রূহকে একত্রে সৃষ্টি করেন, একই রকম করে সৃষ্টি করেন এবং একটিই প্রশ্ন করেন। আল্লাহর প্রশ্নের উত্তরও নারী-পুরুষ সকলে একই দিয়েছিল৷ আমি সূরা আরাফের একটি আয়াত বলিঃ (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম) ‘ ওয়া ইজা আখাজা রাব্বকা’ (যখন আল্লাহ তায়ালা বের করলেন), ‘ মিম বানি আদামা’ (আদমের সন্তানদের থেকে), ‘ মিন জুহুরিহিম’ (তাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে-এটা একটা রূপক কথা) ‘জুররিয়াতাহুম’ (তাদের সন্তানদেরকে। অর্থাৎ সকল আত্মাকে) এবং সাক্ষ্য নিলেন তাদের ওপরে , ‘আমি কি তােমাদের প্রভু নই?’ তারা সকলে বললাে- সকল পুরুষ এবং নারী বললাে, ‘বালা’ (হ্যাঁ), ‘ সাহেদনা’ (আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আমাদের প্রভু)। (আয়াত নং-১৭২, সূরা আরাফ) তার মানে আল্লাহর সঙ্গে একটি পয়েন্টে সকল নারী এবং পুরুষের একটি চুক্তি হলাে যে, আপনি আমাদের প্রভু; আমরা আপনাকে মেনে চলবাে৷ এক্ষেত্রে পুরুষের চুক্তি আলাদা হয়নি৷ নারীর চুক্তি আলাদা হয়নি৷ সুতরাং আমরা দেখলাম , আমাদের Ideological foundation এর প্রথম কথা হচ্ছে এই যে, মূল মানুষ হচ্ছে ‘ রূহ’ এবং তা সমান৷ এই সাম্যের পরে যদি কোনাে অসাম্য থেকে থাকে তাহলে তা অত্যন্ত stats Insignificant, Very Small; ols মানে হচ্ছে, মানুষের আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। এক এবং সে মানুষ হিসেবে এক৷ এটি হলাে নারী-পুরুষের সাম্যের প্রথম ভিত্তি৷
২. আমরা পুরুষরা গর্ব করি যে, আমাদের শারীরিক গঠন বােধহয় নারীর তুলনায় ভালাে, আল্লাহ বােধহয় আমাদেরকে তুলনামূলকভাবে শ্রেষ্ঠ করে বানিয়েছেন এবং মেয়েরা আনকোয়ালিফায়েড। কিন্তু আল্লাহ একটি কথা কোরআনে খুব পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে, সকল মানুষের মধ্যে পার্থক্য আছে, কিন্তু প্রতিটি মানুষ ফার্স্ট ক্লাশ। যারা নামাজ পড়েন তারা এই আয়াতটা জানেন , সূরা ‘ দ্বীন’-এ আল্লাহ বলছেন (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম) ‘ লাকাদ খালাকনাল ইনছানা ফি আহছানি তাক্বওয়ীম’ (নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম কাঠামােতে-পুরুষকে বলেন নাই)। তার মানে আমাদের গঠনে পার্থক্য আছে, আমরা এক না, আমরা ভিন্ন কাঠামাের। কিন্তু সবাই ফার্স্ট ক্লাস, স-বা-ই ফার্স্ট ক্লাস। সুতরাং নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য, নতুন নারী আন্দোলনের জন্য অথবা নতুন মানব আন্দোলনের জন্য পুরুষদের এ কথা বলা ঠিক না যে, মেয়েদের স্ট্রাকচার খারাপ। আল্লাহ্ তাতে অসন্তুষ্ট হবেন। আপনারা যারা মােমেন, যারা বিশ্বাসী-তারা এ কথা বলবেন না। সুতরাং নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্যের এটা হলাে দ্বিতীয় প্রমাণ৷ মৌলিক এ কারণে বলছি যে, নারী-পুরুষের মধে ছােটোখাটো পার্থক্য বিদ্যমান।।
৩. আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে বলছেন যে, সকল মানুষ এক পরিবারের। আদম এবং হাওয়া পরিবারের। সূরা নিসার প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলছেন , হে মানব জাতি , সেই রবকে তুমি মানে যিনি তােমাদেরকে একটি মূল সত্ত্বা (নফস) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সত্ত্বা থেকে তার সাথীকে সৃষ্টি করেছেন এবং এই দুই জন থেকে তিনি অসংখ্য নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। তার মানে আমরা এক পরিবারের।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানব জাতি একটি পরিবার। সব পরিবারের উপর হলাে মানব জাতির পরিবার। তার মানে আমাদের মৌলিক সম্মান ও মর্যাদা, তা সমান৷ ছােট খাটো কারণে আমাদের মধ্যে পার্থক্য হয়ে যায়। তবে জাগতিক মর্যাদা আসল মর্যাদা না।
আইনের ভাষায় যেমন বলা হয়, আইনের চোখে সকল মানুষ সমান, তেমনি আল্লাহর কাছেও সবাই সমান৷ আল্লাহর কাছে সম্মানের একমাত্র ভিত্তি হলাে ‘ তাক্বওয়া’ | আল্লাহ বলেন নাই যে, তার কাছে পুরুষ সম্মানিত বা নারী সম্মানিত। আল্লাহ বলছেন, ‘ ইন্না আকরামাকুম ইন্দাল্লাহি (আল্লাহর কাছে), ‘ আতাকুম’ (যে মেনে চলে আল্লাহকে)। আল্লাহর কাছে যদি মর্যাদার এই ভিত্তি হয়, তাহলে মানুষের পার্থক্যে কি কিছু যায় আসে? আল্লাহ বলছেন তিনি তাক্বওয়া’ ছাড়া (আল্লাহকে কে মানে আর কে মানেনা) কোনাে পার্থক্য করেন না। অতঃপর আমরা এক পরিবারের সন্তান, আমাদের মৌলিক মর্যাদা সমান (সূরা হুজুরাত, আয়াত-১৩)। আরেকটি কথা, কোরআনের সূরা নিসার একটি আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ বলছেন, ভয় পাও সেই আল্লাহকে বা মান্য করাে সেই আল্লাহকে , যার মাধ্যমে তােমরা একে অপরের কাছে অধিকার দাবী করে থাক। এবং ভয় পাও’ গর্ভ’- কে বা ‘ মা’- কে৷ আল্লাহ বলছেন ‘ গর্ভ’- কে ভয় পাও। কোরআন শরীফের এই আয়াতটির তফসিরে সৈয়দ কুতুব নামে মিশরের একজন বিখ্যাত আলেম লেখেন । এই ভাষা পৃথিবীর কোনাে সাহিত্যে কোরআনের আগে লেখা হয় নাই। আল্লাহ ‘গর্ভ ‘-কে ভয় করতে বলে মা’-কে সম্মান করার কথা বলেছেন, নারী জাতিকে সম্মান করার কথা বলেছেন। সুতরাং আমাদের মৌলিক সামাজিক মর্যাদা এক্ষেত্রেও সমান বলে প্রতীয়মান হলাে। এটা আমাদের নতুন আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশনের তৃতীয় প্রমাণ।
৪. আল্লাহ্ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টির সময় বলে দিলেন যে, তােমরা সবাই খলিফা। তিনি বললেন, ইন্নি জায়লুন ফিল আরদে খলিফা। আল্লাহ বলেন নাই যে, নারী পাঠাচ্ছেন বা পুরুষ পাঠাচ্ছেন। এমনকি তিনি বলেন নাই যে, তিনি মানুষ পাঠাচ্ছেন; আল্লাহ বললেন, তিনি খলিফা পাঠাচ্ছেন৷ পাঠালেন মানুষ, বললেন খলিফা। মানুষকে তিনি খলিফা নামে অভিহিত করলেন৷ খলিফা মানে প্রতিনিধি। আমরা পুরাে মানব জাতি হচ্ছি আল্লাহর প্রতিনিধি। পুরুষ, নারী নির্বিশেষে আমরা প্রত্যেকে তাঁর প্রতিনিধি-আল্লাহর প্রতিনিধি৷ তবে এ কথা ঠিক যে, যদি আমরা গুণাহ্ করি, অন্যায় করি, খুন করি, অত্যাচার করি, জুলুম করি, ঈমান হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমাদের খলিফার মর্যাদা থাকে না। কিন্তু মূলতঃ আমরা আল্লাহ পাকের খলিফা (কুরআন ২:৩০; ৩৫:৩৯)।
এই খলিফার মর্যাদার মধ্যেই রয়েছে সকল ক্ষমতায়ন। যে ক্ষমতায়নের কথা আমরা বলি৷ ক্ষমতা ছাড়া কেউ কোনাে দায়িত্ব পালন করতে পারে না। খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে গেলে প্রত্যেক নারী এবং পুরুষের কিছু ক্ষমতা লাগবে। নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তি এই খেলাফতের মধ্যে রয়েছে৷ শুধু নারী নয়, ‘ খেলাফত’ শব্দের মধ্যে নারী, পুরুষ, গরিব, দুর্বল সকলের ক্ষমতায়নের ভিত্তি রয়েছে। সুতরাং নারী পুরুষ মৌলিক সাম্যের এটি হলাে চতুর্থ প্রমাণ।
ইসলাম চায় every man, every woman, every person should be empowered ; কিন্তু এই মুহর্তে যদি নারীরা বঞ্চিত থেকে যায়, তবে তাদেরকে ক্ষমতায়িত করতে হবে।। পুরুষরা কোনােদিন বঞ্চিত হলে তাদেরকে ক্ষমতায়িত করতে হবে। তবে যে বঞ্চিত তার কথা আমাদের আগে ভাবতে হবে ; নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য বর্তমানে আমাদের আগে কাজ করতে হবে৷
আজকে আপনাদের আলােচনায় মেয়েদের আসল কাজ কি, তা নিয়ে কথা উঠেছে। তারা কি ঘরে বসে থাকবে? এমন প্রশ্ন উঠেছে। কোনাে মেয়ে যদি তার স্বাধীন সিদ্ধানে ঘরে থাকতে চায়, তার সেটা করার অধিকার আছে৷ পুরুষের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযােজ্য। কিন্তু আল্লাহ কোথাও বলেন নাই যে, নারীদের ঘরে বসে থাকতে হবে, বাইরের কাজ নারীরা করতে পারবে না। বরং আল্লাহ মূল দায়িত্ব নারী-পুরুষের একই দিয়েছেন। সূরা ‘তওবা’ র ৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে, নারী পুরুষের দায়িত্ব ৬টি৷ আয়াতটি এরকম: মােমেন পুরুষ এবং মােমেন নারী একে অপরের অভিভাবক (ওয়ালী) , একে অপরের বন্ধু, একে অপরের সাহায্যকারী (এই আয়াত কোরআন শরীফের সর্বশেষ সূরা সমূহের একটি উল্লেখিত বিষয়ে আগে যে সকল আয়াত আছে সেগুলােকে এই আয়াতের আলােকে ব্যাখ্যা করতে হবে)। এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, নারী পুরুষ একে অপরের অভিভাবক, গার্ডিয়ান। অনেকে বলে যে, নারী গার্ডিয়ান হতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন, নারী গার্ডিয়ান হতে পারবে। মূল কোরআনে এ ক্ষেত্রে কোনাে পার্থক্য নেই৷
নারী-পুরুষের নির্ধারিত ৬টি ডিউটি হলােঃ ক. তারা ভালাে কাজের আদেশ দিবে৷ খ. মন্দ কাজের ব্যাপারে নিষেধ করবে৷ গ. উভয়ে নামাজ কায়েম করবে৷ ঘ. যাকাত দিবে। ঙ. আল্লাহকে মানবে। চ. রাসুলকে মানবে৷
এসব কথার মাধ্যমে আল্লাহ নারীদের সকল ভাল কাজে অংশগ্রহণের কথা বলেছেন। এটাই ইসলামের নীতি৷ এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন যে, যারা এই ৬টি দায়িত্ব পালন করবে তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা রহমত করবেন। কোরআনের বেশ কয়েকটি তফসির পড়ে এবং পবিত্র কোরআন ও সুন্নাতে রাসুলকে পুরােপুরি বিশ্বাসী একজন মানুষ হিসেবে আমি বিশ্বাস করি যে, এই ছয়টি দায়িত্বের মধ্যে নারী পুরুষ সবাই সমান। আমার মনে হয় আমরা ইসলামের মূল জিনিস পরিত্যাগ করে ছােট-খাটো জিনিস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। মানুষের তৈরী বিভিন্ন কিতাবের ওপর নির্ভর করছি। আল্লাহর মূল কিতাবকে আমরা সেই তুলনায় গুরুত্ব দিচ্ছি বলে মনে হচ্ছে না। শেষে একটি কথা বলি, ইসলামকে যদি আপনারা অন্যের মাধ্যমে শেখেন , তবে আপনারা কখনােও মুক্তি পাবেন না। আপনাদেরকে কোরআনের পাঁচ-ছয়টি তাফসির নিজে পড়তে হবে। অনেকে অনুবাদের মধ্যে তাদের নিজেদের কথা ঢুকিয়ে দেয়। ফলে পাঁচ-ছয়টি বই পড়লে আপনারা বুঝতে পারবেন। কোথায় মানুষের কথা ঢুকছে; আর আল্লাহর কথাটা কি৷ কয়েক রকম ব্যাখ্যা পড়লে আপনি ঠিক করতে পারবেন কোন ব্যাখ্যাটা সঠিক।
ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার এবং ক্ষমতায়নের গুরুত্ব অতুলনীয়। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে অধ্যায়ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। বেশি বেশি শেয়ার করে দ্বীনের কাজে সহায়তা করুন। কোন মন্তব্য থাকলে তা নিচের কমেন্টস বক্সে লিখে জানান, আমরা তার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো। আল্লাহ আমাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।।