মৃত্যু নিয়ে কিছু কথা ও মৃত্যুর হাকীকত

 

মৃত্যু নিয়ে কিছু কথা

মৃত্যু নিয়ে কিছু কথা

Contents hide

“কুল্লে নাফছিন যায়েকাতুল মাউত” প্রত্যেক প্রানীই মৃত্যুর  স্বাধ গ্রহন করবে। পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা অস্বাভাবিক আর মরে যাওয়াটা হচ্ছে স্বাভাবিক। জন্মিলেই মরিতে হবে। আর জন্ম মৃত্যুর মাঝখানে যে সময় সেটাই হচ্ছে জীবন। ছোট এ জীবনে মানুষের অপূর্নতার শেষ নেই। ছোট্র এই জীবনে দুনিয়াতে যে যা করবে আখিরাতে সে তার ফল ভোগ করবে। একজন মুমিন ব্যক্তির তুলনায় একজন জাহান্নামী ব্যাক্তির মৃত্যু যন্ত্রনা হবে অত্যান্ত ভয়াবহ। আজ এ অধ্যায়ে আমরা মৃত্যু নিয়ে কিছু কথা আলোচনা করবো। ধৈর্য্য ‍সহকারে অধ্যায়ন করলে আশা করি অনেক কিছু জানার সুযোগ হবে। তো চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ

 

মৃত্যুর যন্ত্রণা

হযরত হাসান (রাঃ) বলেন যে, হযরত রাসূলে করীম (সা) ফরমায়েছেন, মৃত্যুর কষ্ট তরবারীর তিনশত আঘাতের সমান। আরাে এরশাদ করেছেন যে, মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট আমার উম্মতের জন্যে নসীহত স্বরূপ।

 

মৃত ব্যক্তির চিৎকার

হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেন, প্রত্যেক মৃত ব্যক্তি চিৎকার করে, মানুষ ছাড়া সবাই এটা শুনে। মানুষ যদি শুনত, তাহলে বেহুঁস হয়ে যেত। যদি সে মুদ্দা নেক হয়, তাহলে নিজেকে যে ফেরেশতা নিয়ে যাচ্ছে তাকে বলে যে, (ভাই) দ্রুত চল, যেথায় নিয়ে যাচ্ছ, যদি তােমরা এটা দেখ, তাহলে তােমরাও অনেক তড়িগড়ি করবে। আর মৃত ব্যক্তি যদি বদকার হয়, তাহলে বলে যে, তাড়াতাড়ি কর না। তােমরা যদি সে জায়গা দেখতে, তাহলে কক্ষনাে আমাকে তথায় নিয়ে যাবে না ।।

দাফন শেষে দু’জন ফেরেশতা আসে, অতি কালাে ও নীলাভ বর্ণের চোখ তাদের। তার মাথার দিক থেকে আসলে নামায বাধা দিয়ে বলে যে, তােমরা এদিক দিয়ে এসাে না, কেননা এ ব্যক্তি এ কবরের ভয়ে রাত্রে নামাযে নিমজ্জিত থাকত। (অনুরূপ ভাবে) পায়ের দিকে থেকে “মাতা-পিতার ফরমাবরদারী” বাধা দেয়, ডান দিক থেকে সদকা এবং বাঁ দিক থেকে রােজা প্রতি বন্ধক হয়। মৃত্যু নিয়ে উক্তি এ অধ্যায়ে তা সম্পূর্ণ আলোচনা করা হল।

উপদেশঃ

দুনিয়া মাত্র ক’দিনের জীবন, আজকের এ জীবনে ও সুস্থ্যতার মধ্যে কবর ও হাশরের জন্যে বেশ কিছু করার সুযােগ রয়েছে। মরণের পর কবরে বসে মানুষ কিছুই করতে পারবে না। একবার কালেমায়ে শাহাদাত বা কোন তাসবীহ পড়ারও সুযােগ হবে না। 

সুতরাং সে যদি দুনিয়ায় কিছু না করে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দুনিয়ার জীবন মূল ধন তুল্য, মানুষ দুনিয়ার মূলধন নিয়ে সব ধরনের ব্যবসা করতে পারে। মূল ধন খতম হয়ে গেলে যেমন ব্যবসা করা যায় না, তদ্রুপ দুনিয়ার জিন্দেগী খতম হয়ে গেলেও কোনরূপ আমল করা যাবে না । 

অতএব আজই মেহনত করে কামাই করা উচিত। সময় চলে গেলে কালকে শত চেষ্টা ও আগ্রহ করলেও কোনরূপ ফায়েদা হবে না, লাভ হবে না। অতএব বুদ্ধিমানগণ নছীহত গ্রহণ কর।

 

মৃত্যুর উদাহরণ

হযরত ওমর (রাঃ) হযরত কা’ব (রাঃ)-কে বললেন, মৃত্যুর কিছু অবস্থা বর্ণনা করুন। বললেন, মৃত্যুকে একটি কাঁটাদার বৃক্ষ মনে কর, যা মানুষের পেটে ঢুকিয়ে দেয়া হয় এবং এর একটি কাঁটা তাঁর রগে ও আঁতে বিদ্ধ হয়ে যায়, অতঃপর কোন শক্তিশালী মানুষ এটাকে জোরে টেনে বের করে, আর সে কাটাদার বৃক্ষ গােশত ও চামড়া ছিড়ে বের হয়ে আসে। এটাই মৃত্যুর অবস্থা।

 

 

তিনটি জিনিসকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব

জনৈক বুজুর্গ বলেন, তিনটি জিনিসকে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি ভূলতে পারে না। 

১। দুনিয়া এবং দুনিয়ার ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি 

২। মৃত্যু এবং 

৩। সেই সব মুসীবত, যা থেকে মানুষ নিরাপদ হতে পারে না।

 

 

চার ব্যক্তিই চার জিনিসের ক্বদর জানে 

১। যৌবনের ক্বদর (মূল্য) বৃদ্ধই জানে 

২। সুখ-শান্তির ক্বদর বিপদ গ্রস্তই জানে 

৩। সুস্থ্যতার ক্বদর রােগীই জানে 

৪। জিন্দেগীর ক্বদর মৃত ব্যক্তিই জানতে পারে।

 

মৃত্যুর হাকীকত 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনিল আস (রাঃ) বলেন যে, আমার পিতা (আমর ইবনিল আস) অনেক সময় বলতেন, “সেই ব্যক্তির প্রতি আমার বিস্ময়! যার কাছে মৃত্যুর আলামত জাহির হতে থাকে, আর তার হুঁস-জ্ঞান বিদ্যমান থাকে, জবানও বন্ধ না হয়, তবু সে মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা করে না।” কিন্তু যখন তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসল। হুঁস-জ্ঞানও বিদ্যমান ছিল, জবানও জারী ছিল, তখন আমি আরজ করলাম, আব্বাজান! আপনি তাে এমন অবস্থায় উপনীত ব্যক্তিদের মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা না করার উপর বিস্ময় প্রকাশ করতেন, এখন আপনি কিছু মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা করুন।

বললেন, বৎস! মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তবে আমি কিছু বলছি- “আল্লাহর কসম, এমন মনে হচ্ছে যে, আমার কাঁধ সমূহে পাহাড় রাখা আছে, আমার আত্মা সুঁইয়ের ছিদ্র দিয়ে বের হচ্ছে, আমার পেটে কাঁটা ভরতি আছে, আর এমন লাগছে যে, আসমান-জমিন উভয়টি যেন মিলে গেছে, আর আমি এ দু’টোর মাঝখানে দলিত হচ্ছি।”

 

 

মৃত্যুকে স্মরণে রাখা ও না রাখার পরিণতি

হযরত হামেদুল্লোফাফ (রহঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি মৃত্যুকে বেশী পরিমাণে স্মরণ করে, তাকে তিনটি বিষয়ে সম্মানিত করা হয় ।

১। দ্রুত তওবার তওফিক হয়।

২। আল্লাহ্ পাক যা কিছু দেন, তাতে তুষ্ট থাকার নসীব হয়।

৩। এবাদতে একাগ্রতা হাসিল হয়।

আর যে ব্যক্তি মৃত্যুকে ভুলে যায়, তাকে তিনটি বিষয়ে শাস্তি দেয়া হয়, 

১। দ্রুত তওবা নসীব হয় না। 

২। যথেষ্টতার উপর তুষ্টি আসে না, আর 

৩। এবাদতে আলস্যতা সৃষ্টি হয় ।

 

 

মৃত্যু-স্বাদ অত্যন্ত তিক্ত

হযরত ঈসা (আঃ)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তি বললাে, আপনি তাে সদ্য মৃত জিন্দা করতে পারেন, তাহলে কোন পুরানাে মৃতকে জীবিত করে দেখান। তাঁর দাবীর প্রেক্ষিতে তিনি সাম ইবনে নূহ (আঃ)-কে আল্লাহর হুকুমে জীবিত করলেন। সুতরাং যখন তিনি কবর থেকে উঠলেন, তখন মাথার চুল ও দাঁড়ি সাদা ছিল, হযরত ঈসা (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ শুভ্রতা কিভাবে হল? আপনার সময়ে তাে বাৰ্ধক্যতা ছিল না।

তিনি বললেন যে, যে আওয়াজ শুনেছি, এতে মনে করেছি যে, কিয়ামত হয়ে গেছে, তাই এটার ভয়েই চুল সাদা হয়ে গেছে। (কি আশ্চর্য! কিয়ামতের ভয়াবহতা) অতঃপর জানতে চাইলেন যে, আপনার ইন্তেকাল কবে হয়েছিল? বললেন, চার হাজার বছর আগে, কিন্তু এখনাে মৃত্যুর স্বাদ শেষ হয়নি।

 

 

পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটির আগে গুরুত্ব দেওয়া

হযরত মায়মূন ইবনে মেহরান (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেনঃ পাঁচটিকে পাঁচটির আগে গণীমত মনে কর।

১। বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, 

২। অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, 

৩। ব্যস্ততার আগে অবসরকে, 

৪। দৈন্যতার আগে প্রাচুর্যকে, 

৫। মৃত্যুর আগে জিন্দেগীকে।

* যৌবন ও শক্তি থাকাকালে যে এবাদত ও মেহনত হতে পারে, বার্ধক্যে এটার কল্পনাও করা যায় না। দ্বিতীয়তঃ যখন যৌবনকালে গুনাহ ও অলসতার অভ্যাস গড়ে উঠে, তখন বৃদ্ধকালে এটার পরিবর্তন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।।

* সুস্থ্যতার জীবন নিতান্তই মূল্যবান, এটার সঠিক অনুমান অসুস্থ্যতার সময়ই হয়ে থাকে। তাই সুস্থ্য জীবনকে নষ্ট করা মােটেই সমীচীন নয়।।

* রাতের সময় অবসর। সুতরাং যদি এটাকে নষ্ট করে দেয়া হয়, এবাদত-বন্দেগী, জিকির-আজকারে অতিবাহিত না করা হয়, তাহলে দিনে দুনিয়ার ব্যস্ততায় কোথা থেকে অবসর আসবে, বিশেষ করে ঠাণ্ডা মৌসুমে।

 

কবর হয়তাে বেহেস্তের বাগিচা অথবা দোযখের টুকরা

হযরত রাসূলে মাকবুল (সা) এরশাদ করেন, কবর বেহেস্তের বাগান (মুমিনের জন্যে) অথবা দোযখের টুকরা (কাফেরের জন্যে)।

অতএব, মৃত্যুকে বেশী পরিমাণে স্মরণ কর, যা তােমাদের জীবনের আশা-আকাংখার উপর বালি ঢেলে দেয়।

   পরিশেষে, বলতে চাই মৃত্যু যেহেতু অবধারিত, মরতেই যেহেতু হবে। তাহলে মরার আগেই মরার প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে। মৃত্যুর সাথে সাথেই সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়, তাই বেঁচে থাকতেই আমাদের উচিত আমলের গাছ লাগানো। আজ আমরা মৃত্যু নিয়ে কিছু কথা এই শিরোনামে মৃত্যু সংক্রান্ত যে আলোচনা করা হল, আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। প্রচার করুন বা শেয়ার করুন যাতে মৃত্যু নিয়ে কিছু কথা এই শিরোনামে মৃত্যু সংক্রান্ত সকল বিষয়াবলী সম্পর্কে সবাই জেনে সে অনুযায়ী আমল করতে পারে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তৈফিক দান করুক। আমিন।।

আর ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং কেমন লাগলো নিচের কমেন্ট বেক্সে কমেন্টস করে জানাবেন। আল্লাহ হাফেজ।।

 

আরোও জানতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!