প্রতিটি মুসলিম পরিবারেই যখন একটি ছেলে বড় হয়, তখন খৎনা বা মুসলমানি করানোর তোরজোড় শুরু হয়ে যায়। খৎনা কি সে সম্পর্কে প্রায় সবারই ধারণা আছে। তবে এ নিয়ে তেমন প্রচার না হওয়ায় অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে। খৎনা বা মুসলমানি হল লিঙ্গের সামনের বা মাথার অতিরিক্ত চামড়া যা লিঙ্গের সংবেদনশীল অংশকে ঢেকে রাখে তা কেটে ফেলা। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে খৎনা সমাজ ও ধর্মের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, তবে এ নিয়ে তেমন প্রচার নেই। তাই প্রচুর পরিমাণে শিশুর খৎনা হাজামের মাধ্যমে করনো হয়। অনেকেই জানেন না যে হাসপাতালে শিশুর খৎনা করানোর ব্যবস্থা আছে।
খৎনা কেন করা হয়
মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের ধর্মীয় কারণে খৎনা করা হয়। ফাইমোসিস, প্যারাফাইমোসিসের মতো কিছু রোগে খৎনা বা মুসলিম প্রয়োজন। ফাইমোসিস হল যখন লিঙ্গের মাথার ত্বক এমনভাবে মূত্রনালীকে ঢেকে রাখে যে এটি সঠিকভাবে প্রস্রাব করতে পারে না। প্রস্রাব করতে না পেরে লিঙ্গের মাথা ফুলে যায় এবং শিশু যন্ত্রণায় কাঁদতে থাকে। এভাবে দীর্ঘ সময় চলতে থাকলে মূত্রনালীর সংক্রমণ এমনকি কিডনি ফেইলিওর হতে পারে। আবার অনেক সময় পুরুষাঙ্গের মাথার চামড়া উল্টে গিয়ে টানটান হয়ে যায়। ফলে ত্বক আর সামনে পেছনে নাড়াতে পারে না। এক্ষেত্রে মাথার দিকে ফুলে যায় এবং রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। এসকল ক্ষেত্রে খৎনার জরুরী প্রয়োজন রয়েছে। অনেক সময় ছোট বাচ্চাদের পুরুষাঙ্গ প্যান্টের চেনের সাথে আটকে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতেও প্রায়ই খৎনা করা হয়।
খৎনার উপকারিতা
আপনি জেনে অবাক হবেন যে খৎনার অনেক উপকারিতা রয়েছে! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হল খৎনা লিঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে শুধুমাত্র খৎনা মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে ক্যান্সার সৃষ্টি করে না। পুরুষাঙ্গের মাথার বাড়তি চামড়ার নিচে এক ধরনের সাদা পদার্থ জমে এবং এটিই পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
কখন খৎনা করা যাবে না
হাইপোস্পেডিয়াসিস রোগে খৎনা করানো যায় না। এটি পুরুষাঙ্গের একটি জন্মগত ত্রুটি। এতে প্রস্রাবের নালী পুরুষাঙ্গের মাথায় না থেকে নিচের দিকে থাকে। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন এবং খৎনার আগে জন্মগত ত্রুটি সংশোধন করতে হবে। খৎনার আগে রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। কারণ দেখা গেছে যে শুধুমাত্র খতনা করার কারণে অনেক রোগীর রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে। অনেক শিশুর জন্মগত রক্তপাতের সমস্যা হতে পারে। তাই খতনার আগে শিশুর জন্মগত রক্তক্ষরণের সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা করা জরুরি।
সতর্কতা
অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা খৎনা করা কোন সমস্যা নয়। তবে হাজামদের দিয়ে খতনা করালে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া, অতিরিক্ত বা কম চামড়া কেটে ফেলা, পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথা কেটে ফেলার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের ক্ষেত্রে এসব সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে হাজামের বদলে ডাক্তারের মাধ্যমে খৎনা করা ভালো। বাংলাদেশের সব হাসপাতালেই শিশুর খৎনা করানো হয় এবং খরচ খুবই কম।
নারীদের খৎনা
নারীদেরও খৎনা হয়! অনেকেই এ বিষয়ে অবগত নন! বিশ্বের কিছু দেশে সত্যিই এই ধরনের অভ্যাস আছে। ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কুর্দিস্তান এবং ইয়েমেন সহ আফ্রিকা মহাদেশের ২৭টি দেশে নারীদের মুসলমানি একটি ধর্মীয় রীতি হিসেবেই প্রচলিত। আজ থেকে নয়, আধুনিক বিশ্ব সৃষ্টির প্রায় এক শতাব্দী আগে থেকে অনেকেই এই রীতি অনুসরণ করে আসছেন। আর সংখ্যাটাও নগণ্য নয়! এমনই বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন বিশারা নামের এক নারী।
তিনি বলেন, “আমার চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং আমার হাত আমার পিঠের পিছনে শক্তভাবে বাঁধা ছিল। যৌনাঙ্গের বাইরের চামড়া শক্ত করা হয় এবং দুই পা দু’দিকে মেলে ধরে যৌনাঙ্গের বাইরের চামড়া দু’টি শক্ত করে পিন কিছু দিয়ে আটকে দেয়া হয়। আমি তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম এবং চিৎকার করতে থাকলাম। কেউ আমার কান্নার জবাব দেয়নি। আমি লাথি মেরে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলাম। দানবের মত কেউ আমার পা চেপে ধরল। ‘
বিশারা বলেন, এটা খুবই কঠিন। অন্য সব মেয়েদের একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ব্যথার একমাত্র নিরাময় ছিল স্থানীয়ভাবে তৈরি ভেষজ। ছাগলের মতো তারা আমার পা ধরে ক্ষতস্থানে ভেষজ প্রয়োগ করে। এভাবেই প্রত্যেক মহিলার খতনা করা হয়।
বিশ্বে প্রতি ২০ জন মেয়ে বা মহিলার মধ্যে একজনের খৎনা করা হয়, যাকে ইংরেজিতে FM বা Female genital mutilation বলা হয়। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় বিশ কোটি নারী রয়েছে যাদের আংশিক অথবা পুরো খতনা অর্থাৎ যৌনাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। অনেক নারী ও মেয়ের শিশু অবস্থাতেই এ রকম খতনা করা হয়, এমনকি শিশুদেরও।
এটি প্রায়ই বয়ঃসন্ধিকালে করা হয়। এর ফলে নারীদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে তারা সারা জীবন বয়ে বেড়ায়। ইউনিসেফের মতে, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ২৯টি দেশে এই অনুশীলনটি ব্যাপক ভাবে প্রচলিত, যদিও তাদের মধ্যে ২৪টিতে এটি নিষিদ্ধ। এমনকি নারীদের এরকম যৌনাঙ্গ কর্তন বন্ধের আহবান জানিয়ে প্রতিবছরের ৬ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে জাতিসংঘ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ইসলামের সঠিক অনুশাষন বুঝে অর্থাৎ নবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সঃ) এর দেখানো পথ সম্পর্কে জেনে তার সঠিক প্রয়োগ এর মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম আদায় করার তৈফিক দান করুন। আমিন।।