“কবিরা গুনাহ” হচ্ছে বড় গুনাহ আর “সগিরা গুনাহ” হচ্ছে ছোট গুনাহ। আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে অপচন্দের এবং মারাত্বক অপরাধ হচ্ছে আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা। আর এটি হচ্ছে কবিরা গুনাহ। এরকম অসংখ্য কবিরা গুনাহ আছে যা নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। আজ আমরা নিন্মে কবিরা গুনাহ কি এবং কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় সমূহ নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো। তো চলুন শুরু করা যাক-
কবিরা গুনাহ
কবিরা গুনাহের আভিধানিক অর্থ মহাপাপ বা বড় গুনাহ।
আর শরীয়তের পরিভাষায় যেসব কাজ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন এবং যার জন্য শাস্তির বিধান আছে বা আল্লাহর ক্রোধের ঘোষণা আছে, তাকে কবীরা গুনাহ বলা হয়।
গুনাহ দুটি ভাগে বিভক্ত – প্রথমত, কবিরা গুনাহ; দ্বিতীয়ত, সগিরা গুনাহ। কিছু লোক বলে যে মূলত সব পাপই পাপ, এর জন্য কোন বিভাজন নেই। তবে মুহাক্কিক উলামায়ে কিরামের মতে, পাপ দুই প্রকার। সগিরা গুনাহ এবং কবিরা গুনাহ।
কবিরা গুনাহ এর সংখ্যা
কুরআন ও হাদিসে একসঙ্গে কবির গুনাহের পূর্ণ সংখ্যা উল্লেখ নেই। যাইহোক, কুরআন ও হাদিসে কবীরা গুনাহসমূহের অন্তর্ভুক্ত সকল গুনাহকে আলেমগণ ৭০ বলে বর্ণনা করেছেন। আবার তাদের কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন যে তার সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। নিন্মে কতিপয় কবিরা গুনাহ সমূহ উল্লেখ করা হলঃ
- আল্লাহর সাথে শরীক করা
- নামাজ ছেড়ে দেওয়া
- পিতামাতার অবাধ্যতা
- অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করা
- যাদু করা
- এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ করা
- জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন
- সতী-সাধ্বী বিশ্বাসী নারীদের অপবাদ দেওয়া
- রোজা ছেড়ে দেওয়া
- যাকাত প্রদান না করা
- ক্ষমতা থাকলেও হজ না করা
- যাদুর বৈধতায় বিশ্বাসী
- প্রতিবেশীকে হয়রানি করা
- অহংকারী হওয়া
- চুগলখোরি করা
- আত্মহত্যা করা
- আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা
- অবৈধ উপার্জিত অর্থ খাওয়া
- উপকার করে খোটা দেওয়া
- মাদক গ্রহণ করা
- জুয়া খেলানো
- নিয়তি অস্বীকার করা
- প্রস্রাব করে পবিত্র না হওয়া
- রাসূল পাক (সাঃ) এর নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করা
- মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা
- মিথ্যা বলা
- মিথ্যা শপথ করা
- মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা
- ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া
- সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া
- গোপনে মানুষের কথা শোনার চেষ্টা করা
- হিল্লা বা চুক্তি বিবাহে লিপ্ত থাকা
- মানুষের মর্যাদায় আঘাত দেওয়া
- মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চস্বরে কাঁদা
- মুসলিম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা
- একজন মুসলমানকে অপমান করা বা তার সাথে যুদ্ধ করা
- অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়া
- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবাই করা
- মাফে কম দেওয়া
- ঝগড়ায় অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা
- ইসলামী আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার বা প্রশাসন পরিচালনা না করা
- জমির সীমানা পরিবর্তন করা বা জোর করে পরের জমি দখল করা
- অতিরিক্ত চুল সংযুক্ত করা
- পুরুষরা মহিলাদের বেশ ধরে রাখা
- মহিলারা পুরুষের বেশ ধরে রাখা
- কামনার চোখে বিপরীত লিঙ্গের দিকে তাকানো
- কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা
- পুরুষদের পায়ের গোড়ালির নিচে ঝুলন্ত কাপড় পরা
- মুসলিম শাসকের প্রতি আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করা
- ডাকাতি করা
- চুরি করা
- সুদের লেনদেন করা, সুদের হিসাব করা বা সাক্ষী হওয়া
- ঘুষ লেনদেন করা
- স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাস করা
- জুলুম ও অত্যাচার করা
- অস্ত্র দিয়ে কাউকে ভয় দেখানো বা ইশারা করা
- প্রতারণা করা
- রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎ কাজ বা আমল করা
- সোনা বা রূপার তৈরি পাত্র ব্যবহার করা
- পুরুষরা সোনা এবং রূপা পরিধান করা
- সাহাবীদের অপমান কা গালি দেওয়া
- নামাজ পড়ার সময় সামনে দিয়ে যাওয়া
- পবিত্র মক্কা ও মদিনায় কোন অপকর্ম করা
- দুষ্কৃতীকারীকে প্ররোচিত করা
- আল্লাহ সম্পর্কে অন্যায়ভাবে অনুশীলন করা
- অহেতুক তালাক চাওয়া
- যে নারীর স্বামী তার উপির অসন্তুষ্ট
- স্বামীর অবাধ্যতা
- স্ত্রীর দ্বারা স্বামীর অবদান অস্বীকার করা
- স্বামী -স্ত্রীর মিলন সম্পর্কে প্রচার করা
- স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করা
- খুব বেশি অভিশাপ দেওয়া
- বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা
- প্রতিশ্রুতি পূরণ না করা
- আমানতের বিশ্বাসঘাতকতা বা খেয়ানত করা
- প্রতিবেশীকে কষ্ট বা হয়রানি করা
- ঋন পরিশেধ না করা
- বদ মেজাজ এবং অহংকারী যারা উপদেশ গ্রহণ করে না
- তাবিজ, আংটি, সুতো ইত্যাদি ঝুলানো।
- পরীক্ষার নকল করা
- ভেজাল পণ্য বিক্রি করা
- ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্যায় বিচার করা
- আল্লাহর বিধান ছাড়া বিচার করা
- উপার্জনের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা
- নিজের বাবা ছাড়া অন্যকে বাবা বলে দাবি করা
- আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করা।
কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়
মূলত, একজন মানুষ তার আন্তরিক অনুশোচনার মাধ্যমে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে, তবে এর জন্য চারটি শর্ত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, (১) আন্তরিকভাবে ও বিশুদ্ধ নিয়মে অনুতপ্ত এবং লজ্জিত হওয়া; (২) ভবিষ্যতে সেই পাপ আর না করার প্রতিশ্রুতি; (৩) অবিলম্বে সকল পাপ ত্যাগ করা; (৪) যদি মানবাধিকার পাপে জড়িত থাকে তবে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জীবিত না থাকলে প্রয়োজনে তার উত্তরাধিকারীদের সন্তোষজনক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যারা এই চারটি শর্ত পূরণ করবে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থাৎ কবিরা গুনাহ থেকে ক্ষমা পেতে এই চারটি শর্ত পূরণ করতে হবে।
সগিরা গুনাহ থেকেও সাবধান
আনাস (রা)) থেকে বর্ণিত; তিনি বললেন, হে মানুষ! তোমরা এমন কাজ করে থাক যা তোমাদের চোখে চুলের চেয়ে পাতলা মনে হয়। কিন্তু রাসুল (সাঃ) এর সময়ে আমরা তাকে ধ্বংসাত্মক মনে করতাম। (বুখারী, মিশকাত হাঃ ৫১২৩)
আয়েশা (রা) -এর বর্ণনায় আছে যে, তিনি বলেন, “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, ‘হে আয়শা! তুমি তুচ্ছ বলে বিবেচিত ছোট ছোট পাপ থেকেও দূরে থাকো। কারন আল্লাহর পক্ষ থেকে এই সমস্ত ছোট ছোট পাপের জন্যও ফেরেস্তাগন নিয়োজিত আছে। (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হাঃ ৫১২৪)
উপসংহার
আসলে বলতে গেলে এক কথায় বলা যায় গুনাহ তো গুনাহই। তাই গুনাহ ছোট হোক আর বড় হোক আমাদের উচিত সকল প্রকার গুনাহ সমূহ থেকে নিজেকে হেফজত রাখা। আসুন আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং পরকালিন জীবনের কথা চিন্তা করে সকল প্রকার কবিরা গুনাহ এবং সগিরা গুনাহ থেকে আমাদের কে দূরে রাখি। আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুক। আমিন।।