কবর জিয়ারতের দোয়া

কবর জিয়ারতের দোয়া

মানুষ মৃত্যুর পর পরই তার সকল আমল সমূহ বন্ধ হয়ে যায়। শুধুমাত্র আমলে জারিয়া (দুনিয়ায় থাকতে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি এবং নেক সন্তান) জারি থাকে। তার মৃত্যুর পর তার সন্তান বা স্বজনদের পাঠানো দোয়াই হচ্ছে তার একমাত্র ভরসা। আমরা সাধারনত কোন বিশেষ মূহর্ত বা দিবসে আমাদের স্বজনদের কবরের পাশে গিয়ে তাদের মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে দোয়া করে থাকি। নিন্মে কবর জিয়ারতের দোয়া আলোচনা করা হলঃ

কবর জিয়ারতের দোয়া

বাংলা উচ্চারণঃ আসসালামু আলাইকুম ইয়া- আহলাল কুবুরী মিনাল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমা-তি ওয়াল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনা-তি আঁনতুম লানা- সালাফু ওয়া নাহনু লাকুম তাবা‘উন ইন্না ইনশা আল্লা-হু বিকুম লা- হিক্কুন।

অনুবাদঃ হে কবরবাসী মুমিন মুসলমান নর-নারী আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হােক, আপনারা আমাদের অগ্রবর্তী এবং আমরা আপনাদের পরবর্তী, যদি আল্লাহ চাহেন তাহলে আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হব।

 

কবর জিয়ারতের নিয়ম 

আমরা জাতি হিসেবে মুসলিম। ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে আমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। আমাদের সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে উল্লেখযোগ্য কিছু নিয়ম-নীতি। মানুষ মৃত্যুর পর কবরস্থ করার ক্ষেত্রেও আমাদের রয়েছে বিশেষ কতগুলি পদ্ধতি বা নিয়ম। এবং জিয়ারতের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। কবর জিয়ারতের দোয়া শেষ করে সূরাতুল ফাতেহা, সূরা এখলাছ, আয়াতুল কুরসী, সুরা ইয়াসিন এবং দুরূদ শরীফ পাঠ করে মৃত বক্তিদের জন্য আল্লাহর দরবারে মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা।

 

কবর জিয়ারতের সময়

দিনে অথবা রাতে যে কোন সময়ে কবর জিয়ারত করতে পারা যায়। এতে শরীয়ত সম্মত কোন বাধা নেই। তবে শুক্রবার দিন অথবা রাতে কবর জিয়ারত করা অতি উত্তম (মুস্তাহাব)। এ ছাড়া শাবানের চাঁদের ১৪ ও ১৫ই বিদাগত রাতে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন অথবা যে কোন মৃত ব্যক্তির জন্য এ রাতে কবর জিয়ারত করা সুন্নাত।

 

কবর জিয়ারতের গুরুত্ব

ইসলামে কবর জিয়ারতের দোয়া এর গুরুত্ব অপরিসীম। মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে দোয়ার উদ্দেশ্যে গেলে মনের মধ্যে অনুশোচনা তৈরী হয়। এবং মৃত্যুর কথা স্বরণ হয়। ফলে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার প্রবনতা তৈরী হয়। বিশেষ করে কবর জিয়ারতের ফলে উভয়ই সওয়াবের অধিকারী হয়।

হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণীত আছে যে, আমাদের নবী হযরত মােহাম্মদ (ছ) শাবানের চাঁদের ১৪ ও ১৫ই বিদাগত রাতে মদীনা শরীফের কবর স্থান জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে মৃত আত্মার জন্য দোয়া করেছিলেন। তাই ঐ রাতের গুরুত্ব অপরিসীম।

 

কবরের ডাক  

মাটি প্রতিদিন ৫ বার ডাকতে থাকে-

১। হে মানুষ! তুমি আমার পিঠের উপর দিয়ে চলছে, একদিন তাে আমার পেটের ভেতরে আসবে।

২। হে মানুষ! তুমি আমার পিঠে বসে রকমারি জিনিস খাচ্ছাে, কিন্তু আমার পেটে এলে তােমাকে কীট-মাকড়ে খাবে।

৩। হে মানুষ! তুমি আমার পিঠে বসে হাসি-তামাশা করছাে, কিন্তু অনতি বিলম্বেই তুমি আমার পেটে এসে কাঁদবে ।

৪। হে মানুষ! তুমি আমার পিঠের আনন্দে আছে, কিন্তু আগামীকাল আমার পেটে এসে চিন্তিত হবে।

৫। হে মানুষ! তুমি আমার পিঠের উপর গুনাহ করছাে, কিন্তু আমার পেটে এলে তােমাকে শাস্তি ভােগ করতে হবে।

 

মুমিন ব্যক্তির কবর 

মুমিনকে যখন কবরে রাখা হয়, তখন তার কবর সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং মখমলের বিছানা বিছিয়ে খােশবু ছিটিয়ে দেয়া হয়।

আর কবরকে ঈমান ও কুরআনের নূর দ্বারা আলােকোজ্জ্বল করে দেয়া হয় এবং তাকে নওশার মত শুইয়ে দেয়া হয়। এবার তাকে তার মাহবুব (প্রিয়জন)-ই জাগ্রত করবে।

 

কাফেরের কবর

কাফেরের কবর এত সংকীর্ণ করে দেয়া হয় যে, তার পাজর একটি আরেকটির মধ্যে ঢুকে যায় এবং উটের ঘাঁড় সাদৃশ্য সাপ তার উপর ছেড়ে দেয়া হয়, যা তার গােশত খেতে থাকে। আর বাক ও শ্রবণ শক্তিহীন ফেরেস্তা হাতুড়ী দিয়ে তাকে পিটাতে থাকে এবং সকাল-সন্ধ্যায় তার উপর আগুনও পেশ করা হয়ে থাকে।

 

৮টি জিনিস দ্বারা কবরের আজাব থেকে বাঁচতে পারে

ফকীহ আবুল লাইছ সমরকন্দী (রহঃ) বলেন যে, কবরের আজাব থেকে বাঁচতে হলে ৪টি কাজ করতে হবে এবং ৪টি কাজ পরিত্যাগ করতে হবে।

অতএব যে ৪টি কাজ করতে হবে, তা হলােঃ

১। নামাযের পাবন্দী 

২। বেশী পরিমাণে দান, সদকা 

৩। তেলাওয়াতে কুরআন ও 

৪। বেশী পরিমাণে তাসবীহ্ পাঠ। 

এ কাজগুলাে কবরকে আলােকিত ও প্রশস্ত করে।

 

আর পরিত্যাগ করার ৪টি কাজ হলােঃ 

১। মিথ্যা 

২। খেয়ানত 

৩। চুগলখুরী ও

৪। পেশাবের ছিঁটা। 

   রাসূলুল্লাহ (সা) এরশাদ করেন, পেশাবের ছিঁটা থেকে বেঁচে থাক। কেননা অধিকাংশ কবরের আযাব এ কারণেই হয়ে থাকে ।।

 

আল্লাহ তাআলার অপছন্দনীয় দোষ

১। নামাযে খেলা করা । 

২। কুরআন তেলাওয়াত করার সময় বেহুদা কথা বলা। 

৩। রােজা অবস্থায় সহবাস করা। 

৪। কবরস্থানে হাসি-তামাশা করা ।

 

একটি মূল্যবান প্রবচন

হযরত মুহাম্মদ ইবনে সেমাক (র) কবরস্থানের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই কবরস্থানের নিরবতা এবং কবরগুলাে এক সমান হওয়ায় যেন তােমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে, কারণ এখানে যে কত চিন্তিত, ও পেরেশান ব্যক্তি আছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না এবং এ কবরগুলাের মধ্যে যে কত বড় ব্যবধান বা পার্থক্য আছে, তাও আর বুঝাবার অবকাশ নেই। সুতরাং বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যিনি কবরে প্রবেশ করার আগেই এর প্রস্তুতি নিয়ে নেন।

 

একটি শিক্ষনীয় ঘটনা

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে কিছু লােক এসে বললােঃ আমাদের এক সঙ্গীর ইন্তেকাল হয়ে গেছে, আমরা তার দাফনের জন্যে কবর খুঁড়েছি, কিন্তু এথেকে একটি কালাে সাপ বের হয়েছে। অতঃপর দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার কবর খনন করলাম। কিন্তু এ উভয়টিতেও অনুরূপ কালাে সাপ দেখা গেছে, তাই এখন আমরা কি করতে পারি?

বললেন, এগুলাের মধ্যে যে কোন একটিতেই দাফন করে দাও। এ সাপ তার কোন আমলের প্রতিফল। যদি সারা দুনিয়ায়ও কবর খনন কর, তাহলেও প্রত্যেক কবরে এ সাপ দেখতে পাবে।

সুতরাং সাথীরা দাফন করে দিলাে এবং আসার পথে তার বিবির কাছে তার সম্বন্ধে জানতে চাইল ।

তখন বিবি বললাে, সে খাদ্য-শস্যের ব্যবসা করতাে, প্রতিদিন নিজ খাবারের জন্যে খাদ্য-শস্য বের করে নিতাে আর সম-পরিমাণ কংকর বা খড়-কুটা তাতে মিশিয়ে ঘাটতিটা পূরণ করে দিত। (কবরের সাপ এটারই প্রতিফল বলে তখন সবাই বুঝে নিল)।

 

আজকের আলোচনায় আমরা কবর ও কবর জিয়ারতের দোয়া সংক্রান্ত অনেক বিষয় সম্পর্কে জানলাম। আমরা যদি সে অনুযায়ী আমল করি আমার বিশ্বাস আমরা উভয় জাহানে সন্মানীত হতে পারবো। আল্লাহ আমাদের সকলকে আমল করার তৈফিক দান করুন। আমিন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!