ইসলামে রিয়া অর্থ কি

ইসলামে রিয়া অর্থ কি

ইসলামে রিয়া

ইসলামে রিয়া অর্থ কি? রিয়া অর্থ প্রদর্শনেচ্ছা অর্থাৎ ইসলামী পরিভাষায় ‘লোক দেখানো ইবাদাতকেই’ বুঝানো হয়।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেন, লােক সকল! তােমাদের সম্পর্কে ছােট শিরকের সম্পর্কে আমার ভয় হয়, সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, ছােট শিরক কি? রাসূল (সাঃ) বললেন, ছােট শিরক হলাে রিয়া।

ইবাদত-বন্দেগীতে লােক দেখানাে মানসিকতা! এই ধরনের লােকদেরকে কিয়ামতের দিন (রিয়াকারদেরকে) বলা হবে, যাও! তােমরা দুনিয়ায় যাদের জন্যে আমল (ইবাদত-বন্দেগী) করেছিলে, যদি তাদেরকাছে দেয়ার মতাে কিছু থাকে, তাহলে তাদের কাছ থেকেই তােমাদের আমলের প্রতিদান নিয়ে নাও। 

 

রিয়াকারীর উদাহরণ

 জনৈক বিজ্ঞ মনীষী বলেনঃ রিয়াকারীর উপমা হল এমন এক ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির মত, যিনি নিজের থলে, টাকা-পয়সার পরিবর্তে কংকর-পাথর দ্বারা পূর্ণ করে নেয়। এতে তার কোন উপকার বা কল্যাণ হয় না। তবে এতটুকু যে, লােকজন ভারি থলে দেখে তাকে বিত্তবানই মনে করবে। কিন্তু এতে তার কোন প্রয়ােজন মিটে না, মিটতে পারেনা। অনুরূপভাবে রিয়াকারী পােশাকী আবেদকে দেখে মানুষ অবশ্যই মুত্তাকী, পরহেজগার মনে করে, কিন্তু আল্লাহ তা’আলার নিকট সে তার আমলের বিনিময়ে কোন কিছুই পাবে না।

 

রিয়ার চারটি নিদর্শন:

রিয়াকার (লােক দেখিয়ে আমল করে) ব্যক্তির ৪টি লক্ষণঃ 

১। একাকীত্বে নেক কাজে অলসতা করে। 

২। মানুষের সামনে পূর্ণ আনন্দ ও নিপুনতার সাথে আমল করে। 

৩। যে কাজে মানুষ প্রশংসা করে, সেটা আরাে বেশী করে।

৪। যে কাজে তার নিন্দা হয়, সেটাকে কম করে। 

                              – হযরত আলী (রাঃ) তা’আলা আনহু।

 

রিয়াকারের ৪টি নাম:

রিয়া একটি শিরক, রিয়াকারকে কিয়ামত দিবসে চার নামে ডাকা হবে-

১। হে কাফের, 

২। হে ফাজের, (অবাধ্য) 

৩। হে ধোঁকাবাজ, 

৪। হে ক্ষতিগ্রস্ত। 

তােমার আমল নষ্ট হয়ে গেছে। তােমার প্রতিদান বাতিল হয়ে গেছে। আজ তােমার কোন অংশ নেই।

হে ধোঁকাবাজ, আজ তােমার আমলের বদলা, তার থেকেই গ্রহণ কর, যার জন্যে তুমি আমল করেছিলে।

          এ হাদীসের বর্ণনাকারী (সাহাবী) আল্লাহর কসম করে বলেন যে, এ কথা আমি হযরত রাসূল (সা) থেকে শুনেছি। 

জনৈক দার্শনিক যথার্থই বলেছেন-

         নেকী করার চেয়ে এটার হেফাজত করা খুবই কঠিন। সুতরাং রিয়া করাে না, রিয়া করে আমল বরবাদ করােনা।

 

আমল কবুল হওয়ার শর্ত 

আমল কবুল হওয়ার জন্যে চারটি জিনিস জরুরীঃ

১। ইলম (কেননা ইলম ব্যতীত আমল ছহীহ হওয়া কঠিন বরং অসম্ভব, আর ছহীহ আমলই কবুল হয়)।

২। নিয়্যত (নিয়্যত ছাড়া আমল প্রতিদান যােগ্য নয়, এমনকি অনেক আমল গ্রহণযােগ্যই হয় না)।

কেননা হাদীস শরীফে আছে- নিয়্যতের উপরই প্রত্যেক আমল নির্ভরশীল।

৩। ছবর (প্রত্যেক আমল সহ্য ও ধৈর্য্যের সাথে ধীর স্থির হয়ে সম্পন্ন করবে, অর্থাৎ আমল করতে যে সব পেরেশানী সামনে আসে, সেগুলাের উপর সন্তুষ্টচিত্তে ছবর করবে)।

৪। এখলাস (কারণ এখলাস ছাড়া কোন আমল কবুল হয় না)।

 

আমলের কেল্লা 

তিনটি বিষয় আছে যা আমলের জন্যে কেল্লা স্বরূপঃ

১। এটা স্মরণ রাখবে যে, আমল করার তওফিক আল্লাহ’হর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। (তাহলে অহংকার ও দাম্ভিকতা সৃষ্টি হবে না)।

২। প্রত্যেক আমল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে করে, (যাতে নাফসের খাহেশ ভেঙ্গে যায়)।

৩। আমলের সওয়াব ও প্রতিদান কেবল আল্লাহর কাছেই চাইবে। (যাতে হৃদয় থেকে রিয়া ও লােভ-লালসা বের হয়ে যায়)। 

 

 

সাতটি জিনিস ব্যতীত সাতটি জিনিসের কোন মূল্য নাই অর্থহীন

         জনৈক বুজুর্গ বলেন, যে ব্যক্তি সাতটি বিষয় ছেড়ে দিয়ে, আর সাতটি বিষয়ের উপর প্রতি আমল করে, তার আমল কোন কাজে আসবে না ।

১। আল্লাহ্-ভয় দাবী করে ঠিক কিন্তু গুনাহ্ পরিত্যাগ করে না, তাহলে তার এ দাবী অর্থহীন।

২। আল্লাহ পাকের কাছে প্রতিদানের আশা রাখে, কিন্তু নেক আমল করে না, (যদিও আল্লাহ পাক আমল ছাড়াও প্রতিদান দিতে পারেন, কিন্তু তার নিয়ম এটাই যে, প্রতিদান শুধু নেক আমলকারীরাই পাবে)।

৩। নেক আমল করার বাসনা রাখে, কিন্তু ইচ্ছা করে না।

৪। মেহনত ছাড়া দোয়া করে অর্থাৎ সৎ ও সৎকর্মপরায়ণ হওয়ার জন্য মােটেই চেষ্টা করে না, কিন্তু শুধু দোয়া করে, তাহলে সে মাহ্রুম থাকবে। যারা চেষ্টা করে, আল্লাহ পাক তাদেরকেই সামর্থ্য এবং তাওফিক দেন।

যেমন এরশাদ করেন-

والذين جاهدوا فينا لنهدينهم سبلنا.

অর্থাৎঃ যারা আমার জন্যে মেহনত করে, তাদেরকেই আমি আমার রাস্তা দেখিয়ে থাকি।

৫। লজ্জা, অনুতাপ-অনুশােচনা ব্যতীত তাওবা, অর্থাৎ মুখেই তাে তওবা করে, কিন্তু অন্তরে লজ্জা, অনুতাপ-অনুশোচনা মােটেই নেই, তাহলে এ ধরনের তাওবাও কি ফায়েদা হবে ?

৬। আত্মা সংশােধন ছাড়া বাহ্যিক ও কৃত্রিম ইবাদত অর্থহীন।

৭। নিষ্ঠাহীন প্রচেষ্টা মূল্যহীন। অর্থাৎ এখলাস ব্যতীত যে কোন বড় থেকে বড় নেকীর কাজ বা দ্বীনী সাধনাও আল্লাহর দরবারে অর্থহীন।

 

রাখালের কাছ থেকে আদব শিক্ষা কর 

কোন এক বুজুর্গ বলেনঃ মানুষকে রাখাল থেকে আদব ও এখলাস শিখা চাই। জনৈক ব্যক্তি আরজ করল, কিভাবে? বললেন, রাখাল যখন, ছাগলের পাশে নামায পড়ে, তখন তার এই খেয়ালও আসেনা যে, বকরীগুলাে আমার প্রশংসা করছে।

তদ্রুপ আমলকারীর উচিৎ যে, সে মানুষের প্রশংসা ও নিন্দাবাদের তােয়াক্কা না করেই আল্লাহর এবাদত বন্দেগী করবে।

             

জনৈক ব্যক্তি আরজ করল, হে আল্লাহর রাসূল (সা) কিয়ামত দিবসে কোন কাজে নাজাত (মুক্তি) হবে? এরশাদ করলেন, আল্লাহর সাথে ধোঁকা করাে না, আরজ করল, আল্লাহ’র সাথে ধোকা করার অর্থ কি? ফরমালেন, “আল্লাহর হুকুমের উপর আমল” শুধু আল্লাহর জন্যেই করাে, গায়রুল্লাহর জন্যে নয়। আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারাে জন্যে আমল করাই আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজী করা।

আমাদের প্রত্যেকের উচিত লোক দেখানো ইবাদাত বাদ দিয়ে একমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই ইবাদাত করা। আজ আমরা উপরিউক্ত আলোচনা তথা ইসলামে রিয়া সম্পর্কে যা জানলাম তা শেয়ার করে প্রচার কাজে সহায়তা করুন এবং অশেষ নেকি হাসিল করুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুক। আমিন।।

আরোও জানতে

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জরুরী দোয়া সমূহ

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত

কিয়ামতের আলামত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!