ঘুম আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত। যার ঘুম না আসে সে বুঝে মানব জীবনে ঘুমের গুরুত্ব কত। আল্লাহর এই নিয়ামত ঘুম যাওয়ার কিছু নিয়ম কানুন রাসূলে পাক (সঃ) এর জীবনীতে পাওয়া যায়। রাসূল (সঃ) ঘুমানোর সময় কিছু দোয়া পাঠ করে তারপর ঘুমাতেন। নিন্মে রাসূল (সঃ) এর ঘুমানোর দোয়া সমূহ আলোচনা করা হলঃ
ঘুমানোর দোয়া
রাসূলে আকরাম (সাঃ) প্রতি রাতে যখনই তাঁর বিছানায় যেতেন তখন তিনি তাঁর দু’হাতের তালু একসাথ করতেন এবং সূরা ইখলাস পাঠ করতেনঃ
উচ্চারণ: কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ,আল্লা-হুসসামাদ, লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ, ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।
অনুবাদ: ‘আপনি বলুন, আল্লাহ এক, আল্লাহ এমন এক সত্তা, যার প্রতি সব কিছুই মুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং জন্মও নেননি। আর তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই।’
তারপর সূরা ফালাক পাঠ করতেনঃ
উচ্চারণ: কুল আ’উযু বিরাব্বিল ফালাক্বি, মিন শাররি মা-খালাক্ব, ওয়ামিন শাররি গা-সিক্বিন ইযা ওয়াকা্ব, ওয়া মিন শাররিন্ নাফফা-সা-তি ফিল উক্বাদ, ওয়ামিন শাররি হা-সিদিন ইযা হাসাদ।
অনুবাদ: “আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাচ্ছি প্রভাতের প্রতিপালকের, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার ক্ষতি থেকে, অন্ধকার রাতের ক্ষতি থেকে যখন তা সমাগত হয়, গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে যাদুকারিণীদের ক্ষতি থেকে এবং হিংসুকের ক্ষতি থেকে যখন সে হিংসা করে।”
তারপর সূরা নাস পড়তেনঃ
উচ্চারণ: কুল আ’উযু বিরাব্বিন্না-স, মালিকিন্না-স, ইলা-হিন্ না-স্, মিন শাররিল ওয়াস্ ওয়া সিল খান্না-স, আল্লাযী ইয়ুওয়াসওয়িসু ফী সূদুরি নাস, মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্ নাস।
অনুবাদ: “আপনি বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের প্রতিপালকের, মানুষের অধিপতির, মানুষের উপাস্যের, তার ক্ষতি থেকে যে কুমন্ত্রনা দেয় ও আত্মগােপন করে (খান্নাস শয়তান থেকে), যে কুমন্ত্রনা দেয় মানুষের অন্তরে জিনদের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে।
এ তিনটি সূরা পড়ে দু’হাতে ফুঁ দিতেন, তারপর উক্ত দু’হাতের তালু দ্বারা শরীরের যতােটা অংশ সম্ভব মাসাহ করতেন এবং মাসাহ শুরু করতেন তাঁর মস্তক ও চেহারা এবং শরীরের সামনের দিক থেকে। তিনি এরূপ তিনবার করতেন।’ (বুখারী-ফতহুল বারী-৯-৬২, মুসলিম-৪-১৭২৩)।
রাসূলে করীম (সা) ইরশাদ করেন, যখন তুমি রাতের বেলা তােমার বিছানায় গমন করাে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করাে, সর্বদা তুমি আল্লাহর সংরক্ষণে থাকবে এবং সকাল হওয়া পর্যন্ত শয়তান তােমার নিকটবর্তীত হতে পারবে না।’
আয়াতটি হলােঃ
উচ্চারণ: আল্লাহু লা-ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইউম লা তা’খুযুহু সিনাতওঁওয়ালা-নাউম; লাহু মা-ফিস্ সামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদ্বি মান যাল্লাযী ইয়াশ্ফাউ ইনদাহু ইল্লা বিইয্নিহ্। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহীম ওয়ামা খালফাহুম ওয়ালা ইয়ুহীত্বনা বিশাই ইম মিন ‘ইলমিহী ইল্লা বিমা শা-আ, ওয়াসি’আ কুরসিয়ূহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বা ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফযুহুমা ওয়াহুয়াল ‘আলিয়্যুল আযীম।
অনুবাদ: ‘আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনাে মা’বুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও না। ভূ-মণ্ডল ও নভােমণ্ডলে যা কিছু বিরাজমান সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর নিকট তাঁর অনুমতি ছাড়া। ভবিষ্যত এবং অতীতের সব কিছুই তিনি অবগত আছেন। তাঁর জ্ঞানের কোনাে কিছুই তারা পরিবেষ্টিত করতে পারে না, যতােটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন গােটা আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর এ দু’টোর হিফাজত করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়, সহজ। তিনি সর্বোচ্চ, সর্বাপেক্ষা মহান। (সহীহ বুখারী-ফতহুল বারী-৪-৪৮৭)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
রাত্রিকালে যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পড়বে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। (সহীহ বুখারী-ফতহুল বারী-৯-৯৪, মুসলিম-১-৫৫৪)
উচ্চারণ: আ-মানার রাসূলু বিমা ঊন্যিলা ইলাইহি মির রাব্বিহী ওয়াল মু’মিনুন, কুল্লুন আ-মানা বিল্লা-হি ওয়ামালা-ইকাতিহী ওয়াকুতুবিহী ওয়া-রুসুলিহ্। লা নুফাররিক্ব বাইনা আহাদিম মির রুসুলিহ। ওয়া ক্বা-লূ সামি’না ওয়াআত্বা’না গুফরা-নাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসীর। লা-ইয়ুকাল্লিফুল্লা-হুনাফ্সান ইল্লা উস্’আহা লাহা-মা কাসাবাত ওয়া‘আলাইহা মাকতাসাবাত, রাব্বানা লা-তু’আ-খিয্না ইন্নাসীনা আউ আখত্বা’না, রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল ‘আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহু ‘আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা-লা-ত্বা-ক্বাতা লানা-বিহী, ওয়া’ফু ‘আন্না, ওয়াগ্ফির লানা ওয়ার হামনা আনতা মাওলা-না ফানসুরনা ‘আলাল ক্বাওমিল কা’ফিরীন।
অনুবাদ: ‘রাসূল ঈমান রাখেন ঐ সকল বিষয়ের প্রতি যা তার রবের পক্ষ থেকে তাঁর নিকট নাযিল হয়েছে এবং মু’মিনরাও। সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তার রাসূলগণের প্রতি। (তারা বলে), আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনাে পার্থক্য করি না, তারা আরাে বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। হে আমাদের রব! আমরা তােমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর তােমাদেরই দিকে আমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনাে কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তার ওপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের রব! যদি স্মরণ না করি কিংবা ভুল করে বসি, তাহলে আমাদের পাকড়াও করাে না, হে আমাদের রব! আর আমাদের ওপর এমন দায়িত্ব দিয়াে না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীতের ওপর দিয়েছ। হে আমাদের রব! আর আমাদের ওপর ঐ বােঝা চাপাইও না, যা বহন করার ক্ষমতা আমার নেই। আমাদের পাপ মােচন করাে, আমাদের ক্ষমা করাে এবং আমাদের দয়া করাে। তুমি আমাদের রব। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের উপর আমাদেরকে বিজয়ী করাে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তােমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার বিছানা থেকে উঠে আসে, অতঃপর তার দিকে (নিদ্রার উদ্দেশ্যে) প্রত্যাবর্তন করে সে যেনাে তার লুঙ্গির এক অঞ্চল দিয়ে (অথবা কোনাে তােয়ালে, গামছা প্রভৃতি দিয়ে) তিনবার বিছানা ঝেড়ে নেয়, কারণ, সে জানেনা তার চলে যাওয়ার পর বিছানায় কি পড়েছে। তারপর সে যখন বিছানায় শয়ন করে তখন যেনাে বলেঃ
উচ্চারণ: বিসমিকা, রাব্বী ওয়াযা’তু জাম্বী ওয়া বিকা আরফা’উহু ফা’ইন্ আমসাকতা নাফ্সী, ফারহামহা-ওয়াইন আরসাল্ তাহা ফাহ্ফাযহা-বিমা-তাহ্ফাযহা-বিমা-তাহ্ফাযু বিহী ‘ইবা-দাকাস সা-লিহীন।
অনুবাদ: আমার রব! তােমার নামে আমি আমার পার্শ্বদেশকে বিছানায় রেখেছি (আমি শয়ন করছি), আর তােমারই নাম নিয়ে আমি তাকে উঠাব (বিছানা ছেড়ে দিব)। যাদ তুমি (আমার নিদ্রিত অবস্থায়) আমার প্রাণ কবজ করাে, তবে তুমি তাকে ছেড়ে দাও (বাঁচিয়ে রাখাে) তাহলে সে অবস্থায় তুমি তার সংরক্ষণ করাে যেমনভাবে তুমি তােমার পুণ্যবান বান্দাগণকে সংরক্ষণ করে থাকো। (সহীহ বুখারী- ফতহুল বারী ১১-১২৬, মুসলিম ৪-২০৮৪)
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা খালাক্বতা নাফ্সী ওয়া আন্তা তাওয়াফ্ফা-হা, লাকা মামা-তুহা ওয়া মাহইয়া-হা-ইন্ আহ্ ইয়াইতাহা ফাহ্ফায্হা, ওয়াইন্ আমাত্তাহা ফাগফিরলাহা আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস’আলুকা ‘আ-ফিয়াতা।
অনুবাদ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই তুমি আমার রূহকে সৃষ্টি করেছাে আর তুমি উহার মৃত্যু ঘটাবে (অতএব) তার জীবন ও মরন যেনাে একমাত্র তােমার উদ্দেশ্যে হয়। যদি তাকে রক্ষা করতে চাও তাহলে তুমি তার সংরক্ষণ করাে, আর যদি তার মৃত্যু ঘটাও নিদ্রাবস্থায় তবে তাকে ক্ষমা করে দিও। হে আল্লাহ! আমি তােমার নিকট নিরাপত্তা কামনা করছি। (সহীহ মুসলিম-৪-২০৮৩, আহমদ-২-৭৯)
রাসূলে করীম (সা) যখন ঘুমানাের ইচ্ছা করতেন তখন তাঁর ডান হাতটিকে তাঁর গালের নীচে রাখতেন, তারপর তিনবার পাঠ করতেনঃ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা কিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব‘আছু ‘ইবা-দাকা।
অনুবাদ: “হে আল্লাহ আমাকে তােমার আযাব থেকে বাঁচাও সেই দিবসে যখন তুমি তােমার বান্দাদেরকে পুনরুত্থান করবে। (আবু দাউদ-৪-৩১১, তিরমিযী-৩-১৪৩)
উক্ত আলোচনায় রাসূল (সঃ) এর পঠিত পদ্ধতি অনুসারে ঘুমানোর দোয়া সমূহ পযায়ক্রমে দেওয়া হল। কেউ যদি এ ঘুমানোর দোয়া সমূহ পাঠ করে ঘুমাতে যায় এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি তার ঘুম হবে ইসলামী শরিয়াহ্ মোতাবেক শ্রেষ্ঠ ঘুম। যদি আপনার ভালো লেগে থাকে প্রচার করতে ভুলবেন না। আল্লাহ হাফেজ।।