এলার্জির প্রাকৃতিক চিকিৎসা

আমরা সবাই কমবেশি এলার্জি সম্পর্কে শুনেছি। কিন্তু অনেকেরই এর সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। এ সম্পর্কে ধারণা থাকা খুবই জরুরি। এর কারণ হল এলার্জি বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের জন্য দায়ী (যেমন শ্বাসকষ্ট, একজিমা ইত্যাদি)। অনেকেই এলার্জিতে ভোগেন। এলার্জির যে কি যন্ত্রনা তা এলার্জি আক্রান্তরাই জানেন। অনেকেই এই এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন। এলার্জির ভয়ে আপনি আপনার সামনে সুস্বাদু সব খাবার খেতে পারবেন না। যার কারণে একজন মানুষ অপুষ্টিতে ভুগবে। এটা নির্মূল করা সম্ভব নয়। যাইহোক, যদি আপনি কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তাহলে আপনি সহজেই হয়ত এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক এলার্জি কি? এলার্জি কেন হয়? এলার্জির প্রাকৃতিক চিকিৎসা ও এলার্জি দূর করার উপায় সমূহঃ

এলার্জির প্রাকৃতিক চিকিৎসা

 

 

 

এলার্জির প্রাকৃতিক চিকিৎসা

এলার্জি দূর করার উপায় জানার আগে আমাদের জানতে হবে এলার্জি কি? এলার্জি কেন হয়? এলার্জি জাতীয় খাবার কি কি? এসব কিছু জানার পর পরই জানতে হবে এর চিকিৎসা পদ্ধতি। নিন্মে আজ আমরা এ সম্পর্কে পর্যায়ক্রমে তা আলোচনা করবো। ধৈর্য ধরে আমাদের সাথে থাকলে এলার্জি সম্পর্কে প্রাকৃতিক চিকিৎসার মাধ্যমে কিভাবে সুস্থ থাকা যায় সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ একটা ধারনা পাওয়া যাবে। তো চলুন শুরু করা যাক-

 

এলার্জি কি?

এলার্জি শব্দটি গ্রিক শব্দ অ্যালোস এবং এরগোসের সংমিশ্রণ। যার অর্থ পরিবর্তিত প্রতিক্রিয়া। এলার্জির প্রতিক্রিয়া হল ধুলোবালি, ফুলের পরাগ, কিছু খাবার, ওষুধ ইত্যাদি দ্বারা সৃষ্ট প্রতিক্রিয়াই হচ্ছে এলার্জি।

প্রত্যেকের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। যখন কোন কারণে এই ইমিউন সিস্টেমে সমস্যা হয় তখন এলার্জি দেখা দেয়। এলার্জি হল একটি ক্ষতিকর পদার্থের প্রতি শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া যা সাধারণত আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এলার্জি আমাদের দেশে একটি অসহনীয় রোগ।

কিছু ক্ষেত্রে সমস্যাটি হালকা এবং অন্যদের ক্ষেত্রে এটি জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। ঘরের ধুলোবালি, ফুলের গন্ধ, গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ, গরুর দুধ ইত্যাদির কারণে যদি আপনার ত্বক চুলকায় বা লাল লাল চাকার মত ত্বক ফুলে যায়, তাহলে আপনার এলার্জি আছে ধরে নিতে হবে।

 

এলার্জি কেন হয়?

আমরা অনেকেই জানি না কেন এলার্জি হয়। এলার্জি চর্মরোগের কারণ যেমন শ্বাসকষ্ট, একজিমা ইত্যাদি। নিম্নলিখিত কারণে এলার্জি হতে পারে-

হাঁপানি জনিত এলার্জির অন্যতম কারণ ঘরের ধুলো। ঘরের ধুলোতে মাইটি নামে এক ধরনের জীবাণু থাকে যা প্রায় ৬০% এলার্জির জন্য দায়ী। তাই যারা অ্যাজমা অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগছেন তাদের উচিত সবসময় ঘরের ধুলোবালি থেকে দূরে থাকা। অন্য কথায়, ঘরের কম্বল, পর্দা, গদি, আসবাবপত্র ইত্যাদিতে ধুলো জমতে থাকে তা পরিষ্কার করার সময়ও দূরে থাকতে হবে।

দূষিত বায়ু, ফুলের পরাগ, ধোঁয়া, কাঁচা রংয়ের গন্ধ, চুন, পুরনো ফাইল থেকে ধুলো ইত্যাদি শরীরে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে এবং হাঁপানির কারণ হতে পারে। হাঁপানি এলার্জির সাথে যুক্ত, তাই যাদের হাঁপানি আছে তাদের এসব পরিত্যাগ করতে হবে।

তাছাড়া ছত্রাক শরীরে এলার্জি বা হাঁপানি সৃষ্টি করে। এটি একটি সাধারণ উদ্ভিদ। কখনও কখনও ছত্রাক দ্বারা খাদ্য দূষিত হয়। এ ছাড়া ছত্রাক কিছু খাবার (পনির, পাউরুটি, কেক ইত্যাদি) তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আর এই ছত্রাক এলার্জির অন্যতম কারণ।

মাথাব্যথা, জ্বর, ফোঁড়া, চুলকানি ইত্যাদির কারণে আমরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই পেনিসিলিন এবং অ্যাসপিরিন গ্রহণ করি। এবং পেনিসিলিন এবং অ্যাসপিরিনও শরীরে এলার্জি চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত পেনিসিলিন ব্যবহার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষুধ সেবন করা যাবে না। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের খাবারের কারণেও এলার্জি হয়।

 

এলার্জি জাতীয় খাবার কি কি?

যেসব খাবারে এলার্জির সমস্যা হয় সেগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ রাখতে হবে। তারপর কিছুুদিন পর আবার চেষ্টা করতে হবে। যদি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকে, তাহলে আপনি খাওয়া চালিয়ে যেতে পারেন এবং যদি তাই হয়, তাহলে খাওয়া বন্ধ করুন। খাবারের এলার্জির কারণে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে (বমি, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি)।

তাই আপনাকে যেসব খাবারে এলার্জি আছে তা খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। প্রায়ই দেখা যায় চিংড়ি, ইলিশ মাছ, হাঁসের ডিম, গরুর মাংস ইত্যাদি শরীরে এলার্জি সৃষ্টি করে। যাইহোক, যদি আপনি এই খাবারগুলি খেয়ে থাকেন, যদি কারও এলার্জির সমস্যা থাকে তবে এটি অন্যের শরীরে থাকবে না। তাই আপনাকে খাবারের এলার্জি থেকে দূরে থাকতে হবে।

এলার্জির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভিটামিন ই খুবই উপকারী। তাই আপনাকে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। তাছাড়া, গাজর এবং শসার রসেও অ্যান্টি-এলার্জিক উপাদান রয়েছে। এ ছাড়া যাদের এলার্জির সমস্যা আছে, তারা মদ, চা এবং কফি না খাওয়াই ভালো।

 

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ

শরীরে এলার্জি আছে কিনা তা দেখার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা আছে। এইগুলো হল-

রক্ত পরীক্ষা
সিরাম আইজিইর মাত্রা
স্কিন প্রিক টেস্ট
বুকের এক্স-রে
স্পাইরোমেট্রি

 

এলার্জির চিকিৎসা

এলার্জি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যদি আপনি বুঝতে পারেন কেন এলার্জি হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষুধ খেলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেসব পণ্যে এলার্জি আছে তা এড়িয়ে চলা এবং ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন গ্রহণ করে সহজেই নিরাময় করা যায়। এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি।

অনেকে মনে করেন যে এলার্জি পুরোপুরি নিরাময় হয় না। যাইহোক, যদি তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে, এটি সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা যেতে পারে। তবে যদি অবহেলা করা হয়, রোগটি দীর্ঘমেয়াদী হয়ে যায়, তাহলে পুরোপুরি সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগে যেতে পারে।

 

ঘর পরিষ্কার করার সময় কিছু জিনিসের চিপায় ময়লা জমে থাকে। এই জমে থাকা ময়লা এলার্জি সৃষ্টি করে। তাই বিছানার চাদর, বালিশের কভার, মশারি ইত্যাদি ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করা উচিত। এ ছাড়া পানি ও ক্লিনার দিয়ে ঘর ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তাছাড়া কম্বল ইত্যাদি রোদে ভালোভাবে শুকানো ভালো।

তাছাড়া দরজা এবং জানালা প্রতি সপ্তাহে ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। বাথরুমের জানালা খোলা রাখতে হবে যাতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে এবং বাথরুম যাতে ভেজা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তাছাড়া রান্নাঘর নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশুদের খেলনা, জুতা, কাপড় ইত্যাদি পরিষ্কার রাখা উচিত কারণ তার ধুলায় এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। যদি বাড়িতে পশু থাকে, সেগুলিও পরিষ্কার রাখা উচিত। এই সব করলে সহজেই এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কিছু খাবার আছে যা এলার্জির কারণ হতে পারে। ডিম, মাছ, বাদাম, কলা, পেঁয়াজ, রসুন, চকলেট, ঠান্ডা পানীয় ইত্যাদি কিছু মানুষের এলার্জির কারণ হতে পারে।

এছাড়াও আমি আরও কিছু উপাদানের উপকারিতা সম্পর্কে নিন্মে উল্লেখ করবো যা থেকে আপনি এলার্জি দূর করার উপায় ‍সমূহ জানতে পারবেন এবং এলার্জির জন্য যথেষ্ট উপকার পেতে পারেন।

নিম পাতা

১ কেজি নিম পাতা রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিন। শুকনো নিম পাতা গুঁড়ো করে পরিষ্কার পাত্রে রাখুন। ১ চা চামচ নিম পাতার গুঁড়ো এবং ১ চা চামচ ইসবগুল ১ গ্লাস পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টা পর চামচ দিয়ে ভালো করে নেড়ে নিন।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে খান। একটানা ২১ দিন খেতে হবে। কাজ শুরু করতে ১ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তারপর থেকে, আপনি এলার্জির জন্য যা কিছু খেতে পারতেন না, যেমন হাঁসের ডিম, বেগুন, গরুর মাংস, চিংড়ি, কচু, কচুশাক, গরুর দুধ, পুঁই শাক, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য খাবার খান। আশা করি আর কোন সমস্যা হবে না।

 

লেবু

লেবু হল সাইট্রিক ফলগুলির মধ্যে একটি যা এলার্জিতে ভালো কাজ করে। মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এই পানীয় নিয়মিত সেবন করলে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর হবে। এবং এলার্জির সমস্যা কমে যাবে।

 

কলা

কলার পুষ্টি সম্পর্কে সবাই জানে। একটি মজার বিষয় হল যে আপনার যদি কোন খাবারে এলার্জি থাকে তাহলে কলা খেলে তা সেরে যায়। শরীরে ছোট ব়্যাশ দেখা দিলে বা পেটের সমস্যার ক্ষেত্রে কলা খুবই উপকারী। কারণ কলা মেটাবলিজম বাড়াতেও সাহায্য করে।

 

আদা

এলার্জির জন্য আদা খুব ভালো কাজ করে। আদা বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, বদহজম, এমনকি ডায়রিয়ার চিকিৎসায় খুব কার্যকর। গরম পানিতে আদা ফুটিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে খান।

 

কমলা

অনেক সময় পেটে অতিরিক্ত প্রোটিন প্রায়ই এলার্জি সৃষ্টি করে। সেক্ষেত্রে আপনার বেশি অম্লীয় খাবার এবং ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত।

 

শসা ও গাজরের রস

আপনার যদি কোন খাবারের পর এলার্জি দেখা দেয় তাহলে শসা এবং গাজরের রস একসাথে মিশিয়ে খান। শসা এবং গাজর এই দুটি সবজিতে রয়েছে এলার্জি বিরোধী উপাদান যা শরীরের এলার্জির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

 

গ্রিন টি

গ্রিন টি শুধু ওজন কমাতে সাহায্য করে না, এলার্জির সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে। গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুলি প্রদাহ বিরোধী উপাদান গুলির জন্য এলার্জি যুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে সৃষ্ট সমস্ত সমস্যা প্রতিরোধ করে।

সবশেষে আমরা বলতে পারি যে, এলার্জির প্রাকৃতিক চিকিৎসা সম্পর্কে এখানে যে আলোচনা করা হল তা যদি ভালো ভাবে অনুশরণ করা হয় তবে এলার্জির প্রাকৃতিক চিকিৎসা এর মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব। তাহলে আজ এই পর্যন্ত থাকলো। আর্টিকেলটি পড়ে কেমন লাগলো তা কমেন্টস করে জানাবেন। আর অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সকলকে ধন্যবাদ।

 

Elarji dur karar upay

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!