দাজ্জালের ফিতনা
কিয়ামতের আগে পৃথিবীতে দাজ্জালের উপস্থিতি এক দুর্দান্ত ফিতনা। মহান আল্লাহ তাকে অনেক বড় বড় অলৌকিক কাজ করার শক্তি ও ক্ষমতা দান করবেন। যা সাধারণ মানুষের চিন্তাশক্তিতে বিশাল প্রভাব ফেলবে এবং মানুষ বিভ্রান্ত হবে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার দোয়া সমূহ আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।
দাজ্জাল ৪০ দিন পৃথিবীতে থাকবে। দাজ্জালের প্রথম দিনটি এক বছরের সমান লম্বা হবে। দ্বিতীয় দিনটি এক মাসের সমান হবে। তৃতীয় দিনটি এক সপ্তাহের সমান হবে। আর বাকি দিনগুলি সাধারণ দিনের মতোই হবে। এ সবই দাজ্জালের এক ভয়ানক ফেতনা।
দাজ্জাল হ’ল এক ভয়ংকর ফিতনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জালের প্রলোভন থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। উম্মাহ মুহাম্মাদীকে শিখিয়েছেন দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার দোয়া ও নিয়মিত আমল কী হবে তা। এটি হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনায় উঠে এসেছে-
সূরা আল-কাহফের আমল
হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জাল থেকে রক্ষা পাবে।” (মুসলিম)
দাজ্জাল পৃথিবীতে আসবে এবং ৪ টি বিষয়ে তার দক্ষতা দেখিয়ে লোককে প্রতারিত করবে। সূরা আল-কাহাফে এই চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যথা-
১। বিশ্বাসের উপর পরীক্ষা
দাজ্জাল পৃথিবীতে উপস্থিত হবে এবং লোককে তাঁর প্রতি বিশ্বাস আনার আহ্বান জানাবে। মানুষ যেন এক আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে দিয়ে তাকে প্রভু হিসেবে মেনে নেয়। এটি বিশ্বাসের একটি দুর্দান্ত পরীক্ষা। আসহাবে কাহফের সাহাবারা বিশ্বাসের উপর কত বেশি দৃঢ় ছিল তা এই সূরায় আলোচিত হয়েছে। তাদের বিশ্বাস বজায় রাখতে তারা নিজ শহর থেকে হিজরত করে চলে এসেছেন। তারপরেও তারা বিশ্বাসের জায়গা থেকে একটুও বিচ্যুত হননি।
২। ধন-সম্পদের উপর পরীক্ষা
দাজ্জাল জনগণের সামনে আসার সাথে সাথে সম্পদের আধিপত্য প্রদর্শন করবে। লোকদের সম্পদের উপর পরীক্ষা করা হবে। দাজ্জাল মানুষকে সম্পদের লোভ দেখাবে। এজন্য আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে দুটি বাগানের মালিকের কাহিনী উল্লেখ করেছেন। যাতে লোকেরা দাজ্জালের সম্পদের লোভে বিশ্বাস না হারায়।
৩। অর্জিত জ্ঞানের উপর পরীক্ষা
দাজ্জাল মানুষকে জ্ঞান দিয়ে বিভ্রান্ত করবে। দাজ্জাল নিজেকে একজন মহান হিসাবে প্রকাশ করবে। এ কারণেই মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আ।) ও হজরত খিজির (আ।) – এর জ্ঞানের বিবরণ দিয়েছেন। দাজ্জাল মানুষের সামনে প্রচুর খবরাখবর প্রকাশ করবে। এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে ঈমান হারা না হতে এই সূরায় জ্ঞানের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।
৪। ক্ষমতা বা শক্তি পরীক্ষা
দাজ্জালের বিশ্বজুড়ে বিশাল ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ থাকবে। দাজ্জাল যখন আত্মপ্রকাশ করবে তখন বিশ্বের একটি বড় অংশ তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তার শক্তি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। আল্লাহ রাজা জুলকারনাইনের শক্তি বর্ণনা করেছেন। যাতে মুমিনগণ ক্ষমতার উপর নিজেদের ঈমান না হারাতে বসে।
এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানদার মুসলমানদের দাজ্জাল থেকে নিরাপদ থাকার অনুপ্রেরণা হিসাবে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করতে উৎসাহিত করেছিলেন।
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার দোয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ‘তোমাদের মধ্যে যখন তশাহহুদের শেষ (রাকা’আত) পড়া শেষ হয়, তখন সে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে চারটি বিষয়ে। তা হল –
১. কবরের কঠিন শাস্তি থেকে
২. জাহান্নামের বয়াবহ শাস্তি থেকে
৩. জীবন এবং মৃত্যু পরীক্ষা থেকে এবং
৪. মিথ্যুক ও ভন্ড দাজ্জালের ফেৎনা থেকে। ‘(মুসলিম, আবু দাউদ)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন কুরআনুল কারীমের সূরা শিক্ষা দিতেন , তেমনি দাজ্জালের প্রলোভন এড়াতে তিনি এই দোয়াটিও শিক্ষা দিয়েছিলেন। তা হলঃ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’জুবিকা মিন ফিতনাতি মাসিহুদ দাজ্জাল।’ (বুখারী)
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! অভিশপ্ত দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ‘
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শুক্রবার সূরা কাহাফের অনুশীলন, তেলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমে হাদীসে বর্ণিত ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করুন। এবং বেশি বেশি দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার দোয়া পাঠ করার সুযোগ করে দেক। আমিন।। বন্দুদের কে জানাতে বেশি বেশি শেয়ার করতে ভুলবেন না।