বাংলা কবিতা
কবিতা প্রছন্দ করে না এমন লোক খোঁজে পাওয়া কঠিন। কবিতা হচ্ছে মনের খোরাক। কবিতা মানুষের মনকে উৎফুল্ল রাখে। সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে সহায়তা করে। টেনশন, রাগকে ভুলে থাকা সম্ভব হয়। যুগে যুগে অনেক কবি শুধু কবিতার জন্য বিখ্যাত হয়েছেন। যাদেরকে মানুষ যুগ যুগ ধরে স্বরণ করবে তাদের কবিতার মধ্য দিয়ে। যাদের মধ্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি জসিম উদ্দিন প্রমূখ উল্লেখযোগ্য। আমরা তাঁদের কবিতার মধ্যমে সাময়িক সময়ের জন্য নিজেকে এক স্বপ্নিল জগতে পদার্পন করাতে পারি। আসুন বেশি বেশি কবিতা আবৃতি করি মনকে উৎফুল্ল রাখি। আমাদের আজকের আয়োজন বাংলা কবিতা নিয়ে। বাংলা কবিতা অনুচ্চেদটি সম্পূর্ণ আপনাদের প্রছন্দের বাংলা কবিতা নিয়ে সাজানো হয়েছে আশা করে ভালো লাগবে। তো চলুন শুরু করা যাক-
এক জীবনে কতাে গান
জাকির আবু জাফর
বাংলা কবিতা
একটি পৃথিবীর মতাে একটি মাত্র জীবন
এক জীবনে কতাে গান গাওয়া যায়।
কতাে ফুল ঝরে গেলে সকাল হবে
কতাে পথ যাওয়া যায় জীবন টেনে।
একটি তাজমহলের মতাে একটি হৃদয় আমার
এক হৃদয়ে কতটুকু ভালােবাসা যায়।
কতাে প্রেম মুছে দেবে ঘৃনার বলয়
হৃদয় কেনাে যে নিজে নদী হয়ে যায়।
একটি বাংলাদেশের মতাে একটি আকাশ
এক আকাশে কতাে চাঁদ জোসনা মেলে।
কয়টি শুকতারা জেগে থাকে রাতের নীড়ে
তবুও আকাশ হয় রাতের সাথী।
একটি পতাকার মতাে একটি নিশান
আমার কতাে রঙে বেড়ে ওঠে নিশান প্রতীক।
কোন তুলি একে যায় পতাকার মুখ
বাতাস টাঙিয়ে ধরে মিনার চূড়ায়।
একটি আগামীর মতাে একটি স্বপ্ন আমার
এক স্বপ্নে কতােটা দিগন্ত হওয়া যায়।
কতােটা দিগন্ত পার হলে সমুদ্র মিলে
স্বপ্নরা সমুদ্রের ঢেউ হয়ে যায়।
একটি হিমালয়ের মতাে একটি যৌবন
কতােটা হিমালয় দিতে পারে যৌবন মিনার।
যৌবন পাড়ি দেয় পারদ নদী
সেতাে রাবেয়া বসরীর জায়নামাজ হয়ে যায় ।
একটি পিরামিডের মতাে একটি অতীত আমার
এক অতীতের কয়টি বাঁক খুলেছি আমি।
কয়টি অতীত নিয়ে মাথা তােলে ইতিহাস
ইতিহাস হেঁটে যায় কালের ঘােড়ায়।
একটি বিশ্বের মতাে একটি মাত্র আমি
আমিও আরেক নতুন বিশ্ব।
বিশ্বের কয়টি দরােজা মেলেছি আমি
আমি কি চিনেছি আমার নিজের পৃথিবী?
বসন্ত
– রিয়াজ উদ্দিন
হে বসন্ত
তুমি ঋতু রাজ
শীতের রুক্ষতায় পাতা ঝরা গাছে,
নতুন পল্লব গজানাে তােমার কাজ।
হে বসন্ত
তুমি পাখপাখালীর কলরব।
বিকেলের মিষ্টি আমেজের রােদ,
অযুত কোকিলের কুহুরব।
হে বসন্ত
তুমি নির্মেঘ গগন।
শত ফুলের গন্ধ ছড়ানাে,
প্রভাতের ঝর ঝরে সমীরণ।
দাদুর ইচ্ছে
– এম.এইচ শিবলী
বুড়াে দাদুর ইচ্ছে এখন
করবে আরেক বিয়ে
কনের খোঁজে বেরিয়ে গেলেন
আমায় সঙ্গে নিয়ে,
এদেশ ঘুরে ও দেশ ঘুরে
পেলাম নাকো কনে,
মনের দুঃখে দাদু আমার
চলে গেলেন বনে।।
টোকাই
-মােহাম্মদ উল্যা সােহাগ
ডাগর ডাগর নেত্র দুটি কত কি বলিতে
বলবে বলবে বলে বলাই হচ্ছেনা
আড়ষ্টতা তারে ঘিরে ফেলে।
কেউবা রাঙায় চোখ কেউ দাঁত কড়মড় করে
কেউবা কিল পকিয়ে বলে মেরে ফেল ছােকরাকে
পাড়ার কত কি পাওয়া যাচ্ছে না।
ভীড় ঠেলে কাছে টানি বলি তাের বাড়ী কই? নরম স্বরে,
ফ্যাল-ফ্যালি করে কেঁদে ফেলে মনে হয় নরম কথা এই প্রথম
শুনেনি আগে কখনাে। কান্নার ভারে কথা আসে না
আমার পেছনে গাজী সার গরম হয়ে বলে
বেধে রাখ বেটাকে, বড় নচ্ছার।
ছেলেটা শুধু তাকায় শুধু ভয় আর ভয়
মনে হয় ধরাতে সবই তার পর।
অতীত
– নাজমা আক্তার (মুন্নী)
ওগাে অতীত
ক্ষত হয়ে এই বুকে আর থেকোনা,
আমি সুখের চিহ্ন বুকে এঁকে
মুছে দিলাম বেদনা।
আমি এখন স্বপ্ন দেখি
একটি সুখের দিন,
একটি সুখের জীবন আমার
কাম্য চিরদিন,
এই সুখের পথে ওগাে অতীত
তুমি বড় যন্ত্রনা
তাই চলার পথে আর কখনাে
বাঁধা হয়ে এসােনা।
প্রতিরােধ
(২৬শে মার্চ স্মরণে)
– মিছবাহ উদ্দিন
মার্চ আমাদের শিখিয়েছে শির উঁচুতে দাড়াতে
কঠোর কঠিণ পদাঘাতে সকল আপদ মাড়াতে
জুলমবাজদের কালাে নিশান নামাও শক্ত হাতে,
কালাে হাতের নগ্ন থাবা গুটিয়ে নেয় যাতে।
সােনার এ দেশ বাঁচাতে হলে লড়তে হবে একসাথে
শেল বিধাও ঘূর্ণিপাকে ভন্ডদের শক্ত মাথে।
এমাস মোদের শিখিয়েছে প্রতিরােধ করতে,
প্রতিরােধের অঙ্গারে জঠর-জ্বালা নিভাতে।
আমারই স্পর্শে হও সজীব, সুন্দর!
আসাদ বিন হাফিজ
বাংলা কবিতা
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীর মানুষ
নিজের হাতে নিজেই খুঁড়ছে নিজের কবর
বানাচ্ছে মারণাস্ত্র, আণবিক বােমা
গড়ে তুলছে পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ
খাদ্যের পরিবর্তে গুদাম ঘরে সাজিয়ে রাখছে
মিসাইলের পর মিসাইল
নিউক্লিয়ার যুদ্ধের ভয়াবহ টেকনােলজি।
সভ্যতার পােশাক খুলে আদিম বর্বরতার
অন্ধকূপে ঝাপ দিচ্ছে মানুষ
নিজের শরীর থেকে খুলে ফেলছে
নীতি ও নৈতিকতার লেবাস
মানবিক মূল্যবােধের বৃক্ষ কেটে
উজার করছে হৃদয় ভূ-ভাগ
সততার অলংকার খুলে
সারা অঙ্গে জড়িয়ে নিচ্ছে প্রতারণার বেড়ি।
কুকুরকে বিশ্বাস করলেও
মানুষকে আজ আর বিশ্বাস করে না মানুষ।
হায়! মানুষের আজ একি ভয়াবহ দুর্দিন!
নিষ্ঠুরতায় সে হার মানাচ্ছে নিষ্ঠুর হায়েনাকে
পাশবিকতায় হার মানাচ্ছে বন্য পশুদের
প্রেম, ভালবাসা, মানবিক বন্ধনের ঐশ্বর্য
ঘৃণা ও অবিশ্বাসের যুপকাষ্ঠে বলি হচ্ছে প্রতিদিন।
আজ পৃথিবীর বড় দুর্দিন, মানুষের বড় দুঃসময়!
ক্ষমতার দণ্ডে বসে মানবতার বুলি কপচায় কুটিল শাসক
জনগণের ওপর স্বৈরাচারের ষ্টীমরােলার চালায়
গণতন্ত্রের আলখেল্লা পরা ধূর্ত শোষক
মানুষের ওপর প্রভুত্ব করে মানুষ নামের কীট,
মানুষই মানুষের বুক ঝাঝরা করে
রক্তের ফোয়ারা ছুটিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তােলে।
হায়! এরা কি মানুষ, না শয়তানের প্রেতাত্মা?
পুঁজিবাদের চোখ ধাঁধানাে জৌলুসময় মরীচিকার পিছনে
ছুটতে ছুটতে মানুষ আজ ক্লান্ত, অসহায়
বস্তুবাদের পুঁতিগন্ধময় ভাগাড়ে নাক ডুবিয়ে
পড়ে আছে বেহেড মাতাল।
জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণতার কালাে চাদর
ঢেকে দিচ্ছে মানুষের প্রফুল্ল বিবেক,
উদারতা, সাম্য আর সম্প্রীতির পুষ্পকানন।
ধর্ম থেকে নিরপেক্ষ হয়ে মানুষ হয়ে যাচ্ছে ধর্মহীন।
এটা কি কোন সভ্যতা! না, ডাকাতের স্বর্গরাজ্য?
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে মানবতা আজ খাবি খাচ্ছে
বিশ্বময় অশান্তির দাউ দাউ দাবানল
শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, সুখ নেই,
নেই সহমর্মিতার সামান্য সুবাতাস।
কিন্তু কেন? কেন বিপন্ন মানবতা?
কেন আর্তের আহাজারি?
আমি জানতে চাই, কার অপরাধে আজ বিপন্ন পৃথিবী?
এ পৃথিবীর মালিক তাঁর সৃষ্ট সুন্দর এ পৃথিবীর
বিপন্নতার জন্য
জবাবদিহি চাইবে কার কাছে?
কে সেই আসামী, যার অযােগ্যতা, অদক্ষতা বা
অবহেলার কারণে মানবতা বিপন্ন? মানুষ বিপন্ন?
প্রকৃতি বিপন্ন? বিপন্ন এই সভ্যতার জাদুঘর?
কে সেই আসামী, কাল কেয়ামতের আদালতে দাড়িয়ে
এ জন্য যাকে জবাবদিহি করতে হবে?
সে আর কেউ নয়- আমি, আপনি, আমরা সবাই।
এ পৃথিবীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য
যাদের আল্লাহ দায়িত্ব দিয়েছে
নিয়ােগ করেছে এ পৃথিবীর বিশ্বস্ত কেয়ারটেকার ।
সমস্ত শয়তানী তৎপরতার ডামাডােল স্তব্ধ করে দিয়ে
আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ঘােষণার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি।
হায়! এ পৃথিবীর জন্য আর কারাে মায়া না থাকুক
আমার হৃদয় তো দ্রবীভূত হবেই।
পৃথিবীকে মানুষের বাসযােগ্য করার জন্য
আর কেউ এগিয়ে না আসুক
আমাকে তাে লড়তেই হবে! কেবল মানুষ নয়-
পশু, পাখি, তৃণলতা, এই প্রকৃতির জাদুঘর
আমারই মমতার স্পর্শে হবে সজীব, সুন্দর।
হতাশার রাত শেষ
মােশাররফ হােসেন খান
হতাশার রাত শেষ।
ঝলমলে সূর্য হাসে নিকানাে উঠোনে।
কৃষক ছুটেছে মাঠে।
সবুজ ফসলে ভরে যাবে আজ পুবের খলেন।
দিনশেষে রাত এসে পুনরায়
জ্বেলে দেবে জোসনার আলাে,
দূরে যাবে যত আছে বিষাদের কালাে।
আঁধার আঁধার বলে করাে না বিলাপ
মেঘের আড়ালে আছে চাদের গিলাফ।
স্বপ্নগুলাে তুলে নাও আমনের মত
ভরে তােলাে বুক আর হৃদয়ের গােলা;
আসুক খরার কাল, ঝড়-ঝঞা শত
তবুও হৃদয়ে ভরাে সাহসের দোলা।
তবে আর শঙ্কা কেন! শুধু বরাভয়-
সাহসী মানে না কোনাে বাধা-পরাজয় ॥
পণ
— মুঃ আরিফ হােসাইন
আজকে থেকে পন করেছি
সত্য কথা বলব,
ঈমানী বল বুকে রেখে
সাহস নিয়ে চলব।
তর্কে যদি আসে কেহ
যুক্তি দিয়ে করব,
মুজাহিদের সাথে থেকে
জীবনখানী গড়ব।
কেউ যদি দেয় বাধা মােরে
তাহার সাথে লড়ব
যুদ্ধে গিয়ে জিহাদ করে
শহীদ হয়ে মরব।।
শিশুর অভিব্যক্তি
— মােঃ সহিদ সরওয়ার্দী
শিশির মতাে মন যে শিশুর,
স্বচ্ছতার জীবন।
জন্ম তাঁর নির্মলতায়
কাঁদছে শিশু নিমর্মতায়।।
মা বলে, “ওরে শিশু!
কাঁদছ কেন আজ,
তােমার জন্ম নিয়ে আমি
কতাে খুশি আজ।।
শিশু তার মায়ের মনে
চেয়ে থাকে অবুঝ মনে
কহে তারে কান্না স্বরে
বলবাে তােমায় কেমন করে।
জানি তবে জগতটা
বুঝি না এ জগত কথা
পারবাে যখন বলতে কথা
বলবাে তােমায় সকল কথা।
চেয়ে চেয়ে দিন গুনে
বলবে শিশু মায়ের মনে
এ জগতের সকল কথা বুঝে
শুনবে তবে সকল গুনি জনে।
পাপে ভরা জগতটা যে
গড়বাে মাের জীবনটা যে
চেয়ে চেয়ে দেখি বল
সকল কথা বুঝি মাের।
স্বাধীন বাংলা
— মােঃ আব্দুল আজীজ সােহাগ
স্বাধীনতা বীর জনতার
আন্দোলনের দোলা
আকাশ মাটি ঝাঁজরা করা
ট্যাংক কামানের গােলা
একাত্তরের সেই স্মৃতি কি
যায় কখনাে ভােলা?
ঘাসের পরে লাশের পাহাড়
রক্তে গলা নদী
স্বজনহারা আর্তনাদের
শ্রাবন নিরবধি।
ফুলের গায়ে চাঁদের বুকে
বেয়নটের খোঁচা
পাখীর ডানায় রক্তের দাগ
যায়নি আজো মােছা
একাত্তরের ২৬ শে মার্চ
আসলাে স্বাধীনতা।
উঠলাে জেগে শাপলা, দোয়েল
জাগলাে তরুলতা।
স্বাধীন দেশে আজ আমরা
বিজয় সুখে হাঁসী
আমার সােনার বাংলা
আমি তােমায় ভালােবাসি।
ফুল
— মােঃ নুর আলাম (সবুজ)
ফুল যে আমার ভালােবাসা
ফুল যে আমার সব।
ফুলের গন্ধে মুগ্ধ আমি
ফুল যে কবে ফুটে।
ফুলের আশায় বসে থাকি
ফুল বাগানের মাঝে।
ফুলের সাথে খেলি আমি
ফুল বাগানে বসে।
ফুলের মত গড়বাে জীবন
এই আশাটি রেখে।
স্বাধীন দেশের দীর্ঘশ্বাস
— মাহবুবুর রহমান
বাঁচা কঠিন মরা সহজ
তাইতাে মানুষ মরছে রােজ
ইট-সুড়কীর শহরটাতে
কে রাখে কার বাঁচার খোঁজ।
ট্রিগার টিপে মানুষ মেরে
কেউবা বসায় মদের ভােজ
মন্ডু-কাটা মানব কসাই
কাজ পেয়ে তার সে কী মউজ।
হিংস্র মানুষ মারছে মানুষ
বাঘ কাঁদে তাই দুঃখে,
তার কাজটাই করছে মানুষ
তবু, দাঁড়ায় না কেউ রুখে।
বস্তা বন্দী কার কাটা লাশ?
অবাক সবাই তাকিয়ে রয়
জনসাধারণ ভয়ে শীর্ণ
কার অবস্থা এমন হয়।
হৃদপিন্ডটা হাতে নিয়ে কেউ
করে যখন উল্লাস
নিরব-নিথর স্বাধীন দেশের
নিরুপায়ে পড়ে দীর্ঘশ্বাস।
ভেবে পাইনা
— আবদুল্যাহ আল মামুন
লেখা পড়ায় মন বসে না
ভেবে কিছু পাইনা।
স্কুলে যেতে পাঠায় আম্মা
ঠিকমত যাই না।
লেখা পড়ায় ডাব্বা আমি
কেন হলাম বুঝি না।
ক্লাস থেকে পালাই আমি
শিক্ষক আমায় দেখে না।
ফুটপাতে আডডা মারি
কেউ ফিরে তাকায় না।
আমার মতাে মানুষ কেনাে
এমন করে চলে না।
সবাই আমায় মন্দ বলে
আমি কিছু বলি না।
কেন হলাম এমন আমি
ভেবে কিছু পাই না।