অযু শব্দের অর্থ ধৌত করা। এবাদতের নিয়তে পবিত্র পানি দ্বারা শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ধােয়াকে অযু বলে। পারিভাষিক ভাবে বলতে গেলে এর অর্থ হচ্ছে পরিষ্কার পানি দ্বারা হাত, পা ও মুখমন্ডলের একটা নিদিষ্ট অংশ ধৈত এবং মাথা মাছেহ করা। সালাতের আগে অযু করা ফরজ। অযু ছাড়া সালাত আদায় হয় না। ইসলামী শরিয়াহ্ মোতাবেক অযু করার যেমনি রয়েছে এর নিয়ম নীতি তেমনি রয়েছে এর ফরজ, সুন্নত ও মোস্তাহাব সমূহ। আজ আমরা আলোচনা করবো অযুর দোয়া এবং অযুর ফরজ, সুন্নত ও মোস্তাহাব সমূহ নিয়ে। নিন্মে অযুর দোয়া এবং অযুর ফরজ, সুন্নত ও মোস্তাহাব সমূহ এবং অযু ভঙ্গের কারন গুলো আলোচনা করা হলঃ
অযুর দোয়া
অযু তিন প্রকার
প্রথমত ফরজঃ নামাযের জন্য অযু করা।
দ্বিতীয়ত ওয়াজেবঃ তওয়াফ করার জন্য অযু করা।
তৃতীয়ত মােস্তাহাবঃ মুখস্থ কোরআন তেলওয়াতের জন্য, নিদ্রা যাইবার জন্য, গােছলের জন্য, সর্বদাই অযুর সহিত থাকিবার জন্য অযু করা।
অযুর নিয়ত
অযু করিবার পূর্বে কনিষ্ঠ অঙ্গুলির ন্যায় সরু এবং আধ হাত লম্বা একখানি জীবিত কাষ্ঠের দ্বারা মেছওয়াক করিবে। হাদীছ শরীফে আছে, বে-মেছওয়াকে ৭০ রাকাত নামায পড়িলে যে ছওয়াব পাইবে, মেছওয়াক করিয়া ১ রাকাত পড়িলেও উহার চেয়ে বেশী ছওয়াব পাইবে। পাগড়ী বান্ধিয়া নামায পড়িলেও ঐরূপ ৭০ গুণ ছওয়াব বেশী পাইবে। – (হাদীছ)
তৎপর অযু করিতে করিতে নিম্নের দোয়া পাঠ করিবে । যথা –
ওযুর দোয়া
بسم لله العلى العظيم – والحمد لله على دين الأسلم الله شكم حق الكفر با ط وا اسم نواف ظله
অযুর দোয়ার বাংলা উচ্চারণ:
বিছমিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম, ওয়ালহামদু লিল্লাহি আলা দ্বীনিল ইসলাম, আল্ ইসলামু হাককুও ওয়াল কুফরু বা-ত্বিলুন ওয়াল ইসলামু নূরােওঁ ওয়া কুফরু জুলমাতুন।
অযুর দোয়ার অর্থ:
সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহর নামে আরম্ভ করিতেছি এবং ইসলাম ধর্মের জন্য সম্যক প্রশংসাই আল্লাহর উপযুক্ত। কেননা, ইসলাম সত্য ও কাফেরী মিথ্যা এবং ইসলাম জ্যোতির্ময় ও কাফেরী অন্ধকারময়।।
অযুতে ৪ ফরজ
১ম, কপালের উপর চুল উঠিবার স্থান হইতে থুতির নীচ এবং এক কান হইতে অপর কান পর্যন্ত পরিষ্কাররূপে একবার ধৌত করা।
২য়, দুই হাতের কনুই সহ পরিষ্কাররূপে একবার ধৌত করা।
৩য়, মাথার এক চতুর্থাংশ মােছেহ করা।
৪র্থ, দুই পায়ের টাকনুসহ পরিষ্কাররূপে একবার ধৌত করা।
অযুতে ১৫ ছুন্নত
১। দুই হাতের কনুইসহ তিনবার ধৌত করা।
২। বিছমিল্লাহ বলা।
৩। নিয়্যত করা।
৪। মেছওয়াক করা।
৫। অযু করিতে বসিয়া দেরী না করা।
৬। কুল্লি করা।
৭। এস্তেঞ্জার পর নাপাকীর স্থান পানি দ্বারা ধৌত করা।
৮। গড়গড়ার সহিত কুলি করা।
৯। নাকের ভিতর পানি পৌঁছান ।
১০। কান মােছেহ করা।
১১। সমস্ত মাথা মােছেহ করা।
১২। প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধৌত করা।
১৩। হাত পায়ের অঙ্গুলিসমূহ মর্দন করা।
১৪। দাড়ি খিলাল করা।
১৫। অযুর তারতীব মত অযু করা ইত্যাদি।
অযুতে ১৬ মােস্তাহাব
১। ডান দিক হইতে অযু আরম্ভ করা।
২। ঘাড় মােছেহ করা।
৩। কেবলামুখী বসিয়া অযু করা।
৪। ওয়াক্তের পূর্বে অযু করা।
৫। অন্য লােক হইতে অযুর সাহায্য না লওয়া ।
৬। অযুর সময় কথা না বলা।
৭। অযুর অঙ্গ মর্দন করা।
৮। উচ্চস্থানে বসিয়া অযু করা।
৯। অযুর নিয়্যত মুখে বলা।
১০। আংটি কিংবা গহনা হেলাইয়া দেওয়া।
১১। প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত কিংবা মােছেহকালে প্রথমে বিছমিল্লাহ ও শেষে দরূদ পড়া।
১২। কর্ণদ্বয় মােছেহ করা ও কর্ণকুহরে কনিষ্ঠাঙ্গুলি প্রবেশ করান।
১৩। আবশ্যক পরিমাণ পানি খরচ করা।
১৪। অযু অন্তে দরূদ পড়া ও কলেমা শাহাদাত পড়া।
১৫। অযু অন্তে খাড়া হইয়া অবশিষ্ট পানি কিছু পান করা।
১৬। অযু শেষ করিয়া পুনরায় অযু করিবার জন্য পাত্রে পানি ভরিয়া রাখা।
অযুতে ৫ মাকরূহ
১। মুখের উপর জোরে পানি মারা।
২। বাম হাতে মুখে পানি দেওয়া।
৩। দুনিয়ার কোন কথা বলা।
৪। অযুর অঙ্গ তিনবারের বেশী ধৌত করা।
৫। নাপাক জায়গায় অযু করা।
অযু ভঙ্গের কারণ
অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি
১. পায়খানা বা পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনাে কিছু বের হওয়া।
২. মুখ ভরে বমি হওয়া।
৩. শরীরের ক্ষতস্থান হতে রক্ত, পুঁজ, পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া।
৪. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া।
৫. চিত বা কাত হয়ে, হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া।
৬. পাগল, মাতাল ও অচেতন হলে।
৭. নামাজে জোরে হাসলে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, অযুর দোয়া এবং অযুর ফরজ, সুন্নত ও মোস্তাহাব সমূহ এবং অযু ভঙ্গের কারন গুলো আমরা নিজেদের জীবনে যেমন প্রয়োগ করবো তেমনি বেশি বেশি প্রচার করে দ্বীনের গুরু দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকিব। ভুল ত্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং যে কোন ধরনের মন্তব্য নিচের কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে ভুলবেন না। আল্লাহ আমাদেরকে সবাইকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুক। আমিন।।