আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

এ আয়াতটি কুরআনের সর্ববৃহৎ এবং সবচাইতে উত্তম আয়াত। হুযুর (সঃ) ইরশাদ করেন যে লোক প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসী নিয়মিত পাঠ করবে তার জন্য বেহেশতে প্রবেশের পথে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া আর কোন অন্তরায় থাকে না। তাই প্রত্যেকের উচিত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসী বাংলা অর্থ সহ পাঠ করা। আমাদের আজকের আলোচনায় আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ সহ নিন্মে আলোচিত হলঃ

 

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

আয়াতুল কুরসি

اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম। লাতা’খুযুহু ছিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছ্ছামাওয়াতি ওয়া মাফিল আরদ্। মান্ যাল্লাযী ইয়াশফাউ ইনদাহ্ ইল্লা বিইযনিহী ইয়া’লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম ওয়ালা ইউহীতুনা বিশাইয়িম মিন্ ইলমিহী ইল্লা বিমাশাআ ওয়া ছিয়া কুরসীয়্যূহুছ সামওয়াতি ওয়াল আরদ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফযুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যুল আযীম।

আয়াতুল কুরসী বাংলা অনুবাদ

আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনাে এলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব তাঁরই। কে সে, যে তার অনুমতি ব্যতীত তার নিকট সুপারিশ করবে? তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত । যা তিনি ইচ্ছা করেন তদ্ব্যতীত তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর কুরসি আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত; এদের রক্ষণাবেক্ষণ তাকে ক্লান্ত করে না; আর তিনি মহান, শ্রেষ্ঠ।

 

আয়াতুল কুরসী এর ফযীলত

 কুরআন পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হল, আয়াতুল কুরসী। এ আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তা’য়ালার সত্তাবাচক ও গুণবাচক নামের সমাবেশ হয়েছে। তার প্রভুত্ব, একাত্ববাদ, জীবন, জ্ঞান, স্থায়ীত্ব, অধিকার, কুদরত, অভিপ্রায় ইত্যাদি গুণাবলির বর্ণনা হয়েছে।

0 হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- প্রত্যেক বস্তুর একটা মূল বা চূড়া আছে। পবিত্র কোরআন শরীফের শীর্ষ সুরা হল সূরায়ে বাকারা এবং উত্তম আয়াত হল আয়াতুল কুরসী। (তিরমিজী)

০ হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত- একদা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “হে আবুল মােনজের! পবিত্র কালামে পাকের কোন আয়াতটি তােমার কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে হয় ? আমি বললাম, “আয়াতুল কুরসী।” আমার উত্তর শুনে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পবিত্র হাত দ্বারা আমাকে বুকে মৃদু আঘাত করে বললেন, “হে আবুল মােনজের! কি উত্তম জ্ঞানই না তুমি অর্জন করেছ।” 

0 হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, তার বেহেশতে প্রবেশে মৃত্যু ব্যতীত আর কোন বাধা থাকবে না। 

০ শুইবার পূর্বে এই আয়াত শরীফ পড়ে শয়ন করলে নিজের ও প্রতিবেশীর বাড়িঘর নিরাপদে থাকবে। এ আয়াত শরীফ এশার পরে তিনবার পড়ে হাতে ফু দিয়ে একটি বা তিনটি তালি দিলে আল্লাহর ইচ্ছা চোর ডাকাত বা অন্য সব অনিষ্ট হতে নিরাপদে থাকবে। 

০ অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তি সকালে ও নিদ্রায় যাবার কালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, আল্লাহ তা’য়ালা তার রক্ষক, দিন রাতের মধ্যে শয়তান তার কোন অনিষ্ট করতে পারবে না।

০ সহীহ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ভাের বেলা এবং নিদ্রার পূর্বে এ আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার তত্ত্বাবধানকারী হবেন। সুতরাং দিবা-রাত্রির মধ্যে কখনাে শয়তান তার নিকট ঘেষতে পারবে না। 

০ কারাে শরীর বন্ধ করতে হলে এশার নামাযের পর এ আয়াতুল কুরসী  তিন বার পাঠ করে উভয় হাতে দম করে একটি তালি দিবে । আল্লাহর রহমতে শরীরের উপর জ্বীন-পরী বা ভূত-প্রেত তার কোনরূপ ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।

০ বাসগৃহ কিংবা দোকান গৃহ ইত্যাদির দরজায় অত্র আয়াত লিখে লটকায়ে রাখলে উপার্জন বৃদ্ধি হয় এবং চোর-ডাকাত প্রবেশ করতে পারবে না।

0 কিছু লবনের ওপর এটা সাতবার পাঠ করে সাতটি ফুঁক দিয়ে ঐ লবণ সাত ভাগ করতঃ একাদিক্রমে সাতদিন প্রাতঃকালে খালিপেটে খেতে থাকলে কাশির রােগীর কাশ ভাল হবে।

০ গভীর রাত্রে একাকী চলবার সময় কিংবা কোন ভয় সংকুল নির্জন স্থানে উপস্থিত হয়ে এ আয়াতটি পড়তে থাকলে আল্লাহর রহমতে কোন জ্বিন, ভূত, দেউ, পরী বা অন্য কিছুতেই কোনরূপ ক্ষতি করতে পারে না।

০ প্রত্যেক ফরজ নামাযের পূর্বে অথবা পরে আয়াতুল কুসরী একবার করে পাঠ করলে উপার্জন বৃদ্ধি হবে প্রাতঃকালে এ আয়াত পড়ে কার্যে বের হলে কোন বিষয়ে কারাে মুখাপেক্ষী হতে হবে না।

 

ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত

আল্লাহর নামে ঘুমানোও একটি শান্তিপূর্ন ইবাদত। অন্যান্য অনেক ইবাদত ঘুমের সাথে জড়িত। এর মধ্যে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ঘুমাতে যাওয়া। আর ফেরেশতারা সারারাত ঐ ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য দোয়া করতে থাকে। হাদীসের দীর্ঘ বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে- “যখন বিছানায় উঠবেন তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন”। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা আপনার জন্য একজন অভিভাবক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে আসবে না।’

হাদিসের পূর্ণ বর্ণনা হলো, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার এক ব্যক্তিকে সাদাকার মাল চুরি করতে দেখেছিলেন। তারপর তার হাত ধরে বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব।’ তখন লোকটি বলল যে সে খুবই অভাবী এবং তার অনেক প্রয়োজন। তাই রহমতের বশবর্তী হয়ে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে মুক্তি দেন।

পরদিন সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘গতকাল অপরাধী কী করেছিল?’

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন তাকে ক্ষমা করতে বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে।

এভাবে টানা ৩ দিন সাদকার মালামাল চুরি করতে আসে চোর। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুও তাকে প্রতিবারই মুক্তি দিয়েছিলেন। অবশেষে তিনি (সেই চোর) আয়াতুল কুরসীর সময়কাল বর্ণনা করে বলেন-

আমি আপনাকে এরকম কিছু বলব; যার মাধ্যমে আল্লাহ আপনাকে বরকত দান করবেন।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু এ বিষয়ে জানতে চাইলে (সে) চোর বলল, “যখন তুমি রাতে ঘুমাতে যাবে, আয়াতুল কুরসি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম) পড় এবং ঘুমাবে, তখন আল্লাহ তোমার পাহারা দেওয়ার জন্য একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন। যে তোমার সাথে থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত কোন শয়তান তোমার ধারে কাছে আসতে পারবে না।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ঘটনা শুনে বললেন, “যদিও সে মিথ্যাবাদী, সে সত্য বলেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘আপনি কি জানেন তিনি কে?’ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সে শয়তান।” (বুখারী)

এই পুরো আয়াতটি আল্লাহর একেশ্বরবাদ, মর্যাদা ও পুণ্যের বর্ণনা, তাই আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতের অনেক গুণাবলী রেখেছেন। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে আয়াতুল কুরসীর সঠিক আমল করার মাধ্যমে হাদীসে ঘোষিত ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমীন

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে সহজেই বুঝা যায় যে, আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ সহ পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের এই আলোচনা তখনই সফল হবে যখন এই আলোচনা থেকে কেউ বৃন্দু পরিমান উপকৃত হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে আমল করার তৈফিক দান করুন। আমিন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!