আশুরার ফজিলত ও আমল সমূহ

আশুরার ফজিলত

আশুরার ফজিলত

মহররম হচ্ছে হিজরি সনের প্রথম মাস। আর আশুরা অর্থ দশম। শরিয়তের ভাষায় মহররমের ১০ তারিখই হচ্ছে পবিত্র আশুরা। মহররম এর অর্থ তাৎপর্যপূর্ন এবং মর্যাদাপূর্ন। মহররমের দশ তারিখ তথা এই ‍দিবসটি অত্যান্ত ঘটনা বহুল। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ  ‍দিবস। সেদিক থেকে আশুরার ফজিলত অত্যান্ত তাৎপর্যপূর্ন ও গুরুত্বপূর্ণ। নিন্মে আশুরার ফজিলত নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

আল্লাহ তায়ালা তাঁর অলৌকিক শক্তির দ্বারা অলৌকিকভাবে এই পৃথিবী এবং এতে থাকা বস্তু সমূহ সৃষ্টি করেছেন। মানুষকেই সৃষ্টি করেন সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে। অতঃপর তিনি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট পবিত্র কুরআন নাজিল করলেন এবং তাঁর শক্তির বিভিন্ন গোপন রহস্য উদঘাটন করলেন। (দশই মুহররম) এমনই এক রহস্যময় এবং ঘটনাবহুল দিন। তাই এই দিনটি যেমনি ইবাদাতের জন্য তেমনি শেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ।

 

এর ফজিলত  ও তাৎপর্য

এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এই দিনটিতে হযরত আদম (আঃ) – এর দোয়া কবুল হয়েছিল। এই দিন বন্যার পরে হযরত নূহ (আঃ) এর কিস্তি মাটিতে লেগেছিল। হযরত আইয়ুব (আঃ) রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, এই দিনে হযরত ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্মও এই দিনে। সর্বশেষ এই দিনে কারবালার ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় তৈরি করে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতি ইমাম হোসেইন অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা ইয়াজিদের পরাধীনতা স্বীকার করেননি, এবং ৬১ হিজরিতে দশই মহররমে একটি অসম যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। যা একটি বিরল উদাহরণ। সেদিন ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (রাঃ) নির্মমভাবে ইয়াজিদের সিমার গোষ্ঠী দ্বারা তাঁর শিশু পুত্রসহ ৭২ জন সাহাবীকে নির্মমভাবে শহীদ হতে হয়েছিল। ধর্মবিরোধীরা সেদিন ইসলামের একটি কলঙ্কজনক ইতিহাস রচনা করেছিল। সত্য ও ন্যায়বিচারের আন্তরিক অভিভাবক ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর পরিবারবর্গ ধৈর্য সহকারে সেদিন রক্তের সাগর প্রবাহিত করেছিলেন এবং ইসলামী জীবনযাপনে বিজয়ের জন্য বীজ বপন করেছিলেন। তাদের উত্সর্গীকৃত জীবনগুলি ইসলামের ইতিহাসে গৌরবময় উদাহরণ হিসাবে সোনার অক্ষরে লিখিত হয়েছে। দশই মুহররম সেদিন কারবালায় যে ইতিহাস রচিত হয়েছিল তার ভূমিকা অপরিসীম। পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই দশই মুহররম ছিল অনেক ঘটনা বহুল ইতিহাসের স্বাক্ষী। তাই আশুরার ফজিলত ও তাৎপর্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

দশই মুহররম তথা আশুরার ফজিলত আল্লাহ তায়ালা খুবই তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। নিন্মে তা আলোচনা করা হলঃ

* হযরত আদম (আঃ) দশই মহররমে সৃষ্টি হয়েছিলেন।

* দশই মুহররম হযরত আদম (আঃ) স্বর্গে প্রবেশ করেছিলেন।

* আশুরায় হযরত আদম (আঃ) কে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল।

* এই আশুরার দিন হযরত আদম (আঃ) – এর তওবা কবুল করা হয়।

* হযরত আদম (আঃ) এই দশই মুহররম হযরত হাওয়া (আঃ) – এর সাথে পুনরায় মিলিত হন।

* নভোমন্ডল ও পৃথিবী মুহররম মাসেই সৃষ্টি হয়েছে।

* আরবের অজ্ঞ লোকেরাও মুহররম মাসকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল।

* এই মহররম মাসে চাঁদ-সূর্য, গ্রহ-তারা, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র-মহাসাগর তৈরি হয়েছিল।

* হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আশুরায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

* আশুরায় হযরত মূসা (আঃ) এবং আল্লাহর মধ্যে আলাপ হয়েছিল।

* এই আশুরায় হযরত মুসা (আঃ) – এর নিকট তাওরাত নাজিল হয়েছিল।

* আশুরায় হযরত মুসা (আঃ) তার সঙ্গীদের নিয়ে নীল নদী পার হলেন এবং ফেরাউনের সেনাবাহিনী ডুবে গেল।

* হযরত আইয়ুব (আঃ) এই আশুরায় দীর্ঘ ১৮ বছর পর গুরুতর অসুস্থতা থেকে পুনরুদ্ধার হলেন।

* হজরত সোলায়মান (আঃ) পুনরায় আশুরার দিনই রাজত্ব ফিরে পেয়েছিলেন।

* হযরত দাউদ (আঃ) এর তওবা আশুরায় কবুল করা হয়েছে।

* হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর সাথে এই আশুরায় সাক্ষাত পেয়েছিলেন।

* হজরত ঈসা (আঃ) আশুরায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

* এই আশুরার সময়ই আল্লাহ তায়ালা হজরত ঈসা (আঃ) কে স্ব-শারীরে স্বর্গে নিয়ে যান।

* আশুরায় আল্লাহ হযরত ইদ্রিস (আঃ) কে পুনরুত্থিত করেন এবং তাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হয়।

* চল্লিশ দিন পরে হযরত নূহ আলাইহিস সালামের জাহাজ আশুরার ‍দিনেই পাহাড়ের পাশে ভিড়েছিল।

* আশুরায় হযরত নূহ (আঃ) মাটিতে অবতরণ করেছিলেন।

* আশুরার দিনে মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মতদের গুনাহ মাফ করা হয়।

* হযরত জিব্রাইল (আঃ) আশুরায় পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন।

* আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে প্রথমবার রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলেন আশুরাতেই।

* হজরত ইউনুস (আঃ) আশুরার ‍দিনই মাছের পেট থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।

 

কারবালার ঘটনা

হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) এর মতো ইমামের পক্ষে ইয়াজিদের ইসলামী বিধান গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। খেলাফত পদ্ধতির পুনরুজ্জীবন ইমাম হুসাইনের (আঃ) সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল। মুসলিম বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষের সমর্থনও তাঁর ছিল। এ ছাড়া, কুফার লোকজন যখন তাকে বার বার ইয়াজিদের অপশাসন থেকে বাঁচাতে ইমাম হুসাইনের সাহায্য চেয়েছিল, তখন তিনি সাড়া দিয়েছিলেন। তিনি কুফায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। হুসাইন তার চাচাত ভাই মুসলিম-বিন-আকিলকে কুফারের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পাঠিয়েছিলেন। কুফার মুসলমানদের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে মুসলমানরা ইমাম হোসেনকে একটি চিঠি লিখে তাকে কুফায় আসার অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে এরই মধ্যে, ইয়াজিদের অধীনে ইরাকের শাসক, কঠোর হৃদয় ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ, মুসলিমকে খুঁজে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে পাশাপাশি তার সমর্থকারীদের কেও হত্যা করে। কুফার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে গেল। তারা হুসাইন (আঃ) – এর সহায়তায় এগিয়ে আসার সাহস করেনি। যদিও কুফার লোকেরা ইমাম হুসাইনকে (আঃ) খলিফা হিসাবে দেখতে চেয়েছিল, কিন্ত তারা ইমাম হুসাইন (আঃ) – এর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে রাজি ছিল না।

 

এটি অত্যন্ত স্পষ্ট যে ইমাম হোসাইন (আঃ) এর সাহাবাগণ ইয়াজিদের নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে অবগত হয়েও ইমামের সাথে জেনেশুনে যোগদান করেছিলেন। ইমাম (আঃ) কে ভালবাসা, তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস থাকায় তারা ইমাম হুসাইন (আঃ) এর সাথে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে। তরোয়াল দ্বারা যে যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছিল তার চেয়ে ইমাম হোসেইন (আঃ) এবং তাঁর সাহাবাগণকে জনগণের অজ্ঞতা ও মূর্খতার আঘাতটি আরও বেদনাদায়ক ছিল। সে কারণেই মানুষের চিন্তার জগত থেকে অজ্ঞতার পর্দা সরিয়ে নেওয়া তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিহাদ ছিল। কুফর ইয়াজিদ বাহিনীর সেনাপতি ওমর, হুসাইন (আঃ) কে ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে বললে, তিনি তা অস্বীকার করেছিলেন। ফলস্বরূপ, তারা ফোরাত নদীটিকে ঘিরে ফেলে এবং হুসাইনের শিবিরে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

 

তাসুয়ার দিনগুলিতে কারবালার পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ইমাম (আঃ) – এর সাহাবীগণ অটল আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করছিলেন। চরম সঙ্কটের মুখেও তারা ইমামের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেনি। হজরত আব্বাস (আঃ) ছিলেন এই দৃঢ় বিশ্বাসের অধিকারী। তিনি হযরত আলী (আঃ) – এর পুত্র ছিলেন। তাঁর মা ছিলেন উম্মুল বানিন। হযরত আব্বাস ছিলেন নির্ভীক যুবক। তাঁর বিশ্বাস, বীরত্ব, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক গুণাবলি প্রবাদবাদী ছিলেন। তিনি দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন। কারবালার অসম যুদ্ধে তিনি ইমাম (আঃ) – এর প্রধান সিপাহী ছিলেন। তিনি ইমামকে রক্ষা করার জন্য, মহিলা ও শিশুদের তাঁবু রক্ষার জন্য এবং ইমাম হুসাইন (আঃ) – এর সন্তানদের জন্য পানি সরবরাহের জন্য কঠোর লড়াই করেছিলেন।

 

অবশেষে, ওবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের নেতৃত্বে ৪,০০০ লোকের একটি বাহিনী ইমাম হোসাইনকে (আঃ) ঘেরাও করে এবং ফোরাত নদীর প্রবেশের পথ অবরুদ্ধ করে দেয়। মুষ্টিমেয় মানুষের বিরুদ্ধে ৪,০০০ সৈন্য। জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ইমাম (আঃ) – এর ছোট বাচ্চারা খুব তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে এবং হজরত আব্বাস (আঃ) পানি আনতে ফোরাত নদীতে যান। তিনি নিজেও খুব তৃষ্ণার্ত ছিলেন। তিনি পানি আনতে গিয়ে ইমাম হোসেন (আঃ) – এর তৃষ্ণার্ত সন্তানের কথা স্মরণ করেছিলেন। শত্রুরা তার একটি হাত কেটে ফেলল তখন সে পানি ফেলে এবং মশক ভরাট করে তাঁবুতে রওনা হচ্ছিল। সে মশকটি অন্য হাতে নিয়ে ইমামের তাঁবুর দিকে ছুটে গেল। এবার অন্য হাতটিও কেটে গেল। এবার সে মশকটি মুখে নিয়ে তাঁবুতে যেতে চেয়েছিল। শত্রুর তীরটি তাকে সরাসরি শরীরে আঘাত করে। এভাবে তিনি শহীদ হন। অতঃপর অসম এই যুদ্ধে আলী আকবর (আঃ) ও শহীদ হন।

কারবালায় যারা শহীদ হয়েছিল তাদের মধ্যে হযরত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় সাহাবী, হাবিব ইবনে মাজাহের, মুসলিম ইবনে আওসাজা এবং নও মুসলিম ওহাবও ছিলেন।

 

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, হুসাইন (আঃ) বিড়ম্বনায় পড়ে ওবায়দুল্লাহকে তিনটি প্রস্তাবের যে কোনও একটি গ্রহণ করতে বলেন। হয় তাকে মদিনায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক, অথবা তাকে তুরস্কের সীমান্তের দুর্গে থাকতে দেওয়া হোক, অথবা ইয়াজিদিদের সাথে আলোচনার জন্য তাকে দামেস্কে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। তবে অহংকারী ওবায়দুল্লাহ এর কোনটিই মেনে নেননি। এদিকে পানির অভাবে হুসাইন (আঃ) – এর শিবিরে চিৎকার শুরু হয়ে গেল। ছোট বাচ্চারা অজ্ঞান হতে লাগল। নিরুপায় হুসাইন সর্বশেষ অনুরোধ করলেও ধর্মবিরোধীদের মন গলে যায়নি। ১০ই অক্টোবর, ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে, কারবালার প্রান্তরে একটি অসম যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। হুসাইনের ভ্রাতুষ্পুত্র কাসিম শত্রুর হাতে শহীদ হন। তৃষ্ণার্ত হুসেনের শিশু পুত্র আসগর (আঃ)কে তার কোলে ফোরাত নদীর দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন, তবে ইয়াজিদ বাহিনীর নিক্ষেপিত তীরটি শিশু ছেলের শরীরে আঘাত করে এবং শিশু পুত্রকে শহীদ করে দেয়, হুসাইন (আঃ) বিষন্ন মনে তাঁবুটির সামনে গেলেন এবং একা বসে পড়লেন। সীমার নামে পরিচিত ইয়াজিদের এক সেনা নামাজ পড়ার সময় হুসাইন (আঃ) কে মাথায় ছুরিকাঘাত করে মস্তক শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। এই হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যে শক্ত হৃদয়ও গলে গেলো। হুসাইনের (আঃ) পরিবারের জীবিত সদস্যদের ধরে নিয়ে যায় এবং দামেস্কের ইয়াজিদে প্রেরণ করা হয়। এদিকে হুসাইনের (আঃ) মৃত্যুর এমন ভয়াবহ দৃশ্য পুরো দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলল। ইয়াজিদ ভয় পেয়ে গেল। ক্ষমতা রক্ষায় এবং জনগণের ক্ষোভের ভয়ে কৌশলগত ভূমিকায় তিনি বন্দীদের মুক্তি দিয়ে মদীনায় প্রেরণ করেন। কিন্তু তারপরেও বনি উমাইয়াদের অত্যাচার থামেনি। তারা একের পর এক ইমাম (আঃ) কে শহীদি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেন।

 

 

এ দিনের আমল

যেহেতু মোহররমের দশ তারিখ তথা পবিত্র আশুরার দিনটি ঐতিহাসিক দিক থেকে অনেক বেশি ঘটনা বহুল এবং আশুরার ফজিলত ও তাৎপর্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেহেতু এই দিবসের কিছু আমল ইসলাম পূর্ব যুগ থেকেও চালু ছিল যা আমরা হাদিস থেকেও জানতে পারি। আশুরার ফজিলত ও তাৎপর্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ পাওয়া যায়। সর্বশেষ কারবালার প্রান্তরে হযরত ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের মধ্যদিয়ে এই দিনটি মুসলিম জাতির জন্য আরো বেশি স্বরনীয় হয়ে থাকলো। এর মৈলিক তিনটি আমল সম্পর্কে হদিসে প্রমান পাওয়া যায়। যা নিন্মে আলোচনা করা হলঃ

 

রোজা রাখা

আশুরার দিনে তিনটি জিনিস আমল হিসাবে করা যায়। প্রথমে রোজা রাখা। এই আমল সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আশুরা উপলক্ষে দুই দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, মহররমের দশমীর দিন এবং এর একদিন আগে বা পরে  রোজা রাখা যেতে পারে। ইসলামে আশুরার রোজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বর্নিত আছে যে, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোযা ফরয ছিল।

 

মহররম আশুরার দশ তারিখে রোজার ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে, আশুরার দিন রোজা রাখার কারণে আল্লাহ বান্দার এক বছরের  গুনাহ মাফ করে দেন। (সহিহ মুসলিম ১১৬২)

 

হাদীসে হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে রমযানের পর সর্বোত্তম রোজা হ’ল মহরমের রোজা। আর ফরজের পর সর্বোত্তম নামাজ হ’ল তাহাজ্জুদের নামায।

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মুসা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে আমাদের সম্পর্ক আপনার চেয়ে নিকটবর্তী। অতঃপর তিনি তাদেরকে মুহররমের ৯-১০ বা ১০-১১ দুটি রোজা পালন করতে বললেন যাতে তারা ইহুদিদের মতো না হয়।

 

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা।) থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার ও রামাদানের রোযাকে যেমন গুরুত্ব ‍দিয়েছিলেন অন্য কোন রোযাকে তেমন গুরুত্ব দেননি”। (ছহীহ বুখারী, হাদিস: ২০০৬; মুসলিম, হাদিস: ১১৩২)

 

ভাল খাবারের ব্যবস্থা করা

আর একটি আমল দুর্বল হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আর তা হ’ল আশুরার দিনে যতটা সম্ভব খাদ্যে উদারতা প্রদর্শন করা। যথাসম্ভব ভাল খাবার খাওয়া। আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, “যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারে উদারতা দেখায়, সে সারা বছর উদার হবে।” (তাবারানী, মুজাম্মিল কবির, হাদিস: ১০০০৭;)

 

এই হাদীসের বর্ণনায় দুর্বলতা রয়েছে। তবে ইবনে হিব্বানের মতে এটি ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য স্তরের একটি হাদীস। আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু দাবি করেছেন যে রিজিক প্রশস্থ হওয়া সম্পর্কে কোন হাদীস নেই; এটা ধারণাগত। ইমাম আহমদ (রহঃ) বলেছেন, এটি খাঁটি হাদিস নয়। তবে এক্ষেত্রে একাধিক বর্ণনা রয়েছে তা অস্বীকার করার উপায়ও নেই। এবং এটি ‘হাসান লিগাইরিহি’ মঞ্চের হাদীস দ্বারা করা যেতে পারে। (আস-সায়াইকুল মুহরিকা আলা আহলির রফজি ওয়াদ দালাল ওয়াজ জান্দিকা: ২/৫৩৬))

 

নবীর পরিবারের জন্য দোয়া করা

আরও একটি আমল যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত হয়। আর তা হ’ল আহলে বাইতের সদস্যরা, অর্থাৎ নবীর পরিবারের জন্য শাহাদাতের কারণে দুরুদ পড়া ও প্রার্থনা করা, এবং সত্যের উপর অবিচল থাকতে তাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।

 

এই তিনটি কাজ বাদে আশুরায় আর কোনও আমল নেই। মনে রাখবেন, ইসলামের ইতিহাসে মুহররম মাসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য বিভিন্ন কারণে রয়েছে। ইসলাম-পূর্ব যুগেও মহররমের ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, প্রাক-ইসলামী যুগে মক্কার কুরাইশ বংশের লোকেরা আশুরায় রোজা করতেন এবং নবী করিম (সাঃ) ও আশুরায় রোজা  রেখেছিলেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৬৩২)

 

মহরম মাস সম্পর্কে কিছু সাধারণ ভুল ধারণা রয়েছে। যেমন এই মাসে বিয়ে না করা, নতুন বাড়ি তৈরি না করা, কোনও ভাল কাজ শুরু না করা, মাংস না খাওয়া এবং নিরামিষ খাবার খাওয়া, মদ্যপান না করা, নতুন পোশাক এবং সুন্দর পোশাক না পরানো, সাদা পোশাক বা কালো পোশাক পরা তথা শোকের পোশাক পরা, সব ধরণের আনন্দ উৎসব এড়ানো ইত্যাদি এগুলি কুসংস্কার। কুরআন ও হাদীসে এর কোন ভিত্তি নেই। কোরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে ইবাদত পালন করা ওয়াজিব। দলিল প্রমান-হীন আমলে যেমন সুফল আশা করা যায় না বরং তাতে লোকসানের ঝুঁকি রয়েছে।

 

সবশেষে বলতে চাই যে, আশুরার ফজিলত ও তাৎপর্য এতই গুরুত্বপূর্ণ যা বলার অবকাশ নেই। আল্লাহ আমি সহ আমাদের সবাইকে তদ অনুযায়ী আমল করার তৈফিক দান করুন। আমিন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!