ইফতারের দোয়া

সারা দিন রােজা রাখার পর সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথেই যে আহার বা পানাহার করে রােজা ভঙ্গ করা হয়, তাকে ইফতার বলে। সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথেই ইফতারের সময়। যথা সময়ে ইফতার করার ফজিলত অনেক। তাই যথাসম্ভব সাথে সাথেই ইফতার করতে হবে। আজ আমরা জানবো ইফতারের দোয়া ও রোজার মাসে ইফতারের ফজিলত সম্পর্কে।

 

ইফতারের দোয়া

 

ইফতারের দোয়া

 

بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ

আরবী উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়াতাওয়াক্কালতু আলা রিযকিকা ওয়াফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আর রাহমানির রাহিমীন।

বাংলা অনুবাদঃ “হে আল্লাহ! আপনারই সন্তুষ্টির জন্য রােজা রেখেছি এবং আপনারই রিযিকের ওপর নির্ভর করেছি এবং এখন আপনারই অনুগ্রহে ইফতার করিতেছি।

 

একজন রােজাদারকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানির দ্বারা ইফতার করিয়ে অনেক সাওয়াবের অধিকারী হতে পারি। এটা অত্যন্ত অনুধাবনের বিষয়। ইফতারের সময় দোয়া করা চাই। ইফতারের সময় দোয়া কবুলের বিশেষ সময়। দোয়ার পর নিন্মের এই দোয়া করে ইফতার করবে-

“হে আল্লাহ! তোমার রহমতের আশায় রােজা রেখেছি এবং তোমার দেওয়া হালাল রুজীর মাধ্যমেই ইফতার করিতেছি”।

 

ইফতারের সময় করনীয়

১. সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা।

২. ইফতারের সময় অন্যান্য কাজে ব্যস্ত না হয়ে ইফতার খাওয়া।

৩. ইফতারের সময় বেশি বেশি প্রার্থনা করুন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

৪. খেজুর, সাদা পানি বা দুধ দিয়ে ইফতার করার পর জামাতে মাগরিবের নামাজ পড়া।

৫. ইফতারের কারনে দেরিতে জামাত তরক না করা।

৬. ইফতারের সময় ভারী খাবার খাবেন না। মাগরিবের নামায আদায় করার পর মনের মতো খাবার খান। আর এটি শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে। ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার খেলে জামাত ও ইবাদত থেকে বঞ্চিত হবেন।

 

ইফতারের ফযিলত

মহান আল্লাহ তা’য়ালা রােজার মধ্যে যেমন ফযিলত দান করেছেন, রােজার ইফতারের মধ্যেও তেমন ফযিলত দান করেছেন। রােজাদারগণ ইফতার সামগ্ৰীসমূহ সামনে নিয়ে যখন ইফতার করার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে কোন কিছুই মুখে তুলে নেন না, তখন মহান আল্লাহ বান্দাহর এ আল্লাহ ভীরুতা দেখে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। রাসূল [সঃ] বলেছেন- তােমরা যখন ইফতার কর, তখন খুরমা খেজুর দ্বারা ইফতার কর। কারণ এ খেজুর এর মধ্যে বরকত রয়েছে। খুরমা খেজুর না থাকলে যে কোন ফল অথবা পানি কিংবা দুধ দ্বারা ইফতার করা যায়।

অপর ব্যক্তিকে ইফতার করানাের ফযিলত সম্পর্কে রাসূল (সঃ) বলেছেন-

উচ্চারণঃ ফামাং ফাক্বারা ফিহি ছায়েমান কানা মাগফিরাতুল লিযুনুবিহি ওয়া ইকু রাকাবাতিম মিনান নার।

অর্থাৎঃ “যদি কোন ব্যক্তি রমযান মাসে কোন রােজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করায়, তবে ইহাই হয়ত তার গুনাহ মাফ এবং দোযখের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হয়ে যেতে পারে।”

অন্য আরো এক হাদীসে রাসূলে পাক (সঃ) ইরশাদ করেছেন-

উচ্চারণঃ ফামাং ফাল্বারা ছায়েমান আলা তামারাতিন আও শারবাতিন মিম মাইন আও মাযকাতিন লাইসা কানা লাহু মাগফিরাতিন ওয়া শাহরু আউয়্যালিহি রাহমাতুন ওয়া আওসাতুহু মাগফিরাতুন ওয়া আখারুহু ইত্বকুম মিনান্নার।

অর্থাৎঃ “যে ব্যক্তি রােজাদারকে কিছু খুরমা খেজুর বা সামান্য পানির শরবত কিংবা এক ঢােক দুধ দ্বারা ইফতার করায় তা তার জন্য ক্ষমার কারণ হয়ে যেতে পারে”।

হাদীস শরীফে আরো বর্নিত আছে, “যে ব্যক্তি কোন রােজাদারকে এক ঢােক পানির দ্বারা ইফতার করাবে, সে রােজাদারের মত সাওয়াবের অধিকারী হবে। এতে রােজাদারের সাওয়াবের কোন প্রকার কম হবে না।”

 

দরজায় কড়া নাড়ছে মহিমান্বিত রমজান মাস। যারা এখনো রমজানের প্রস্তুতি নেননি তারা আজ থেকেই প্রস্তুতি শুরু করুন। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের দুই মাস আগে রমজানের জন্য দোয়া করতেন- “হে আল্লাহ, আমাদের রজব ও শা’বান মাসে বরকত দিন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।” (মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস : ১৩৬৯)

নিঃসন্দেহে, এই দোয়াটি ছিল রমজানের জন্য রাসূল (সা.)-এর মানসিক প্রস্তুতি। আর হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী রজব মাস থেকেই মুমিন রমজানের প্রস্তুতি শুরু করবেন। তবে যারা এখনো রমজানের প্রস্তুতি শুরু করেননি, তারা শাবান মাসেই প্রস্তুতি নেবেন। আর শাবান মাস এখন বিদায়ের পথে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এ মাস সম্পর্কে মানুষ উদাসীন। এটি সেই মাস যে মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই আমার আমল আল্লাহর কাছে এমন অবস্থায় পেশ করা হোক যখন আমি রোজা রাখি।’ (সুনানে নাসায়ী, হাদিস : ২৩৫৭)

পাঁচটি প্রস্তুতিমূলক কাজ

রাসুল (সাঃ) এর জীবন থেকে রমজানের জন্য তিনটি প্রস্তুতিমূলক কাজের নির্দেশনা আসে। এইটা-

১. দোয়া: রাসূল (সাঃ) রজব মাসের শুরু থেকেই দোয়া করতেন- ‘হে আল্লাহ, আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস : ১৩৬৯)

২. চাঁদের হিসাব রাখা: আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শা’বান মাসের হিসাব রাখতেন। এ ছাড়া আর কোনো মাসে এত হিসাব করেননি। অতঃপর তিনি রমজানের চাঁদ দেখতেন এবং রোজা রাখতেন। আকাশ মেঘলা থাকায় চাঁদ দেখা না গেলে ৩০ দিনে শাবান মাস গণনা করে রোজা রাখতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)

৩. রোজা রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন: শাবান মাসে মহানবী (সা.) প্রচুর রোজা রাখতেন। তবে চলতি মাসের শেষে এক-দুই দিন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন তিনি। রাসুল (সাঃ) রমজানের এক বা দুই দিন আগে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮১৫)

৪. তওবা: রমজান মাসকে ফলপ্রসূ করতে হলে তাওবা করা এবং গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাও, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর, আয়াত ৩১)

৫. ইবাদতের জন্য ছুটি নেওয়া: রমজান ইবাদতের মাস। তাই রমজানের আগে যদি পারিবারিক, ব্যবসায়িক ও পেশাগত কাজগুলো গুছিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে রমজানে ইবাদতে বেশি সময় দেওয়া যায়। রমজানের আগের সামান্য সময়টাকে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারলে আশা করা যায় আল্লাহ আপনাকে রমজান মাসে বেশি বেশি আমল করার তাওফীক দান করবেন। কারণ তিনি বলেছেন, ‘যারা আমার জন্য চেষ্টা করে, আমি অবশ্যই তাদের আমার পথ দেখাব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন।’ (সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৯)

 

পরিশেষে বলতে পারি, কোন ব্যক্তি যদি আগ্রহের সাথে ইফতারের দোয়া সহ উপরে উল্লেখিত সকল বিষয় সমূহ মনেযোগ সহকারে অধ্যয়ন করে, আশা করি ইফতারের দোয়া সহ সকল বিষয়ে অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হবে। তো আজকে ইফতারের দোয়া নিয়ে যে আলোচনা করা হল তা কেমন হল তা কমেন্টস করে জানান এবং বেশি বেশি শেয়ার করে রমজানের এই পবিত্র দিনে বন্ধুদেরকে জানিয়ে দেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে আমল করার তৈফিক দান করুন। আমিন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!