সহবাসের দোয়া

বিবাহের মাধ্যমে আল্লাহ নারী-পুরুষের মধ্যে যৌন মিলনকে এবং বংশবৃদ্ধিকে কল্যাণের কাজ করেছেন। বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর যাবতীয় বৈধ কাজ হয়ে ওঠে কল্যাণ ও সওয়াবের কাজ। স্বামী-স্ত্রীর মিলনই সন্তান প্রসবের একমাত্র মাধ্যম। এর কিছু নিয়ম ও নীতি এবং দোয়া রয়েছে। দোয়াও এক প্রকারের ইবাদত। তবে সেই দোয়া হতে হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ অনুযায়ী। স্বামী-স্ত্রী মিলনের আগে কেন সহবাসের দোয়া পড়বেন? এই দোয়া কি শুধুমাত্র সহবাস বা নিরাপত্তার জন্য? নাকি অন্য কল্যাণও আছে, নিচে তা তুলে ধরা হলো-

সহবাসের দোয়া

 

সহবাসের দোয়া

بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আরম্ভ করছি, তুমি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে, তা হতেও শয়তানকে দূরে রাখ।’

 

দোয়ার ফজিলত

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে চায়, তখন সে যেন এ দোয়া পাঠ করে। এ দোয়ার ফলে তাদের একটি সন্তানের জন্ম হলে শয়তান সেই সন্তানের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)।

হজরত আলী (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি সহবাস করতে চায়, তার নিয়ত যেন এমন হয় যে, আমি ব্যভিচার থেকে দূরে থাকব। আমার মন এদিক ওদিক ঘুরবে না এবং ভালো ও সৎ সন্তান জন্ম নেবে। এই নিয়তে সহবাস করলে সওয়াব তো হবেই সঙ্গে সঙ্গে নেক উদ্দেশ্যও পূরণ হয়।

 

স্বামী-স্ত্রীর যে বিষয়গুলো মনে রাখা দরকার

শয়তান যৌনতা পছন্দ করে। লজ্জার জায়গা দেখতে ভালোবাসে। কারণ স্বামী-স্ত্রীর পুনর্মিলনের সময় শয়তান সেখানে হাজির হয় এই যৌনতায় নিজেকে জড়ানোর উদ্দেশ্যে।

যখনই কোন ব্যক্তি সহবাসের সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শেখানো এই দোয়াটি পাঠ করে তখন শয়তান থাকতে পারে না। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মিলন নিরাপদ ও শয়তানের প্রভাবমুক্ত থাকে।

যদি এই যৌন মিলনে অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর মিলনে সন্তানের জন্ম হয়, তবে পরবর্তী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই সন্তান শয়তানের যাবতীয় প্রভাব থেকে নিরাপদ থাকে।

আর এই দোয়া না পড়ে স্বামী-স্ত্রী মিলন করলে শয়তান সেই মিলনে অংশ নেয় এবং স্বামী-স্ত্রীর মনে খারাপ উদ্দেশ্য সৃষ্টি করে। যা দাম্পত্য জীবনে কলহ ডেকে আনে। আর সেই মিলনে কোনো সন্তান জন্ম নিলে সেই শিশু শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারে না।

তাই শয়তানের প্রভাবমুক্ত পরিবার গড়তে হলে স্বামী-স্ত্রীর বিয়ের আগে প্রিয় নবির শেখানো এ দোয়াটি পাঠ করা আবশ্যক। হাদীসে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই মিলনের ফলে যদি কোনো শিশুর জন্ম হয়, তাহলে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত)।

তাই স্বামী-স্ত্রী মিলনের আগে দোয়া পড়া কিংবা তা জেনে নেয়া কোনো লজ্জার বিষয় নয়, বরং সুন্দর পরিবার গঠন ও বংশ বৃদ্ধির জন্য এটা একটা উত্তম পরিকল্পনাও বটে।

কারণ যারা যৌন মিলন করে তারা নিশ্চিতভাবে জানে না যে কোন মিলনে সন্তানের জন্ম হবে। তাই স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেক মিলনের আগেই এই দোয়াটি পড়বেন। এজন্যই হযরত আলী (রা.) বলেছেন:

‘যে ব্যক্তি সহবাস করতে চায় তার নিয়ত থাকুক যে আমি ব্যভিচার থেকে বিরত থাকব। আমার মন এদিক ওদিক ঘুরবে না এবং ভালো ও সৎ সন্তান জন্ম নেবে। স্বামী-স্ত্রী এই নিয়তে মিলনে লিপ্ত হলে তাদের সওয়াব তো হবেই এবং সঙ্গে সঙ্গে তাদের নেক উদ্দেশ্যও পূরণ হবে।

স্ত্রী সহবাসের কিছু নিয়ম

০১. স্বামী-স্ত্রী উভয়েই পবিত্র হবে।
০২. “বিসমিল্লাহ” বলে সহবাস শুরু করা মুস্তাহাব। ভুলে গেলে, বীর্যপাতের আগে যদি মনে পড়ে, তবে পড়ে নিবে।
০৩. সহবাসের আগে সুগন্ধি ব্যবহার করা। যা আল্লাহর রাসূলের সুন্নত।
০৪. সব ধরনের দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস এড়িয়ে চলুন। উল্লেখ্য, ধূমপান বা অপরিষ্কার হওয়ার কারণে দুর্গন্ধ হয়। এবং এটি কামশক্তি কমায়। আগ্রহের পরিবর্তে দেয় বিতৃষ্ণা।
০৫. কিবলার দিকে মুখ করে সহবাস করবেন না।
০৬. সম্পূর্ণ উলঙ্গ না হওয়া।
০৭. স্ত্রীকে পূর্ণ তৃপ্তি দেওয়ার আগে বিচ্ছিন্ন না হওয়া।
০৮. বীর্যপাতের সময় নির্ধারিত দোয়া পড়া। কেন না যদি সহবাসে সন্তান প্রসব করে তাহলে শিশুটি শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে।
০৯. মাসিকের সময় যৌন মিলন না করা।
১০. চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে মিলিত না হওয়া।
১১. স্ত্রীর জরায়ুর দিকে তাকিয়ে সহবাস না করা।
১২. বিদেশ বা বেড়াতে যাওয়ার আগের রাতে স্ত্রীর সাথে সহবাস না করা।
১৩. সহবাসের সময় স্ত্রীর সাথে বেশি কথা না বলা।
১৪. জোহরের নামাজের পর স্ত্রীর সাথে সহবাস না করা।
১৫. ভরা পেটে স্ত্রী সহবাস করবেন না।
১৬. উল্টা দিক থেকে স্ত্রী সহবাস করা উচিত নয়।
১৭. স্বপ্নদোষ হওয়ার পর গোসল না করে স্ত্রী সহবাস না করা।

কুরআন-হাদিস অনুযায়ী বাস্তব জীবন যাপনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল বিবাহিত দম্পতিকে পুনর্মিলনের আগে নবীর শেখানো সহবাসের দোয়া পাঠ করে শয়তানের যাবতীয় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!