তালাক শব্দের আভিধানিক অর্থ হল বন্ধনমুক্ত করা। শরীয়তের দৃষ্টিতে স্ত্রীকে বিবাহ থেকে মুক্ত করা। তালাক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভেঙে দেয়, তারা একে অপরের কাছে আজীবন অপরিচিত হয়ে যায়। ইসলামে তালাকের বিধান থাকলেও তালাকের এই প্রক্রিয়াকে সব সময়ই নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। হাদীসে তালাকের বিষয়টিকে ‘নিকৃষ্টতম হালাল‘ বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে বৈধ বিষয়ের মধ্যে তালাকের চেয়ে জঘন্য আর কিছু নেই। (আবু দাউদ: ২১৭৭)। আজ আমরা আলোচনা করবো তালাক দেওয়ার নিয়ম সমূহের সকল বিষয় সমূহঃ
তালাক দেওয়ার নিয়ম
দুনিয়ার বাস্তবতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে কোনো দম্পতির পক্ষে একসঙ্গে থাকা সম্ভব না হলে ইসলাম কিছু পদক্ষেপ নিতে বলেছে। স্বামী তাদের অনুসরণ করবে। তারপরও যদি স্ত্রীর মধ্যে কোনো পরিবর্তন না হয়, তাহলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে তালাকের। নিন্মে তালাকের বিভিন্ন ধাপ সমূহ আলোচনা করা হলঃ
প্রথম ধাপ
স্ত্রীর অবাধ্যতায় উত্তেজিত না হয়ে তার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। যতদূর সম্ভব ছাড় এবং স্নেহের মাধ্যমে বিবাহিত জীবনকে স্থায়ী করার চেষ্টা করা উচিত।
দ্বিতীয় ধাপ
বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমাধান না হলে স্বামী রাগ প্রকাশের জন্য স্ত্রীর সাথে একত্রে রাত কাটানো থেকে বিরত থাকবেন। স্ত্রীর ঘুমানোর জায়গা আলাদা করে দিতে হবে। স্ত্রী যদি এই বিষয়ে সচেতন হন এবং নিজেকে সংশোধন করেন তবে বিবাহিত জীবন সুখী হবে।
আল্লাহ বলেন, ‘স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার ভয় তোমরা কর তাদেরকে উপদেশ দাও। তারপর তাদের বিছানা পরিত্যাগ করুন। তারপর তাদের একটু মারুন। (অর্থাৎ এমনভাবে হালকাভাবে আঘাত করো যাতে শরীরে কোনো ক্ষত বা আঘাত না থাকে এবং মুখমণ্ডল বা গোপনাঙ্গে কখনো আঘাত করো না। মুজামে তাবরানী : হা. ২১৩০) যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ কোরো না। (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৪)
তৃতীয় ধাপ
এই পদক্ষেপ নেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নিলে তৃতীয় পদক্ষেপ হিসেবে ইসলাম উভয় পক্ষকে এক বা একাধিক সালিসের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করার নির্দেশ দেয়।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের আশঙ্কা কর, তাহলে তা সমাধানের জন্য পুরুষের পরিবার থেকে একজন সালিস এবং নারীর পরিবার থেকে একজন সালিস পাঠাও। যদি তারা উভয়ে মীমাংসা করতে চায় তবে আল্লাহ তাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞাত ও সর্ববিষয়ে অবহিত। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৫)
তালাকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, কোনো সমাধান না পাওয়া যায় এবং সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহলে ইসলামী শরীয়ত সব পরিস্থিতির পর স্বামীকে তালাক দেওয়ার অধিকার দেয়। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক অত্যন্ত অপছন্দনীয় ও ঘৃণ্য। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে সকল হালাল কাজের মধ্যে তালাক সবচেয়ে জঘন্য কাজ। (আবু দাউদ: হাদিস: ২১৭৮)
এরপর তালাক ছাড়া অন্য কোনো উপায় না থাকলে ইসলামী শরীয়ত সমর্থিত পদ্ধতি অনুসরণ করে তালাক দেওয়া হবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করার অনেক সুবিধা রয়েছে।
তালাকের সর্বোত্তম পদ্ধতি
কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী তালাকের সর্বোত্তম ও সুন্দর পদ্ধতি হলো- স্ত্রী যখন ঋতুস্রাব (ঋতুস্রাব) থেকে পবিত্র হবে, তখন স্বামী তার সাথে সহবাস না করে স্পষ্ট ভাষায় তালাক দেবে। যেমন- ‘আমি তোমাকে তালাক দিয়েছি’। এরপর ইদ্দতের সময় স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে তা করতে পারবে। যদি সে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে না চায় তাহলে স্ত্রীর ইদ্দত শেষ হওয়ার সাথে সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে এবং স্ত্রী তার স্বামী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাবে। তারপর স্ত্রী চাইলে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে।
ইদ্দতের সময়কাল গর্ভাবস্থায় সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত এবং অ-গর্ভবতীর ক্ষেত্রে তিনটি মাসিক পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তালাকপ্রাপ্ত নারী তিন ঋতুস্রাব পর্যন্ত নিজেদের বিরত রাখবে’ (সুরা বাকারা: ২২৮)। আর ‘গর্ভবতীদের সময়কাল হলো- সন্তান প্রসব করা।’ (সুরা তালাক: ৪)
তালাকের জন্য আইনি নিয়ম
তালাক শব্দের অর্থ বিচ্ছেদ, তালাক অর্থ বিরতি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে দুজন মানুষ একসাথে হাঁটা শুরু করে। সেই পথ সবসময় মসৃণ হয় না। বাস্তবতা কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি তৈরি করে যেখানে বিচ্ছেদই একমাত্র সমাধান হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে এখনও তিনবার তালাক বললে তালাক বলে বিশ্বাস আছে। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী এটা সত্য হলেও আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মৌখিক তালাক বৈধ নয়।
বিয়ে করার ক্ষেত্রে যেমন আইনি বৈধতা গুরুত্বপূর্ণ, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও বৈধতা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী কেউ যদি তালাক দিতে চায় তাহলে মৌখিকভাবে ‘তালাক’ বলার পর এ বিষয়ে লিখিত নোটিশও দিতে হবে। যে ব্যক্তিকে তালাক দেওয়া হয়েছে, স্বামী বা স্ত্রী যাই হোক না কেন, নোটিশ দিয়ে তালাক সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। এছাড়াও যাকে তালাক দেওয়া হয়েছে তাকেও একই নোটিশ পাঠাতে হবে। এবং সে এলাকার চেয়ারম্যানকেও নোটিশ পাঠাতে হবে।
এখানে চেয়ারম্যান বলতে-
১. ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান,
২. পৌরসভার চেয়ারম্যান,
৩. সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা প্রশাসক,
৪. সেনানিবাস এলাকায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন ব্যক্তি,
চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো তালাকের নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে, চেয়ারম্যান পক্ষগুলিকে পুনর্মিলনের উদ্দেশ্যে সালিশি পরিষদ গঠন করবেন। যদি কোন উপায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে পুনর্মিলন সম্ভব না হয়, বিবাহবিচ্ছেদ নোটিশ জারির তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হবে৷ এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্ত্রীর ভরণপোষণ ও অন্যান্য খরচ স্বামী বহন করবেন। বিবাহবিচ্ছেদের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। তালাক অবশ্যই নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছে সময়মতো রেজিস্ট্রি করতে হবে।
তালাকের ক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, তালাকের সময় স্ত্রী গর্ভবতী হলে তার গর্ভধারণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ সন্তানের জন্ম না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।
স্ত্রী কর্তৃক তালাকের নিয়ম
দুর্ভাগ্যক্রমে, তালাক দেওয়ার নিয়ম এর মধ্যে এটা সত্য যে, মুসলিম আইনে, স্ত্রীর তালাক দেওয়ার ক্ষমতা নেই, যদি না স্ত্রীকে কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে সমস্ত কাবিনে স্ত্রীকে এই বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়। কাবিনে স্ত্রীর তালাকের ক্ষমতা উল্লেখ না থাকলেও, মুসলিম আইনের অধীনে বিবাহিত একজন মহিলা মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন- ১৯৩৯-এর অধীনে এক বা একাধিক ভিত্তিতে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করতে পারেন৷ উদাহরণস্বরূপ,
১. চার বছর ধরে স্বামীর কোনো খোজ খবর না থাকলে।
২. স্বামীর দ্বারা দুই বছর অবহেলিত হলে এবং স্বামী ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে।
৩. যদি তিনি মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর বিধান লঙ্ঘন করে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করেন।
৪. যদি স্বামীকে ৭ বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
৫. স্বামী যদি কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর তার দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়।
৬. বিবাহের সময় স্বামী পুরুষত্বহীন হলে এবং এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে।
৭. স্বামী যদি দুই বছর ধরে বঞ্চিত থাকে বা কুষ্ঠরোগ বা সংক্রামক যৌনরোগে ভুগে থাকে।
৮. যদি ১৮ বছর বয়সের আগে অভিভাবক দ্বারা বিবাহের ব্যবস্থা করা হয় এবং যদি ১৮ বছর বয়সের আগে বিবাহ প্রত্যাখ্যান করা হয়।
৯. স্বামী যদি তার স্ত্রীর সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করে।
এই ক্ষেত্রে নিষ্ঠুর আচরণ হল:
ক) স্ত্রীকে মারধর বা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ছাড়াও নিষ্ঠুর প্রকৃতির হয়ে তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা।
খ) খারাপ চরিত্রের মহিলাদের সাথে মেলামেশা করা বা অনৈতিক জীবনযাপন করা।
গ) স্ত্রীকে অনৈতিক জীবনযাপনে বাধ্য করার চেষ্টা করা।
ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করে বা স্ত্রীর সম্পত্তির অধিকারে হস্তক্ষেপ করে।
ঙ) যদি স্ত্রীকে তার ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়।
চ) যদি তার একাধিক স্ত্রী থাকে তবে সে পবিত্র কোরআনের বিধান অনুসারে তাদের সমানভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়।
স্বামীর নিষ্ঠুরতার জন্য কাবিননামায় তালাকের ক্ষমতা না থাকলেও একজন স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। অন্য কোন সামঞ্জস্যপূর্ণ কারণ বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে. তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে উল্লিখিত যেকোনো কারণে স্ত্রীকে তালাকের জন্য আদালতের মাধ্যমে যেতে হবে।
তালাক স্বামী বা স্ত্রী যেই দিক না কেন, স্ত্রী তার প্রাপ্য মোহরানা যে কোনও সময় দাবী করতে পারবেন।
মনে রাখতে হবে যে, তালাক দেওয়ার নিয়ম এর মধ্যে তালাক নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। নিকাহ রেজিস্ট্রার দিয়ে সথাসময়ে তালাক নিবন্ধন করাতে হবে। অনেকেই দেনমোহর এর টাকার জন্য মামলা করতে আমাদের কাছে আসেন। কিন্তু তালাক রেজিস্ট্রী সংক্রান্ত কাগজপত্র না থাকার কারনে আমরা কোন সহায়তা করতে পারিনা। একটু অবহেলা ও অজ্ঞতার কারনে অনেকেই নিজের অধিকার হারাচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায় বিচার হতে।
তালাক দেওয়ার নিয়ম নিয়ে যত বিভ্রান্তি
নির্ধারিত সময় ও সময়ের মধ্যে প্রদত্ত তালাক কার্যকর হলেই তা নিবন্ধিত হবে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, মুসলিম বিবাহের নিবন্ধন বরের জন্য বাধ্যতামূলক কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকপ্রাপ্তির জন্য ঐচ্ছিক। তবে তালাক রেজিস্ট্রি করার আগে কাজীর বাধ্যবাধকতা আছে যে তালাকটি নিয়মানুযায়ী কার্যকর হয়েছে কিনা। তালাক গ্রহীতার পক্ষে নোটিশ প্রস্তুত ও প্রেরণের কাজীগণ যে কাজ করেছেন তা শুধুমাত্র তালাকের ঘোষণা হিসাবে কাজ করবে। ঘোষণাটি শেষ পর্যন্ত কার্যকর নাও হতে পারে। তাই ঘোষণার পরপরই তালাক রেজিস্ট্রি করার সুযোগ নেই কাজীর।
প্রথমত, বিবাহবিচ্ছেদ সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণাটি সংশোধন করা যাক। ‘তালাক’ শব্দটি তিনবার মৌখিকভাবে উচ্চারণ করলে বা তালাক শব্দটি একসঙ্গে উচ্চারণ করলে তালাক কার্যকর হয় না। এমনকি মৌখিক উচ্চারণ ছাড়া লিখিতভাবে বিবাহবিচ্ছেদও অবিলম্বে কার্যকর হয় না।
মুসলিম আইন অনুযায়ী, পূর্ণবয়সী এবং সুস্থ মনের একজন স্বামী কোনো কারণ ছাড়াই যে কোনো সময় তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। তালাকের ক্ষেত্রে স্বামীর ক্ষমতা নিরঙ্কুশ, তবে এর জন্য তাকে আইনের বিধান অনুযায়ী তা করতে হবে। অমান্য করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার বিষয়ে মুসলিম পারিবারিক আইন, ১৯৬১ বলে যে, স্বামী যদি তালাক দিতে চান তবে তাকে অবশ্যই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান/পৌর মেয়র/সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। যেটি তালাক ঘোষণার সময় স্ত্রী বসবাস করছেন। সেই সাথে, নোটিশের একটি কপি তালাকদাতাকে সরবরাহ করতে হবে। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, কত সময়ের মধ্যে তালাকের নোটিশ পাঠাতে হবে। আইন বলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
আপনি যা পাঠাচ্ছেন তা হল বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ, যার জন্য আইন কোনও নির্দিষ্ট ফর্ম বা বিবৃতি নির্ধারণ করে না। নোটিশ লেখা বা পাঠানোর কাজটি ডিভোর্সি নিজে বা অন্য কেউ করতে পারে। নোটিশ পাঠানোর কাজ ডাক বা সরাসরি হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডি সহযোগে পাঠালে ভালো হয়। যদি সরাসরি পাঠানো হয়, তাহলে নোটিশের একটি কপি সংরক্ষন করা ভালো।
চেয়ারম্যান/মেয়র নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর হবে না। কারণ নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে, চেয়ারম্যান/মেয়র সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে একটি আপস বা সমঝোতা আনার উদ্দেশ্যে একটি সালিশি প্যানেল গঠন করবেন এবং উল্লিখিত সালিশি প্যানেল এই ধরনের সমঝোতার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, নোটিশের ৯০ দিনের মধ্যে সালিশের জন্য কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে স্ত্রী গর্ভবতী হলে গর্ভধারণের পর তালাক কার্যকর হবে। যাইহোক, সমঝোতার জন্য ৯০ দিনের সময়কাল চেয়ারম্যান কর্তৃক নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ থেকে শুরু হয়। লেখা বা নোটিশের তারিখ থেকে বিবাহবিচ্ছেদ শুরু হয় না।
সালিসী ট্রাইব্যুনাল ৯০ দিন সময় আছে. এর মধ্যে প্রতি ৩০ দিনে একটি করে মোট তিনটি নোটিশ দেওয়া হবে। এর মধ্যে স্বামী নোটিশ প্রত্যাহার না করলে তালাক কার্যকর হবে। কিন্তু নোটিশ প্রত্যাহার করলে তালাক কার্যকর হবে না।
যদি তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অন্য কাউকে বিয়ে করেন, তাহলে বিয়েটি অবৈধ বলে গণ্য হবে। কারণ বিবাহবিচ্ছেদ সম্পূর্ণরূপে কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষ আইনত স্বামী-স্ত্রী থাকে। এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্বামীও তার স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।
এখানে উল্লেখ্য যে, তালাক দেওয়ার নিয়ম এর মধ্যে নোটিশ পাঠানোর জন্য কাজীর কোন বিধিবদ্ধ দায়িত্ব নেই। যিনি তালাক দিয়েছেন তিনিই কাজটি করবেন। তবে কোনো তালাকদাতা যদি নিজের অক্ষমতা বা অজ্ঞতার কারণে কোনো কাজীকে কাজের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি মনে করেন, তাহলে তিনি কাজীর কাছে নোটিশ পাঠাতে পারেন। লাইসেন্সপ্রাপ্ত দেশের বেশিরভাগ কাজী নিজেরাই ‘মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ধারা ৭(১) এর অধীনে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ’ শিরোনামে নোটিশ প্রিন্ট করে এবং চাহিদা অনুযায়ী তালাকের নোটিশ পাঠায়। তালাক দেওয়ার নিয়ম তালাক দেওয়ার নিয়ম তালাক দেওয়ার নিয়ম।