ইস্তেখারার দোয়া

কোন কাজে ভালো মন্দ বুঝতে না পারলে, মনে ঠিক-বেঠিক, উচিত-অনুচিত বা লাভ-নোকসানের দ্বন্দ্ব হলে আল্লাহর নিকট মঙ্গল প্রার্থনা করতে দুই রাকআত নফল নামায পড়ে ইস্তেখারার দোয়া পড়তে হয়। নিম্নে ইস্তেখারার দোয়ার আরবী, বাংলা উচ্চারণ ‍ও বাংলা অনুবাদ দেওয়া হল:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ ، وَأَسْتَعِينُكَ بِقُدْرَتِكَ ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلا أَقْدِرُ ، وَتَعْلَمُ وَلا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلامُ الْغُيُوبِ ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ () خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ ، فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّي ، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ ، وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ، ثُمَّ رَضِّنِي بِهِ

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্‌তাখীরুকা বিইলমিকা অ আস্‌তাক্‌দিরুকা বি কুদরাতিকা অ আসআলুকা মিন ফায্বলিকাল আযীম, ফাইন্নাকা তাক্‌দিরু অলা আক্‌দিরু অতা’লামু অলা আ’লামু অ আন্তা আল্লা-মুল গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইন কুন্তা তালামু আন্না হা-যাল আমরা ( ) খাইরুল লী ফী দীনী অ মাআ’শী অ আ’কিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাক্‌দুরহু লী, অ য়্যাসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিক লী ফীহ। অ ইন কুন্তা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল লী ফী দীনী অ মাআ’শী অ আ’-কিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাস্বরিফহু আন্নী অস্বরিফনী আনহু, অক্বদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কা-না সুম্মা রায্বযিনী বিহ।

বাংলা অনুবাদ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট তোমার ইলমের সাথে মঙ্গল প্রার্থনা করছি। তোমার কুদরতের সাথে শক্তি প্রার্থনা করছি এবং তোমার বিরাট অনুগ্রহ থেকে ভিক্ষা যাচনা করছি। কেননা, তুমি শক্তি রাখ, আমি শক্তি রাখি না। তুমি জান, আমি জানি না এবং তুমি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। হে আল্লাহ! যদি তুমি এই ( ) কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে ভালো জান, তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত ও সহজ করে দাও। অতঃপর তাতে আমার জন্য বৰ্কত দান কর। আর যদি তুমি এই কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে মন্দ জান, তাহলে তা আমার নিকট থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকে ওর নিকট থেকে সরিয়ে দাও। আর যেখানেই হোক মঙ্গল আমার জন্য বাস্তবায়িত কর, অতঃপর তাতে আমার মনকে পরিতুষ্ট করে দাও।

ইস্তেখারার দোয়া

 

ইস্তেখারার দোয়া

কোনো কাজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার উদ্দেশ্যে অর্থাৎ কাজটি তার জন্য উপকারী কি না সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার উদ্দেশ্যে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়াকে ইস্তিখারা বলে।

লোকেরা মাঝে মাঝে বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে কোনটি গ্রহণ করবে তা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কারণ তার কল্যাণ কোথায় তা কেউ জানে না। অতএব সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য এবং কল্যাণ লাভের জন্য একজনকে সিদ্ধান্ত নিতে বা সাহায্য চাওয়ার জন্য আসমান ও জমিনের স্রষ্টার কাছে আবেদন করতে হবে, যাতে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর জন্য উপকারী বিষয়গুলির বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত ঠিক করেন।

বিয়ে, চাকুরী, ব্যবসা, ভ্রমণ ইত্যাদি বৈধ বিষয়ে ইস্তিখারা করা হয় বা করাই উত্তম।

 

ইস্তেখারার দোয়া এর নিয়মঃ

১) অযু করতে হবে।
২) ২ রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে।
৩) সালাতের সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তায়ালার মহিমা ও মর্যাদা স্মরণ করে অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে আল্লাহর প্রশংসা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর রহমত পেশ করার পর ইস্তিখারার দোয়া পাঠ করতে হবে।

 

এই দোয়ার মধ্যে যেখানেই “হাজাল আমরা” শব্দটি উপস্থাপিত হয়, আপনি যে কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিতে চান তা মনে মনে স্মরন করুন। দুআ শেষ করে কারো সাথে কথা না বলে কিবলার দিকে মুখ করে ঘুমান। ঘুম থেকে ওঠার পর মন যে কাজে সম্মত হয় বা আগ্রহী হয় সেটাই ফল। সেই কাজে আপনার জন্য মঙ্গল রয়েছে।

আর যদি আপনার ঘুমানোর সময় না থাকে অর্থাৎ খুব দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান তাহলে দুআ শেষ করার পর আপনার মন যেটাতে আগ্রহী হবে সেটাই আপনার জন্য মঙ্গল হবে। ইনশাআল্লাহ আপনি বিপদ থেকে বাঁচবেন এবং সেই কাজে সফল হবেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:

(১) ইস্তিখারার দুআ মুখস্থ না থাকলে দেখে দেখে পড়তে পারেন। তবে মুখস্থ পড়াই ভালো।

(২) ইস্তিখারা করার পর স্বপ্ন দেখা জরুরী নয়। স্বপ্নের মাধ্যমে সঠিক জিনিস জানতে পারেন এবং স্বপ্ন ছাড়াই মনের মধ্যে কাজের প্রতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে।

(৩) উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পর আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন এবং দৃঢ়তার সাথে কাজ চালিয়ে যান। পিছিয়ে পড়বেন না বা হীনমন্যতার শিকার হবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর যখন আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করুন।” [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]

(৪) সালাতুল ইস্তিখারা ও দুআ পাঠ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত না হলে একাধিকবার পাঠ করা জায়েয আছে।

(৫) এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির পক্ষ থেকে সালাতুল ইস্তিখারা আদায় করতে পারবে না। তবে সাধারণত তার কল্যাণের জন্য দুআ করতে পারবে।

(৬) অন্যায় বা হারাম কাজ এমনকি মাকরূহ কাজের জন্য ইস্তিখারা জায়েয নয়।

 

সালাতুল ইস্তেখারা নামাজ পড়ার নিয়ম

জোহর, মাগরিব ও এশার নামাযের পর যেভাবে দুই রাকাত নফল পাঠ করা হয়, সেই নিয়ম অনুযায়ী পড়াই যথেষ্ট হবে। তবে ইস্তিখারার একটা উদ্দেশ্য থাকতে হবে।

ইস্তিখারার উদ্দেশ্যে নফল নামায পড়ার কথা চিন্তা করলে নিয়ত হয়ে যাবে। অতঃপর প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর যে কোন একটি সূরা পড়তে হবে এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহার পর অন্য কোন সূরা পড়তে হবে।
এছাড়া আরেকটি নিয়ম অনুযায়ী নামাজ পড়তে পারেন, প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ৩ বার সূরা ইখলাস পড়তে পারেন। যে নিয়মটি আপনার কাছে সহজ বলে মনে হয় সেভাবেই আপনি কোনো সমস্যা ছাড়াই নফল নামাজ পড়তে পারবেন।

কেউ যদি আরবী বা বাংলায় নিয়ত পড়তে চায় তবে করতে পারে।

বাংলায় উচ্চারণ:- নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়্যা লিল্লাহি তালা রাকাতাই সালাতিল ইস্তেখারাতি নাফলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলায় অর্থ/নিয়ত:-
“আমি কাবা শরীফের দিকে মুখ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত ইস্তিখারার নফল নামাজ পড়ার ইচ্ছা করছি আল্লাহু আকবর।”

আশাকরি, ইস্তিখারা নামায ও ইস্তেখারার দোয়া সম্পর্কে পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন। এরপরেও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনি কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন, আমরা আপনাদের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
error: Content is protected !!